ম্যানচেস্টার সিটিতে চলছে উৎসব আর ফুটবল পণ্ডিতেরা মেতে আছেন বিশ্লেষণে—কীভাবে প্রিমিয়ার লিগের মতো একটি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় জায়গায় টানা চতুর্থ শিরোপা জিতল সিটি। সংবাদ সংস্থা এএফপি সিটির এবারের প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পাঁচটি কারণ বের করেছে। দেখে আসা সেই ৫ কারণ—
ওর্তেগার গুরুত্বপূর্ণ সেভ
গত বুধবার টটেনহামের মাঠে দলটির সন হিউং–মিন যখন সবাইকে পেছনে ফেলে ম্যান সিটির গোলকিপার স্টেফান ওর্তেগাকে একা পেলেন, সবাই ধরে নিয়েছিলেন এটা নিঃসন্দেহে গোল হতে যাচ্ছে। সেই সময় এদেরসনের চোটের কারণে বদলি হিসেবে নামা সিটির দুই নম্বর গোলকিপার ওর্তেগা দৌড়ে ছুটে এলেন। পা দিয়ে সনের নেওয়া শট ঠেকিয়েও দিলেন। সিটিও তাই সেই সময় ১–০ গোলে এগিয়ে থাকে। কয়েক মিনিট পর পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্লিং হলান্ড সিটির পক্ষে ব্যবধান ২–০ করেন। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পেপ গার্দিওলার দল। আর্সেনালের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শেষ ম্যাচে যায় তারা।
দুর্দান্ত ফিল ফোডেন
কেভিন ডি ব্রুইনার আড়াল থেকে এ মৌসুমেই যেন বেরিয়ে আসেন ফিল ফোডেন। দলের জন্য হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিশীল এক শক্তি। মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই চোটে পড়েছিলেন ডি ব্রুইনা। তিনি মাঠে ফেরেন এ বছরের জানুয়ারিতে। এটা ফোডেনকে মাঝমাঠের মাঝে খেলতে সুযোগ করে দেয়। আর এই পজিশনে খেলতেই সবচেয়ে পছন্দ করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৭ গোল আর ১১ অ্যাসিস্টে সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি। প্রিমিয়ার লিগের মৌসুমসেরার স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই ইংলিশ।
ভাগ্যকবচ রদ্রি
রদ্রি ম্যানচেস্টার সিটির দলে থাকলে তারা কখনো হারে না। এটা সহজ অঙ্ক। রদ্রি খেলেছেন, সিটি এমন কোনো ম্যাচ হারেনি—এটা হয়ে আসছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। যদিও তিনি অনেক সময়ই কেভিন ডি ব্রুইনা, আর্লিং হলান্ড আর ফিল ফোডেনদের আড়ালেই থেকেছেন। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন রদ্রি। ২০২৩–২৪ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে রদ্রি বেশি পাস আর বলে বেশি স্পর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি লিগে সতীর্থদের দিয়ে ৮টি গোলও করিয়েছেন তিনি
আর্সেনাল–লিভারপুলের হোঁচট
১৪ এপ্রিল ২০২৪—তারিখটি হয়তো গার্দিওলার বর্ষপঞ্জিতে দাগাঙ্কিত থাকবে। কারণ, এই দিনই এ মৌসুমের শিরোপা দৌড় সিটির দিকে ঝুঁকে পড়ে। ওই সপ্তাহে শিরোপার লড়াইটা ছিল ত্রিমুখী—আর্সেনাল, সিটি ও লিভারপুলের। ১৩ এপ্রিল লুটনকে ৫–১ গোলে হারায় সিটি। কিন্তু ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হেরে যায় ১–০ গোলে। পরের দিন আর্সেনালও ঘরের মাঠে অ্যাস্টন ভিলার কাছে হারে ২–০ গোলে। লিভারপুল এরপরই শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে। আর্সেনাল শেষ পর্যন্ত সিটিকে চাপে রাখলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না।
গোলমেশিন হলান্ড
ম্যান সিটিতে প্রথম মৌসুমটা দুর্দান্ত কাটানোর পর এ মৌসুমে আর্লিং হলান্ডের ওপর ছিল সবার নজর। এবারও তিনি জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট। কখনো চোট আর কখনো গোল–খরায় ভোগা হলান্ড মাঝেমধ্যে একটু হতাশায় ভুগেছেন। কিন্তু এরপরও তিনি প্রিমিয়ার লিগে এবার করেছেন ২৭ গোল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোল পালমারের চেয়ে ৫ গোল বেশি। আর্সেনালের সঙ্গে সিটির গোলশূন্য ড্র ম্যাচের পর হলান্ডের সমালোচনা করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় রয় কিন হলান্ডকে লিগ টু–এর খেলোয়াড় বলেছিলেন। এই সমালোচনার জবাব হলান্ড দিয়েছেন দারুণভাবে—প্রিমিয়ার লিগের শেষ ৭ ম্যাচে ৯ গোল করেছেন তিনি।