দেড় বছর আগে কুমিল্লার ধীরেন্দনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে কী দারুণ এক ফাইনালই না হয়েছিল। ৪-৪ ড্র শেষে টাব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে সেবার শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। সে ম্যাচে একাই চার গোল করে সব আলো কেড়ে নেন মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়াবাতে। স্মরণীয় সেই জয়ের পর একই স্টেডিয়ামে আজ ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো মোহামেডানের। কুমিল্লাতেই আজ আবাহনীর কাছে হেরে এবারের ফেডারেশন কাপে বিদায়ের ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছে সাদাকালোরা।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে মোহামেডান, বাকি আছে একটি ম্যাচ। নাটকীয় কিছু না হলে এবার সম্ভবত সেমিতে যেতে পারছে না মোহামেডান। কোচ আলফাজ আহমেদ তো বলেই দিলেন, ‘সেমিতে ওঠার আর কোনো সম্ভবনা দেখছি না। লিখে দিতে পারেন আমাদের বিদায়।’
কাগজ-কলমে অবশ্য এখনই বিদায় বলা যাচ্ছে না। তবে এ গ্রুপ থেকে আবাহনী আর রহমতগঞ্জেরই সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দুই ম্যাচ খেলে দুই দলেরই পয়েন্ট ৬ করে। মোহামেডানের তিন ম্যাচে ৩। ‘বি’ গ্রুপে প্রথম ম্যাচে রহমতগঞ্জের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল গত বছর সর্বশেষ ফেডারেশন কাপের রানার্সআপ মোহামেডান। ২৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারায় ৬-০ গোলে। সেমিতে যেতে আজ আবাহনীর বিপক্ষে জয়টা খুব দরকার ছিল। কিন্তু মেহামেডান পারল না।
আবাহনী ১-০ গোল জিতে সেমির লড়াইয়ে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। একমাত্র গোলটা হয়েছে ৭৪ মিনিটে। পাল্টা আক্রমণ থেকে এনামুল লম্বা পাস দেন শাহরিয়ার ইমনকে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে যা করার, তা–ই করেছেন ইমন। বক্সে ফেলেছেন বল। বক্সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ইব্রাহিম বল সহজে জালে পাঠান। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি।
গোলের পর গ্যালারিতে ‘আবাহনী, আবাহনী’ স্লোগান ওঠে। নিস্তব্ধ হয়ে যায় মোহামেডানের সমর্থকেরা। যদিও খুব বেশ সমর্থক ছিলেন না আজ গ্যালারিতে। দুই দলের মিলিয়ে তিন থেকে চার হাজার হবে। কদনি আগে এই মাঠেই লিগ ম্যাচে মোহামেডানের কাছে হেরেছে আবাহনী। কোচ আলফাজের অধীনে সর্বশেষ পাঁচ সাক্ষাতে মোহামেডানেরর বিপক্ষে জয় ছিল না তাদের। অবশেষে মোহামেডানের বিপক্ষে জয়ের খরা কেটেছে।
এই জয়ে গোলদাতা ইব্রাহিমের সঙ্গে কৃতিত্ব দিতে হবে আবাহনীর গোলকিপার মিতুল মারমাকেও। বিরতির পর মোহামেডানের তরুণ ফরোয়ার্ড মঈনের হেড মিতুল দারুণ সেভ করেন। শুধু এই একটিই নয়, বারের নিচে বিশ্বস্তই ছিলেন আবাহনীর গোলকিপার। দল হিসেবে মোহামেডানের চেয়ে গোছানো ফুটবল খেলেছে আবাহনী। আক্রমণে কম উঠলেও মোহামেডানের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পেরেছে।
মোহামেডান খেলতে পারেনি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা। খেলায় ছিল না কোনো গতি। ভুল পাস হয়েছে প্রচুর। চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরা সোলেমান দিয়াবাতে সুবিধা করতে পারেননি। তিনি যে মাঠে ছিলেন, তা বোঝাই যায়নি। এমনটা হতেই পারে বলে সান্ত্বনা খুঁজলেন আলফাজ, ‘তিন দিন আগেই লিগ ম্যাচ খেলেছি। ক্লান্তি তো আছেই খেলোয়াড়দের। তা ছাড়া আমার টিম আর ভালো খেলেনি।’
প্রিমিয়ার লিগে টানা জয়। কিন্তু ফেডারেশন কাপের তিন ম্যাচে দুই হারে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। লিগ আর ফেডারেশন কাপ যেন দুই রকম অভিজ্ঞতা দিচ্ছে মোহামেডানকে।