ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে সিঙ্গাপুর। কিন্তু আজ কমলাপুরে শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সেটি বোঝাই গেল না। উল্টো র্যাঙ্কিংয়ে ১৪২-এ থাকা বাংলাদেশ পুরো ম্যাচে আধিপত্য দেখাল র্যাঙ্কিংয়ে ১৩০ নম্বরে থাকা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। প্রায় একতরফা খেলেই সাবিনা খাতুনের দল সিঙ্গাপুরকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। বাংলাদেশের পক্ষে জোড়া গোল করেছেন তহুরা খাতুন। অন্য গোলটি আফিদা খন্দকারের।।
সিঙ্গাপুরের কোচ করিম বেনশেরিয়া কালই বলেছিলেন তাঁর দলটা নতুন করে গড়ে উঠছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচকে তারা সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েরা আজ তাদের কোনো সুযোগই দেয়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বল নিজেদের পায়ে রেখেই খেলেছে তারা। সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে তহুরা, সানজিদা, ঋতুপর্না, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমারা সারাক্ষণই পায়ে পায়ে বল নিয়ে খেলেছেন সিঙ্গাপুরের সীমানায়।
তবে একটা দুর্বলতা বাংলাদেশের মেয়েদের খেলায় ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে, সেটি প্রতিপক্ষের গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা। আজ ম্যাচে বারবারই এমনটা হয়েছে। একতরফা আধিপত্য থাকলেও গোলের পরিষ্কার সুযোগ সেভাবে তৈরি হয়নি। তবে যে সুযোগগুলো তারা পেয়েছে, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে জয়ের ব্যবধান আরও বড় হতেই পারত।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডারের পা থেকে বল কেড়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তহুরা খাতুন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের গোলকিপার তান লি বিনকে একা পেয়েও তিনি গোল করতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে তিনি বল হারান। তবে এগিয়ে যেতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় সাইফুল বারী টিটুর দল। সাবিনা শর্ট কর্নার থেকে প্রথমে বল ঠেলেছিলেন মারিয়া মান্দাকে। মারিয়া সেই বল আবার দেন সাবিনাকে। এরপর সাবিনা গোলমুখে যে ক্রসটি ফেলেন তা থেকে হেড করে গোল করেন আফিদা খন্দকার।
বাংলাদেশে দ্বিতীয় গোলটি পায় ১৬ মিনিটে। এ গোলটি পেতে পারতেন মারিয়াই। মারিয়া সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের পা থেকে বল কেড়ে একক প্রচেষ্টায় ঢুকে যান গোলমুখে। তাঁর সামনে যখন শুধু সিঙ্গাপুরের গোলকিপার তান লি বিন, তখন পাশে তিনি বল ছেড়ে দেন তহুরাকে। সহজেই বল জালে পাঠান তিনি।
প্রথমার্ধে বাকিটা সময় সিঙ্গাপুরের গোলমুখে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে বাংলাদেশ। ডান ও বাঁ, দুই দিক দিয়েই সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রেখেছিলেন ঋতুপর্না, মারিয়া মান্দা, সাবিনা, সানজিদা, মনিকারা। এই সময় গোল করার সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন অধিনায়ক সাবিনা। সিঙ্গাপুরের বক্সের ঠিক মাথায় বল পেয়ে সরাসরি পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাঁকানো শটটি ক্রসবারে বাতাস লাগিয়ে ওপর দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের চিত্রটাও একই। সিঙ্গাপুরের সীমানায় বাংলাদেশের মেয়েদের একের পর এক আক্রমণ। কিন্তু পরিষ্কার কোনো গোলের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন তহুরাই। এই গোলটি ছিল অসাধারণ। ৫৯ মিনিটে মাসুরা পারভীনের পেছনে থেকে বাড়ানো লম্বা থ্রু সিঙ্গাপুরের বক্সের মাথায় পেয়ে যান তহুরা। তিনি দারুণভাবেই সেটি সিঙ্গাপুরের গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন জালে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটে মারিয়া মান্দা যে সুযোগ নষ্ট করেছেন, সেটির জন্য তাঁর আক্ষেপ হওয়ারই কথা।
পরের মিনিটেই দারুণ একটি আক্রমণ থেকে প্রথমে ঋতুপর্নার শট ঠেকিয়ে দেন সিঙ্গাপুরের গোলকিপার। ফিরতি বলে শামসুন্নাহার সিনিয়র গোলে মেরেছিলেন, কিন্তু সেটি থেকেও গোল হয়নি। এই অর্ধে সানজিদার জায়গায় শাহেদা আক্তার রিপা, ঋতুপর্নার জায়গায় শামসুন্নাহার জুনিয়র মাঠে নামেন। ৮৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের বক্সের ডান প্রান্তে ফ্রি-কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাবিনার দারুণ শটটির সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট। এরপরই সাবিনাকে তুলে নিয়ে কোচ সাইফুল বারী মাঠে নামান আকলিমা খাতুনকে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর মেয়েদের ফুটবলটা মাঠে অনিয়মিতই হয়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ খেলেছে মাত্র পাঁচটি। গত জুলাই ঘরের মাঠে নেপালের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের পর সেপ্টেম্বরে খেলেছে এশিয়ান গেমস। জাপান, ভিয়েতনাম ও নেপালের বিপক্ষে হাংজু এশিয়াডে তিনটি ম্যাচের পর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচের প্রথমটি বাংলাদেশের মেয়েরা জিতল ভালোভাবেই। র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আজকের জয় মেয়েদের ফিফা র্যাঙ্কিং বাড়ানোয় ভূমিকা রাখবে।