বিশ্বকাপ ফাইনাল শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়, একজন রেফারির জন্যেও সামর্থ্য প্রমাণের সর্বোচ্চ পরীক্ষার মঞ্চ, একই সঙ্গে মর্যাদারও। কাতার বিশ্বকাপে শিরোপানির্ধারণী ম্যাচ পরিচালনার সেই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বটি পেয়েছিলেন সিমন মার্চিনিয়াক।
৪১ বছর বয়সী এই পোলিশ রেফারির ম্যাচ পরিচালনা ছিল বিতর্কমুক্ত। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স দুই দলের খেলোয়াড়দের কাউকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শক্ত হাতে ফাইনাল পরিচালনা করতে পারায় মার্চিনিয়াকের ওপর ফিফাও খুশি। বৈশ্বিক ফুটবল কর্তৃপক্ষের রেফারি প্রধান পিয়েরলুইজি কলিনা মার্চিনিয়াককে ‘পোপের পর পোল্যান্ডের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বলেছেন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে (ফাইনালে) দুই দলের খেলোয়াড়দের যে আচরণ, সেটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে বাজে ছিল।সিমন মার্চিনিয়াক, ফাইনালের রেফারি
তবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি রয়ে গেছে মার্চিনিয়াকের। টাইব্রেকারে মীমাংসা হওয়া ম্যাচটিতে দুই দল ফাউল করেছে মোট ৪৫টি। হলুদ কার্ড দেখেছেন সাতজন। মার্চিনিয়াকের ধারণা ছিল, নামি খেলোয়াড়ে পূর্ণ আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনালে খেলোয়াড়েরা আরেকটু নমনীয় থাকবেন, ‘আমার ম্যাচ পরিচালনা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ ছিল এটি। আরেক দিক থেকে দেখলে, আমার দেখা সেরা ম্যাচও। দুটি দলই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জনে লড়াই করে যাচ্ছে, এমন ম্যাচে রেফারিং করাটা সহজ নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই দলের খেলোয়াড়দের যে আচরণ, সেটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে বাজে ছিল।’
মার্চিনিয়াকের মনে হচ্ছে, ম্যাচে কিছু সিদ্ধান্ত অন্য রকমও হতে পারত, ‘হয়তো আরেকটা হলুদ কার্ড দেখানো যেত। আমি চেয়েছিলাম সব খেলোয়াড়ই ম্যাচের শেষ পর্যন্ত খেলুক। এটা বিশ্বকাপের ফাইনাল। দুই দলই ১১ জন নিয়ে ম্যাচ শেষ করুক।’
ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের রেফারিং নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল। স্প্যানিশ রেফারি আন্তেনিও মাতেও লাহোজ সেদিন দুই দলের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ মিলিয়ে ১৮টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন।
ফাইনালে ম্যাচ পরিচালনার আগে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচটির কথা মাথায় রেখেছিলেন বলে জানান মার্চিনিয়াক। পোল্যান্ডের সবচেয়ে পুরোনো এবং একমাত্র ক্রীড়া দৈনিক প্রেজেগ্লাড স্পোর্টোয়ি ওনেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা ম্যাচের পর থেকে রেফারিদের প্রতি খেলোয়াড়দের আচরণ নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তা ছিল। যে কারণে সবাই চেয়েছিল টুর্নামেন্টটা যেন শান্তভাবে শেষ হয়। কারণ, দিন শেষে ফাইনাল ম্যাচটাই সবার মনে থাকে। এখন এই ভেবে ভালো লাগছে যে, মানুষ দুর্দান্ত গোল নিয়ে কথা বলছে, খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য নিয়ে কথা বলছে। আমাদের রেফারিংয়ের কথা কারও মুখে তেমন শোনা যাচ্ছে না।’