আজ কিংস অ্যারেনায় সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, সঙ্গে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও ম্যানেজার আমের খান
আজ কিংস অ্যারেনায় সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, সঙ্গে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও ম্যানেজার আমের খান

বিশ্বকাপ বাছাই

লড়াইয়ের মন্ত্র জপে ‘কঠিন পরীক্ষা’ দিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন জামাল ভূঁইয়ারা

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কী!

এই প্রশ্নের উত্তর আসলে সরাসরি দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। হ্যাঁ, একটা প্রত্যাশা হতে পারে, যতটা সম্ভব গোল কম খাওয়া। যে দলটা নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলে, বিশ্বকাপে গিয়ে বড় বড় দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ে, সেই দলের বিপক্ষে ফিফার তালিকার ১৮৩ নম্বর স্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রত্যাশাটা তেমন হওয়াই উচিত—যত কম গোল খাওয়া যায়!

১৬ নভেম্বর এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘আই’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ কাতার বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। মেলবোর্নের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের আসলে হারানোর কিছুই নেই। তবে পাওয়ার আছে অনেক কিছুই। আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় এ ম্যাচের জন্য অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কথায় সেটিই বেরিয়ে এল—এ ম্যাচ বাংলাদেশের ফুটবলের অন্য উচ্চতায় ওঠার ম্যাচ। কঠিন পরীক্ষা অবশ্যই। কিন্তু এ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রমাণ করার অনেক কিছুই আছে। কাবরেরা নিজের রোমাঞ্চের কথাই বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে, ‘এ ম্যাচটা আমাদের আরও উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে যাওয়ার ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো খেলাটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য খুবই ইতিবাচক একটা ব্যাপার হবে।’

কঠিন পরীক্ষা দিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ

অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবেন। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পার্থ আর ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। জামাল দুটি ম্যাচেই খেলেছিলেন। পার্থে ৫-০ আর ঢাকায় ৪-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। জামাল অবশ্য ৮ বছর আগের সেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে এবারের বাংলাদেশ দলের পার্থক্য দেখেন, ‘এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা দল নিয়ে আমরা অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। আগেরবারের সঙ্গে এবারের দলের অনেক পার্থক্য। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা ভালো খেলব। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া অনেক শক্তিশালী দল। বছরের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা দিতেই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি।’

মালদ্বীপকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলাটা যেকোনো বিচারেই কঠিন, অন্তত বাংলাদেশের পর্যায়ের দলের জন্য। শক্তিমত্তায় যেখানে দুটি দলের মধ্যে কোনো তুলনাই হয় না, সেখানে মেলবোর্নের এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের করণীয়টা আসলে কী! কী ধরনের মানসিকতা নিয়েই বা তাঁরা মাঠে নামবেন। কোচ কাবরেরার কথা যেকোনো বিচারেই নিজেদের ভালো খেলার লক্ষ্যটা মাঠে বজায় রাখতেই হবে, ‘অস্ট্রেলিয়া অনেক কঠিন দল। এটা নিশ্চিত ম্যাচে তারা আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেই খেলবে। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, কোনোভাবেই যেন লড়াকু মনোভাবে কোনো ঘাটতি না দেখা দেয়। খেলোয়াড়দের নিজেদের করণীয়টা ঠিকমতো করতে হবে। নিজেদের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে।’

২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া–বাংলাদেশ ম্যাচ

কয়েক মাস ধরে খেলার মধ্যেই আছে বাংলাদেশ দল। সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ ড্র করার পর জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কেউ কেউ চীনের হাংজুতে এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। এরপর অক্টোবরে মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক পর্বের দুটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ইতিবাচক। দ্বিতীয় পর্বেও সেই ইতিবাচকতাই ধরে রাখতে উদ্‌গ্রীব জামাল, ‘অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সটাই জরুরি। সেটিই ধরে রাখতে হবে। সম্প্রতি আমরা ভালো খেলেছি। মালদ্বীপকে হারিয়েছি, আফগানিস্তানের সঙ্গেও ভালো করেছি। মেলবোর্নে গিয়ে আমরা যেন বেশি উচ্ছ্বসিত না হই। নিজেদের লড়াকু প্রমাণ করতে পারি। আমি চাই এটিই।’

লক্ষ্য যখন লড়াই করা, বাংলাদেশের প্রস্তুতিটাও হওয়া উচিত তেমনই। কিন্তু প্রস্তুতি দূরের কথা, অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগের দিনও ঠিক হয়নি চূড়ান্ত বাংলাদেশ দল! ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল ৩০জনকে। ২৩ জনের দল যাওয়ার কথা মেলবোর্নে। কিন্তু কোন ২৩জনকে নেবেন কোচ আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেননি। কোচ দ্বিধায় আছেন দুই–একজন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে। ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিচ্ছেন। দলের ম্যানেজার আমের খান পর্যন্ত জানেন না অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের কোন ২৩জন ফুটবলার যাবেন।

চূড়ান্ত দল বিমানে ওঠার আগে ঠিক করবেন কাবরেরা

আমের খান আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ দলটা ২৩ জনেরও হতে পারে আবার ২৪ জনেরও হতে পারে। মালদ্বীপের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিল জুনিয়র সোহেল রানা। তাকে কোচ রেখেও যেতে পারেন, আবার অনুশীলনের জন্য নিয়েও যেতে পারেন, যেহেতু ২১ নভেম্বর লেবাননের সঙ্গে ম্যাচ আছে ঢাকায়। আমরা ২৭ জন খেলোয়াড়ের বিমান টিকিট কিনে রেখেছি। দেখা যাক কোচ কী করেন। চূড়ান্ত দলটা কোচ ঠিক করবেন আগামীকালের শেষ অনুশীলন সেশনের পর। কাল কিংসের খেলোয়াড়েরাও অনুশীলন করবে। ’

বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়েরা এএফসি কাপের জন্য শুরু থেকে ক্যাম্পে ছিলেন না। আজ রাত আটটার মধ্যে তাঁদের সবার যোগ দেওয়ার কথা দলের সঙ্গে। আগামীকাল রাতে অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরার আগে বিকেলে কিংস অ্যারেনায় সবাইকে অনুশীলনে পাবেন কোচ। এই অনুশীলন পর্ব শেষেই কোচ চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে চান।