প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক দিন আগেই বেশ কয়েকটি ইভেন্ট শুরু হয়ে গেছে, ফুটবল যার মধ্যে অন্যতম। ফুটবলে পদকের লড়াইয়ের শুরুটা আর্জেন্টিনাকে দিয়ে হয়েছে বলে ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহও ছিল বেশি। তবে আর্জেন্টাইনদের কাল যে রকম তেতো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটিকে বিস্ময়করই বলতে হবে।
সেঁত এতিয়েনে কাল মরক্কোর বিপক্ষে মহানাটকীয় ম্যাচে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৬৮ মিনিটে গুলিয়ানো সিমিওনের পর যোগ করা সময়ের ১৬ মিনিটে গোল করেছিলেন ক্রিস্তিয়ান মেদিনা। এই গোলের পর সবাই ধরে নিয়েছিল ম্যাচটা ২-২ গোলে ড্র হয়েছে।
কিন্তু আর্জেন্টিনার গোলের পরই দর্শকেরা গ্যালারি থেকে মাঠে বোতল ও প্লাস্টিকের কাপ ছুড়ে মারতে শুরু করেন। ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজকে লক্ষ্য করে একটি অগ্নিশিখাও ছোড়া হয়, যা তাঁর কাছে গিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে মরক্কোর সমর্থকেরা মাঠেও ঢুকে পড়েন। ওই মুহূর্তে নিরাপত্তাকর্মীরা কিছুতেই বিশৃঙ্খলা থামাতে না পারায় ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করেন সুইডিশ রেফারি গ্লেন নাইবার্গ।
অলিম্পিক ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী, দুই দলের খেলোয়াড়েরা আর খেলতে না চাইলে ম্যাচ সেখানেই শেষ হওয়ায় কথা। যেহেতু মেদিনার শেষ মুহূর্তের গোলে আর্জেন্টিনা ২-২ সমতা ফিরিয়েছিল এবং ম্যাচের মাত্র ৩ মিনিট বাকি ছিল, তাই দুই দলের কেউই আর মাঠে নামতে চাননি।
কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল দর্শকদের স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে খেলোয়াড়দের আবার মাঠে ডেকে পাঠান রেফারি। খেলোয়াড়েরা মাঠে নামতেই আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি ভিএআর অফসাইডের কারণে বাতিল করে। এরপর খেলা চলে আরও ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে আর্জেন্টিনার আর ম্যাচে ফেরা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের ২-১ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।
স্টেডিয়ামে ফরাসি দর্শকদের বিশৃঙ্খলার পর আর্জেন্টিনার গোল বাতিলের এ ঘটনাকে ‘জীবনের সবচেয়ে বড় সার্কাস’ বলেছেন দলটির কোচ হাভিয়ের মাচেরানো। অলিম্পিক ফুটবল দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরাও। অধিনায়ক লিওনেল মেসি থেকে শুরু করে মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল, ডিফেন্ডার নিকোলাস তালিয়াফিকোরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মেসি তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, ‘ইনসোলিতো’—বাংলায় যার অর্থ ‘অবিশ্বাস্য’। সঙ্গে একটি বিস্ময়ের ইমোজিও ব্যবহার করেছেন মেসি। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ডান অ্যাঙ্কেলে চোট পাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরে থাকা মেসি পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছেন। তবে আর্জেন্টিনার অলিম্পিক ফুটবল দলের ম্যাচেও যে নজর রেখেছেন, সেটা তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়।
দি পল দলকে সমর্থন জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি তোমাদের পাশে আছি। তোমরা সবাইকে হারাতে পারো।’
মেসি-দি পলদের আরেক সতীর্থ তালিয়াফিকো ছুটি কাটাতে গেছেন ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপ দেশ সেশেলসে। সেখান থেকেই তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘সার্কাস ছাড়ুন। আমরা কি ম্যাচ স্থগিত করার কারণ সম্পর্কে কথা বলছি নাকি বোকাদের মতো কাজ করছি? যদি এর উল্টোটা হতো (প্রতিপক্ষ গোল করত কিংবা প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে বোতল, অগ্নিশিখা ছুড়ে মারা হতো), তাহলে তারা কী বলত আমি কল্পনাও করতে পারছি না।’
মেদিনার (বাতিল হওয়া) সেই গোলের পর দর্শকেরা কেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই দেশটির খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা বর্ণবিদ্বেষী ভাষা ব্যবহার করে কিলিয়ান এমবাপ্পে-উসমান দেম্বেলেদের অপমান করে আসছেন।
সম্প্রতি কোপা আমেরিকা জয়ের পর টিম বাসে উদ্যাপনের সময় ফরাসি ফুটবলারদের নিয়ে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের বিতর্কিত গান পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে।
এবার সেই ফ্রান্সের মাটিতে যেহেতু আর্জেন্টিনা ফুটবল দল অলিম্পিক খেলতে গেছে, তাই পুষে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাতে খুব বেশি সময় নেননি ফরাসিরা।