বোমাটা ফেটেছিল ২০২১ সালের এপ্রিলে। ফুটবল–বিশ্বকে এলোমেলো করে ইউরোপের কুলীন ১২টি ক্লাব মিলে বিতর্কিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই উয়েফা, ফিফা–সংশ্লিষ্ট সবাই এর নাম দিয়ে দেয় বিদ্রোহী লিগ। উয়েফা, ফিফা ও ক্লাব সমর্থকদের বিরোধিতার মুখে সেই পরিকল্পনা থেকে ৯টি ক্লাব সরে যায়। কিন্তু এই লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করা মূল হোতা রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস ঠিকই এগিয়ে চলছিল।
এত দিন পর এসে ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বললেন, ইউরোপিয়ান সুপার লিগের মূল হোতা শুধুই রিয়াল মাদ্রিদ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে তিনি ইউরোপিয়ান লিগ নিয়ে দুষেছেন শুধু রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে।
তেবাস সুপার লিগের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এমন একটি পরিকল্পনার জন্য এককভাবে রিয়াল মাদ্রিদ আর পেরেজকেই দুষছেন তিনি, ‘কিছু মানুষের ভাবনা এ রকম যে ইউরোপিয়ান ফুটবল আপনার সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হওয়া উচিত। চিন্তাটা এ রকম—আপনি যত বেশি ধনী, আপনার প্রভাবও ততটাই বেশি থাকবে।’ তেবাস এরপর টেনে আনেন পুরোনো একটি উদাহরণ, ‘এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ১৯৯৮ সালে জি১৪ (নেতৃস্থানীয় ক্লাবের গ্রুপ) বানাতে চেয়েছিল।’
তেবাস এখানেই থামেননি। রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতির ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর পরপর ফ্লোরেন্তিনো তার পরিকল্পনার পোশাক পরিবর্তন করে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করে ধনী ক্লাব, বিশেষ করে তার ক্লাবের ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’ তেবাস এরপর যোগ করেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদই এটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে পেরেজ ইউরোপিয়ান সুপার লিগের ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে।’
২০২১ সালে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল উয়েফা ও ফিফা। সেই সময় এ দুটি সংস্থা হুমকি দিয়েছিল, যেসব ক্লাব বা খেলোয়াড় সুপার লিগে খেলবে, সেসব ক্লাব বা খেলোয়াড়কে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সঙ্গে অর্থ জরিমানাও করা হবে।
২০২১ সালের ধাক্কা সামলে সুপার লিগ আয়োজনের পরিকল্পনাকারীরা পরের বছর আবার নতুন করে ভাবনা শুরু করে। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এ২২ নামে একটি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানই মূলত সুপার লিগের প্রমোটার হিসেবে কাজ করছে।
এ২২ প্রতিষ্ঠানটি সুপার লিগ নিয়ে উয়েফা ও ফিফার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যায় ২০২২ সালে। বিদ্রোহী টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনে বাধা দিতে উয়েফা ও ফিফা যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আইন ভঙ্গ করেছে বলে গত ডিসেম্বরে রায় দিয়েছেন ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালত।
এ রায় ঘোষণার পর সুপার লিগ প্রকল্পের প্রচারকারী কোম্পানি এ২২ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট নিজেদের বিজয়ী দাবি করে। রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি পেরেজ এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন আর বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা বিষয়টিকে দেখেছেন অভিজাত এক প্রতিযোগিতার পথ প্রশস্ত হওয়া হিসেবে।