এডসন আরেন্তস দো নাসিমেন্তো– যখন সান্তোসে খেলতেন
এডসন আরেন্তস দো নাসিমেন্তো– যখন সান্তোসে খেলতেন

‘এডসন’ চলে গেছেন, থেকে যাচ্ছেন ‘পেলে’

তিনি ফুটবল ইতিহাসের সেরা তারকা। কে না জানেন তাঁর নাম। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কে নয়! যে ফুটবলের কিছুই বোঝেন না, সে-ও তাঁর নামটা জানেন। ছবি দেখলে বলে দিতে পারেন, ওই মানুষটা কী করতেন এক সময়। ফুটবলের সঙ্গে তাঁর নামটিই যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। তিনি ছাড়া ফুটবলের ইতিহাস অসম্পূর্ণ।

এডসন আরেন্তস দো নাসিমেন্তো তাঁর নাম। কী চেনা গেল! নামটা চেনা চেনা লাগছে তো! কিন্তু এই নামে খুব বেশি মানুষ তাঁকে চেনেন না। কিন্তু ‘পেলে’ নামটা ঠিকই তাঁরা চেনেন, জানেন। এই পেলে নামেই জগদ্বোড়া খ্যাতি। এই পেলে নামেই তিনি কিংবদন্তি। কিন্তু কতজন জানেন এই ‘পেলে’ নামটি তাঁর মা–বাবার দেওয়া নাম নয়!

আরও অবাক করা ব্যাপার, যে নামটি মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে, সেটি দিয়েই তিনি ইতিহাসখ্যাত। নামটা পুরোপুরিই তাঁর ওপর জুড়ে বসা। ছেলেবেলায় তিনি নাকি একেবারেই পছন্দ করতেন না, কেউ তাঁকে পেলে বলে ডাকুক। বরং তিনি চাইতেন, তাঁকে ডাকা হোক তাঁর বাবা-মায়ের দেওয়া ‘এডসন’ নামে।

পেলের জন্ম ১৯৪০ সালের অক্টোবরে। তাঁর মা–বাবা ছিলেন বিদ্যুতের আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনের খুব ভক্ত। সেটি কৃতজ্ঞতাবশতই। ১৯৩১ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন যখন মারা যান, তাঁর কিছুদিন আগেই সাও পাওলোতে পেলেরা যে এলাকায় থাকতেন, সেটি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। তাই ১৯৪০ সালে ছেলে হলে তাঁরা তাঁর নাম রাখেন ‘এডসন’, ঠিক ‘এডিসন’ নয়। তবে নামটি প্রিয় বিজ্ঞানীর নাম অনুপ্রাণিতই।

‘পেলে’ নামটা এসেছে অপভ্রংশ থেকে। খুব ছোটবেলায় পেলে গোলকিপার হিসেবে খেলতেন। তাঁর বাবার প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন সাও পাওলোর মিনাস গেরাইস এলাকার সাধারণ ক্লাব ভাস্কো দি সাও লরেন্সোর গোলকিপার হোসে লিনো দা কনসেই ও ফাউস্তিনো বা ‘বিলে’। চার বছরের ছোট পেলে যখন গোলকিপিং করতেন, বল ধরলেই বাবা চিৎকার করে উঠতেন ‘বিল বলটা ধর’। পেলের মাথায় তখন থেকেই গেঁথে যায় ‘বিলে’ নামটি। এই ‘বিলে’ নামটি এত ব্যবহৃত হয়েছে তাঁর বেলায় যে মিনাস গেরাইসের বাচ্চারা যখন মাঠে ফুটবল খেলত, তখন সবাই এডসনকে ‘বিলে’ নামে ডাকা শুরু করে।

পেলে কিছুতেই পছন্দ করতেন না কেউ তাঁকে ‘বিলে’ নামে ডাকুক। বাচ্চাদের উচ্চারণে একটা সময় ‘বিলে’ থেকে ‘ব’ বাদ পড়ল, হয়ে গেল ‘পিলে’। এভাবে অপভ্রংশ হয়েই এক সময় জন্ম নিল ‘পেলে’ নামটি। মা–বাবা তাঁকে ‘ডিকো’ নামেও ডাকতেন। কিন্তু এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো তা-ও বিভিন্ন কারণে আছে, কিন্তু ‘ডিকো’ ‘পেলের’ দাপটে হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে।

২০১৯ সালে একটি মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেলে বলেছিলেন, তিনি ছোটবেলায় ‘পেলে’ নামটি একেবারেই পছন্দ করতেন না। তিনি চাইতেন সবাই তাঁকে ‘এডসন’ বলে ডাকুক। কিন্তু তাঁর কী কপাল, যে নাম তিনি পছন্দ করতেন না, সেই নামেই তিনি সর্বকালের সেরা, সে নামেই তিনি ফুটবলের রাজা।

কাল রাতে ‘এডসনের’ আত্মা অন্তলোকে যাত্রা করেছে, কিন্তু ‘পেলে’র কীর্তি রয়ে গেছে।