ড্রিবলিং ফুটবলের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে একজন ফুটবলারের মান নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখে তাঁর ড্রিবল করার ক্ষমতা। ড্রিবলিংয়ে বিশেষ দক্ষতার কারণেই দুই দশক ধরে বিশেষভাবে মর্যাদা পেয়েছেন লিওনেল মেসি। যদিও আধুনিক ফুটবলে ব্যক্তিগত এই শৈলীকে অনেকে কম গুরুত্ব দিতে চান। ড্রিবলের জায়গায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় দলের খেলায় ভূমিকা রাখাকে।
এরপরও ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ড্রিবলিংয়ের অবস্থান এখনো অনেক উঁচুতে। এখনো একজন ফুটবলার যখন ড্রিবল করে সামনে এগিয়ে যান, সেটি মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে দর্শকদের। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বেও ড্রিবলিংয়ের দক্ষতা দেখিয়ে নজর কেড়েছেন অনেক তারকা ফুটবলার। মেসি–বেনজেমা–নেইমারদের অনুপস্থিতিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে স্বাভাবিকভাবেই ড্রিবলিং তালিকায় তরুণদের আধিপত্য ছিল বেশি।
তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের করা সফল ড্রিবলিংয়ের এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নামটা বেশ চমকপ্রদই বলতে হয়। কিলিয়ান এমবাপ্পে ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির মতো ইউরোপের আলোচিত ড্রিবলারদের ছাপিয়ে সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছেন নাপোলির তরুণ তুর্কি খিচা কাভারাস্কেইয়া। এবার গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি ৪৬ বার ড্রিবলিং করেছেন ‘নতুন ম্যারাডোনা’ খ্যাত জর্জিয়ান এই উইঙ্গার।
গত মৌসুমে নাপোলির লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা ছিল কাভারাস্কেইয়ার। বল পায়ে ম্যারাডোনার মতো কারিকুরি করতে পারেন বলেই এই নাম দেওয়া হয় তাঁকে। তবে গত মৌসুমের শেষ ভাগে ছন্দ হারান ‘কাভারাডোনা’ হিসেবে পরিচিত এই ফুটবলার। হারানো সেই ছন্দ এ মৌসুমের শুরুতেও খুঁজে ফিরেছেন কাভারাস্কেইয়া। এর মধ্যে অবশ্য নাপোলির কোচ পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাও প্রভাব ফেলেছে কাভারাস্কেইয়ার পারফরম্যান্সে।
ধীরে ধীরে অবশ্য ঠিকই ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন কাভারাস্কেইয়া। পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগে নাপোলির শেষ ষোলোয় ওঠার পথেও রেখেছেন ভূমিকা। যদিও গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচে কাভারাস্কেইয়া কোনো গোল পাননি, সহায়তাও করেছেন মাত্র এক গোলে। তবে নাপোলির সামনে এগিয়ে যেতে হলে পূর্ণ ছন্দে ফিরতে হবে কাভারাস্কেইয়াকে।
কাভারাস্কেইয়ার পর তালিকার দ্বিতীয় নামটি বেশ অনুমেয়। রুদ্বশ্বাস লড়াইয়ের পর পিএসজির শেষ ষোলো নিশ্চিত করার পথে এমবাপ্পে ড্রিবলিং করেছেন ৪৪ বার। পাশাপাশি ৩টি গোলও করেছে এই ফরাসি তারকা। ৩৬ বার ড্রিবলিং করে তালিকার তিনে আছেন এসি মিলানের রাফায়েল লিয়াও। এরপরও অবশ্য লাভ হয়নি, ঠেকাতে পারেননি গ্রুপ পর্ব থেকে দলের বিদায়। তিনে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করায় এসি মিলানকে এখন খেলতে হবে ইউরোপা লিগে।
এ তালিকার চার নম্বরে থাকা নামটি অবশ্য বেশ চমকপ্রদ। ৩২ বার ড্রিবল করে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এফসি কোপেনহেগেন তারকা ইলিয়াস আশুরি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে টপকে কোপেনহেগেনের শেষ ষোলোর টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও দারুণ ভূমিকা ছিল তিউনিসিয়ান এই ফুটবলারের। ১ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১টি সহায়তাও।
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে রিয়েল সোসিয়েদাদের আন্দের বারেনৎসিয়া (৩০), বায়ার্ন মিউনিখের লেরয় সানে (২৭), ম্যানচেস্টার সিটির জোয়াও কানসেলো (২৬) ও জেরেমি ডোকু (২৬), আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (২৬) এবং পিএসজির উসমান দেম্বেলে (২৫টি) ড্রিবল করেছেন।
তবে গ্রুপ পর্বে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় এ তালিকায় জায়গা করতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। গত মেতে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল অনূর্ধ্ব ২৩ বছর বয়সীদের মধ্যে এক বছরে ড্রিবলিংয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ভিনি। কে জানে, চোট না থাকলে শীর্ষ স্থান নিয়ে হয়তো কাভারাস্কেইয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলতে পারতেন এই উইঙ্গার।