বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার হাতে লিওনেল স্কালোনি
বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার হাতে লিওনেল স্কালোনি

স্কালোনির ‘দ্বৈত’ আনন্দ

কাতার বিশ্বকাপের সেই বিশেষ মুহূর্তটি—পেনাল্টি শটে গনসালো মন্তিয়েল লক্ষ্যভেদ করতেই আর্জেন্টাইন শিবির ফেটে পড়ে বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে। পুরো দল এবং স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে থাকা লাখ লাখ সমর্থকের উচ্ছ্বাসের ঢেউ কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম থেকে বুয়েনস এইরেস হয়ে আছড়ে পড়ছিল ঢাকা শহরেও। উদ্‌যাপনের উচ্ছ্বসিত মুহূর্তটা যখন চূড়ায়, তখন একটা লোক শান্ত ও বিমূঢ় অবস্থায় ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।

অথচ এর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে যে মহাকাব্যটির মঞ্চায়ন হলো, তাঁর নৈপথ্য নায়ক এই মানুষটিই। তিনি লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতক নায়ক। একটু পর অবশ্য তাঁর নীরবতা ভাঙে। এবার সেটি রূপ নিল কান্নায়। মুখে হাত দিয়ে স্কালোনি কাঁদলেন অঝরে।

আর্জেন্টিনাকে যে সাফল্য এনে দিয়ে স্কালোনি চোখ থেকে আনন্দের পানি ঝরিয়েছেন, সেই সাফল্যের স্কীকৃতি হিসেবে এবার তাঁর হাতে উঠেছে ফিফার বর্ষসেরা কোচের পুরস্কারও। একই দিন জাতীয় দলের সঙ্গেও ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন স্কালোনি।

২০১৮ সালে স্কালোনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন চারপাশে ছিল সন্দেহ আর অবিশ্বাস। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, স্কালোনি হয়তো বেশি দিন টিকবেন না। আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন হয়তো অন্য কাউকে বেছে নেবে পরে। এমনটা মনে হওয়ার কারণও অবশ্য ছিল। আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্কালোনি এক বছর দলটির সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন। যেখানে তিনি মূলত হোর্হে সাম্পাওলিকে অ্যাসিস্ট করতেন।

বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে লিওনেল স্কালোনি ও তাঁর স্ত্রী এলিসা মন্তেরো

এর আগে ২০১৫ সালে সেভিয়াতেও সাম্পাওলির সহকারী কোচ হিসেবে নিজের যাত্রা শুরু করেন স্কালোনি। অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা একজন কোচকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি মানতে পারেননি অনেক আর্জেন্টাইনও। তবে ফেডারেশন কর্তাদের মনে ছিল ভিন্ন কিছু। আনকোরা সেই স্কালোনির ওপরই ভরসা রাখলেন তাঁরা। নিরাশ করেননি স্কালোনিও।

আর তাঁর হাত ধরেই ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা জিতল বিশ্বকাপ। আর এবার সেই স্কালোনি জিতলেন ফিফার বর্ষসেরা কোচের ট্রফি। স্কালোনির পুরস্কার হাতে নেওয়ার আনন্দটা দ্বিগুণ হয়েছে একই দিন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করায়। পুরস্কার জিতে দেশের মানুষকে স্মরণ করে স্কালোনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হলো নিজের দেশকে আনন্দ দেওয়া। দেশের মানুষকে খুশি রাখা।’

এ সময় জাতীয় দলের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এই কোচ, ‘আমি আরও ৪ বছর জাতীয় দলের সঙ্গে যাত্রাটা অব্যাহত রাখব এবং সামনে থাকা প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। আমি আরও অনেক কিছু  জিততে চাই, আরও লড়াই করতে চাই। আমি জাতীয় দলকে কী দিতে পারি? কখনো হার না মানার দর্শনটা দিতে পারি। দিন শেষে ফুটবল ও জীবন এমনই।’