উৎসবের প্রস্তুতি ছিল আগে থেকেই। গ্যালারিতে অর্ধেকের বেশি ভরে গিয়েছিল লাল টি–শার্ট পরা দর্শকে। বসুন্ধরা কিংসের পতাকা আর ঢোলবাদ্য নিয়ে সময়টা উপভোগ করেছিলেন তাঁরা পুরো ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী হলো আজ কিংস অ্যারেনা।
প্রথমার্ধে নাটকীয়তার পর দ্বিতীয়ার্ধে একপেশে হয়ে পড়া ম্যাচ দেখেছে ১০টি গোল! শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে ৬-৪ গোলে হারিয়ে টানা চতুর্থবার প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ জিতে নিয়েছে কিংস। ৪ গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজ। তাঁর নৈপুণ্যের দিনে কিংস গড়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কোনো ক্লাব দলই টানা চারটি লিগ শিরোপা জেতেনি। ১৯৮৩-৮৫ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার জেতে আবাহনী। ১৯৮৬ থেকে ’৮৮-৮৯ পর্যন্ত টানা তিন লিগ ঘরে তোলে মোহামেডান। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ চালুর পর প্রথম তিনবার চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। তবে কোনো দলই পারেনি টানা চারটি লিগ জিততে। আজ সেই কীর্তি প্রথমবার গড়ল কিংস। সেটাও তিন ম্যাচ হাতে রেখেই, লিগটাকে একপেশে বানিয়ে।
স্বাধীনতার আগে ১৯৫৩ ও ’৫৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। ১৯৫৫ সালের লিগেও তারা এগিয়ে ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে সেই লিগ শেষ হয়নি। পরের বছর ওয়ান্ডারার্সই চ্যাম্পিয়ন হয়। বন্যার কারণে সেই লিগ পরিত্যক্ত না হলে হয়তো টানা চার লিগ জেতা হতো ওয়ান্ডারার্সের।
স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো দল হিসেবে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হতে আজ শেখ রাসেলের বিপক্ষে জয় দরকার ছিল কিংসের। তবে শুরুতে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে শেখ রাসেল পরে ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। সুজন ও দীপক গোল করেন। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পর খেলাটা আর ধরে রাখতে পারেনি রাসেল। ছন্নছাড়া রক্ষণ গোল খেয়েছে উদার হয়ে।
ম্যাচের প্রথম গোল করেছেন দরিয়েলতন। এরপর কিংস ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ২-২ করেন রবসন রবিনিও। ৩-২ করেন কিংসের তরুণ ফরোয়ার্ড মোরসালিন। বাকি সময়টা শুধুই দরিয়েলতনের। চতুর্থ-পঞ্চম-ষষ্ঠ গোল করে দরিয়েলতন একাই নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন শেখ রাসেলকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খেয়েছেন অভিজ্ঞ গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম। ৬-৩ হওয়ার পর ম্যাচের শেষ ক্ষণে পেনাল্টিতে ৬-৪ করেন নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার ইকেচুকু।
ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে জ্বলে ওঠে ফ্লাডলাইট। দারুণ লাগছিল কিংস অ্যারেনা। তাতে আরও উজ্জ্বল লাগে কিংসকে।
ম্যাচটাকে দেখা হচ্ছিল ৩০ মে ফেডারেশন কাপের ফাইনালের মহড়া হিসেবে। সেই মহড়ায় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সোলেমান দিয়াবাতের পেনাল্টি গোলে ১-০ করেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কিন্তু ৮৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দানিয়েল কলিনদ্রেসের গোলে স্কোরলাইন ১-১। কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে হার এগিয়ে অন্তত মান বাঁচাতে পেরেছে আবাহনী।
এই ড্রয়ে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের চেয়ে ১২ পয়েন্ট পিছিয়ে গেল আবাহনী। ১৭ ম্যাচে কিংস ৪৬, আবাহনী ৩৪। গতকালের ড্রয়ে মোহামেডান উঠে এসেছে তিনে। মোহামেডানের সমান ২৩ পয়েন্ট পেলেও গোলগড়ে চারে বাংলাদেশ পুলিশ। পাঁচ ও ছয়ে যথাক্রমে শেখ রাসেল ও শেখ জামাল। ২০ ম্যাচের লিগে তৃতীয় স্থানের জন্য লড়ছে এই দলগুলো। তবে সবার চোখ এখন ৩০ মের দিকে। পাঁচ দিনের মধ্যে কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবারও মুখোমুখি হবে আবাহনী-মোহামেডান।