মাদ্রিদ ডার্বিতে আতলেতিকোর কাছে হেরে গেছে রিয়াল
মাদ্রিদ ডার্বিতে আতলেতিকোর কাছে হেরে গেছে রিয়াল

আতলেতিকোর কাছে হারে রিয়ালের সামনে যে ৪ প্রশ্ন

‘তিনটা গোল যেন একটি আরেকটার ফটোকপি!’

কথাটা দিয়েগো সিমিওনের নয়, কার্লো আনচেলত্তির। কাল মাদ্রিদ ডার্বিতে আতলেতিকোর কাছে ৩–১ গোলে হেরেছে রিয়াল। যা চলতি মৌসুমে আনচেলত্তির দলের প্রথম হার।

ম্যাচে আতলেতিকোর হয়ে দুটি গোল করেন আলভারো মোরাতা, একটি আঁতোয়ান গ্রিজমান। রিয়ালের পক্ষে একটি গোল শোধ দেন টনি ক্রুস। আতলেতিকোর তিনটি গোলই হয়েছে হেড থেকে। অর্থ্যাৎ, রিয়াল ম্যাচ হেরেছে বাতাসে রক্ষণভাগের দুর্বলতায়।

অনেকের মতে আক্রমণভাগে একজন স্ট্রাইকার না থাকা আর ভিনিসিয়ুসের অভাবই রিয়ালের হারের মূল কারণ। তবে ম্যাচ শেষে কোচ আনচেলত্তি সমস্যার দিক হিসেবে তুলে ধরেছেন রক্ষণভাগকেই, ‘আমার মনে হয় না আক্রমণভাগে আমাদের সমস্যা ছিল। আক্রমণের চেয়ে রক্ষণে সমস্যা বেশি ছিল। ম্যাচে পার্থক্য তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণ শুরুতেই দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আতলেতিকো।’

নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হারের পর আনচেলত্তির দলের কয়েকটি দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জ ফুটে উঠেছে। যা সামনে তাদের মোকাবেলা করতে হবে।

মাদ্রিদ ডার্বিতে আতলেতিকোর কাছে ভুগেছে রিয়াল

১. মাঝমাঠে এত ওলট–পালট কেন?

ভিনিসিয়ুসের মতো জোসেলুও ছিলেন না আক্রমণভাগে। শুরুর একাদশে ফরোয়ার্ড বলতে ছিলেন রদ্রিগো। মাঝমাঠের জুড বেলিংহাম খেলেছেন একটু সামনে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের জায়গা দেওয়া হয় লুকা মদরিচকে। মাঝমাঠে উল্লেখযোগ্য যে পরিবর্তন দেখা গেছে, সেটি হচ্ছে মৌসুমে প্রথমবারের মতো মদরিচ–ক্রুজকে একসঙ্গে খেলানো। ক্রুজ খেলেছেন বাঁয়ে, ডানে ফেদে ভালভের্দে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জায়গায় এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। অঁরেলিয়ে চুয়ামেনিকে রাখা হয় বেঞ্চে।

আনচেলত্তির এই ফরমেশন কাজে লাগেনি। লেফট ব্যাক ফ্রাঙ্ক গার্সিয়াকে পর্যাপ্ত সহায়তা করতে পারেননি ক্রুস। যে কারণে প্রথমার্ধের শেষ দিকে ক্রুস–কামাভিঙ্গাকে নিজেদের জায়গাও অদল–বদল করতে হয়েছে। যদিও তার আগেই দুই গোল হজম করে ব্যাকফুটে চলে গেছে রিয়াল।

ক্রুস–মদরিচকে একসঙ্গে খেলানো, চুয়েমেনিকে শুরুর একাদশে না রাখার মতো সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ম্যাচ শেষে আনচেলত্তির ব্যাখ্যা ছিল এরকম, ‘চুয়ামেনিকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। প্রচুর খেলার মধ্যে ছিল। আমাদের মনে হয়েছিল মাঝমাঠে অন্য মিডফিল্ডার দিয়ে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারব।’ কিন্তু সেটা যে কাজে লাগেনি, আনচেলত্তি নিজেই বুঝতে পারছেন।

২. শুরুতেই গোল হজমের কারণ কী?

এক ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ক্রস থেকে তিন গোল হজম করা রিয়ালের মতো দলের জন্য দুশ্চিন্তার। তবে এর চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা শুরুতেই গোল হজম করাটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে যাওয়া। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই মোরাতার হেড থেকে গোল হজম করে রিয়াল। ১৮ মিনিটে হয়ে যায় দ্বিগুণ। চলতি মৌসুমে এর আগে আলমেরিয়া, হেতাফে ও রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষেও শুরুতে গোল হজম করেছিল রিয়াল।

ওই তিন ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও এবার পারা যায়নি। ঘুরে দাঁড়াতে পারা না পারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার প্রশ্নের উত্তর খোঁজা— কী কারণে এভাবে একের পর এক ম্যাচে শুরুতে গোল হজম করছে রিয়াল? এটা কি মনোযোগের অভাব না সামর্থ্যের? কত ম্যাচেই বা পিছিয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানো যাবে?

গ্রিজমানের দল তিনটি গোল করেছে হেড থেকে

৩. নাম্বার নাইনের সমাধান কী?

করিম বেনজেমা চলে যাওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদ ‘নাম্বার নাইন’ হিসেবে এনেছে জোসেলুকে। তবে লা লিগা থেকে অবনমিত হওয়া দল এসপানিওল থেকে আনা এই স্ট্রাইকার বেনজেমার সরাসরি বিকল্প নন। আতলেতিকোর বিপক্ষে কোচ তাঁকে খেলানওনি। আতলেতিকোর বিপক্ষে রিয়ালের আক্রমণভাগই ছিল ‘শূন্য ময়দানে’র মতো। এমনকি ৪৬ মিনিটের মধ্যে তিন গোল হজমের পর আনচেলত্তি যে চারটি (চুয়ামেনি, নাচো, ফারলাঁ মেন্দি ও ব্রাহিম দিয়াজ) বদলি করেন, তার কোনোজনই আক্রমণভাগের ছিলেন না। আক্রমণভাগ নিয়ে আনচেলত্তির আসলে ভাবনা কী— আতলেতিকো ম্যাচের পর প্রশ্নটা আরও বড় করে উঠছে।

৪. কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে রিয়াল?

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের দলগুলোর মধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল একমাত্র দল, যারা চলতি মৌসুমে শতভাগ জয়ের ধারা ধরে রেখেছিল। আতলেতিকোর কাছে হারে রিয়ালের সেই ধারার যবনিকাপাত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হারের পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে রিয়াল মাদ্রিদ? বুধবার লা লিগায় লা পালমার বিপক্ষে খেলা। আনচেলত্তি কি আতলেতিকো ম্যাচের ফর্মেশন নিয়ে যে সব প্রশ্ন, তার সমাধান করবেন? নাকি ভিন্ন কোনো রূপে দেখা যাবে রিয়াল মাদ্রিদকে?