এবার কি তবে ইয়ুর্গেন ক্লপ? একই দিনে চেলসি কোচ গ্রাহাম পটার এবং লেস্টার সিটি কোচ ব্রেন্ডন রজার্স চাকরি হারানোর পর সামনে এসেছে এই প্রশ্ন। লিভারপুলের হতশ্রী পারফরম্যান্স কি এবার ক্লপের চাকরিটাও কেড়ে নেবে? গুঞ্জন আছে, আজ চেলসির বিপক্ষে হারলে ছাঁটাই হতে পারেন ক্লপও। আসলেই কি তা–ই? যাঁর হাত ধরে ধ্বংসস্তুপ থেকে লিভারপুলের পুনরুত্থান ঘটল, তাঁকেই এমন পরিণতি বরণ করতে হবে!
চলতি মৌসুমে টানা ব্যর্থতার দায়ে পটার ও রজার্স বিদায় নেওয়ার পর থেকেই মূলত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। এর পর থেকে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, এরপর কে? সব মিলিয়ে এ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চাকরি হারিয়েছেন ১২ জন কোচ।
চেলসি ও সাউদাম্পটন ছাঁটাই করেছে দুজন করে। আর এখন ছাঁটাই হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ক্লপ। প্রিমিয়ার লিগের অস্থির এ সময়ে ক্লপ যদি ছাঁটাই হন, তাহলে তা মোটেই অবাক করার মতো কিছু হবে না।
প্রিমিয়ার লিগে বর্তমানে ৮ নম্বরে আছে লিভারপুল। ২৮ ম্যাচে ‘অল রেড’দের পয়েন্ট ৪২। সর্বশেষ ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে লিভারপুল হেরেছে ৪–১ গোলে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ক্লপের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেরা চারে জায়গা করে নেওয়াও এখন লিভারপুলের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।
অ্যানফিল্ডের দলটির সেরা চার থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা আরও বাড়বে, যদি আজ রাতে তারা চেলসির কাছে হেরে যায়। এমনকি ১০–এর নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা নিশ্চিতভাবে ক্লপের চাকরি বাঁচানোকে হুমকির মুখে ফেলবে।
পরিস্থিতি যে এ মুহূর্তে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই, তা জানা আছে ক্লপেরও। চেলসি ম্যাচের আগে নিজের চাকরি নিয়ে কথাও বলেছেন এ জার্মান কোচ। বলেছেন, এ মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে তিনি লিভারপুলের ডাগআউটে না–ও থাকতে পারতেন।
ক্লপ বলেছেন, ‘যদি এটা আমার প্রথম মৌসুম হতো, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতে পারত। আমি এটা জানি যে আমার এখানে বসে থাকার কারণ হচ্ছে, অতীতে যা করেছি সেটা। এই মৌসুমে যা করেছি, সে জন্য নয়। আর আমাদের মালিক যথেষ্ট বিচক্ষণ। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন। আমি ছাঁটাইয়ের ভয় করছি না, নাহ।’
পরিসংখ্যান এবং ইতিহাসও অবশ্য ক্লপের কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে। ক্লপের হাত ধরে নিজেদের ফুটবলের নতুন এক জাগরণ দেখেছে লিভারপুল। ৩০ বছর পর লিভারপুলকে লিগ শিরোপা পুরুদ্ধার করে দিয়েছেন এই ক্লপ। এনে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শ্রেষ্ঠত্ব।
এমনকি ফুটবল দর্শনেও রোমাঞ্চ ছড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ক্লপ। আর এ সবই ক্লপকে এ মৌসুমে ব্যর্থতার পরও চাকরিতে টিকিয়ে রেখেছে। লিভারপুল কর্তৃপক্ষও জানে ক্লপের সামর্থ্য সম্পর্কে। এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা ক্লপের ঠিকই আছে।
সমালোচনা আছে অবশ্য লিভারপুলের মালিককে নিয়েও। সমর্থকদের অনেক দাবির পরও মিডফিল্ডে কোনো খেলোয়াড় আনেনি ক্লাবটি, যা মৌসুমজুড়ে লিভারপুলকে ভুগিয়েছে। সঙ্গে মৌসুমজুড়ে চোটের সমস্যাও বেশ ভুগিয়েছে লিভারপুলকে। সব মিলিয়ে লিভারপুলের ব্যর্থতার দায় এককভাবে ক্লপকে দেওয়ার সুযোগ নেই। আর তাঁর অতীত কীর্তি তো রয়েছেই। তাই চেলসি ম্যাচে ব্যর্থ হলেও ক্লপের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা কমই বলা যায়। তবে কোচের চাকরিতে শেষ কথা বলে যে কিছু নেই। সেটি নিশ্চয়ই ক্লপেরও অজানা নয়।