বিশ্বকাপজয়ী যেকোনো খেলোয়াড়কে তাঁর ক্লাব মহা ধুমধামে বরণ করে নেবে কিংবা রাজসিক সংবর্ধনা দেবে, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। স্পেন নারী দলকে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতানো খেলোয়াড়েরাও নিজেদের ক্লাবে সংবর্ধনা পেয়েছেন।
কিন্তু হেনি হেরমোসোকে নিয়ে আলোচনাটা একটু বেশিই। কারণটাও নিশ্চয় জানা। বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে পুরস্কার মঞ্চে হেরমোসোর ঠোঁটে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সদ্য সাবেক সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের চুমুই তাঁকে এতটা আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেরমোসোকে চুমু দেওয়া নিয়ে স্প্যানিশ ফুটবলে কত কিছু হয়ে গেছে। ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা পর্যন্ত ঠুকে দিয়েছেন। সর্বমহলের রোষের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগই করতে হয়েছে রুবিয়ালেসকে।
পরশু সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুবিয়ালেস জানিয়েছেন, তিনি আরএফইএফ সভাপতি ও উয়েফার কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পেদ্রো রোচার কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এ দিনই নিজ ক্লাবে রাজসিক সংবর্ধনা পেয়েছেন হেরমোসো।
মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া হেরমোসো বর্তমানে মেক্সিকান ক্লাব পাচুয়াতে। ক্লাবটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলার। বিশ্বকাপ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে এত দিন আলোচিত সেই চুমু–কাণ্ড নিয়ে আইনি লড়াই করে গেছেন। ঝুট–ঝামেলা মিটিয়ে সম্প্রতি পাচুয়ায় ফিরেছেন। আর পরশু ক্লাবটির হয়ে খেলতে নামার আগে পেয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা।
পাচুয়ার মাঠ হিলাদগো স্টেডিয়ামে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সমর্থক হেরমোসোর বিশালাকৃতির টিফো (একধরনের ব্যানার) নিয়ে আসেন। মাঠে ঢোকার সময় তাঁকে দেওয়া হয় গার্ড অনার। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিতে সম্মান জানান। কেউ কেউ তাঁর নাম ধরে হর্ষধ্বনি দিতে থাকেন।
এরপর ক্লাব সভাপতি আরমান্দো মার্তিনেজ তাঁর হাতে স্মারক জার্সি তুলে দেন। সংবর্ধনা শেষে তিনি বলেন, ‘হেনি হেরমোসোর প্রতি সম্মান জানাতে পেরে আমরা রোমাঞ্চিত। সে আমাদের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাকে পেয়ে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।’
ক্লাবের পক্ষ থেকে এমন সংবর্ধনা পেয়ে হেরমোসোও বেশ উচ্ছ্বসিত। তবে এও জানিয়েছেন, রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়; তাই এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে কিছুই বলবেন না।
হেরমোসোর ক্লাবে প্রত্যাবর্তনটা আরও মধুর করে তুলেছেন তাঁর সতীর্থরা। ম্যাচে পুমাসকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়েছে পাচুয়া। এ দিন হেরমোসোকে বদলি হিসেবে খেলিয়েছেন পাচুয়া কোচ।
মাদ্রিদ থেকে পাচুয়ার দূরত্ব প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার। লম্বা ভ্রমণের ধকল কাটিয়ে উঠতেই হয়তো ক্লাবের প্রথম নারী বিশ্বকাপজয়ীকে আরেকটু বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।