ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে একটি জায়গায় দুজনের অবস্থান পাশাপাশি। ১৯৯৮ সালে ব্যালন ডি অর জিতেছিলেন জিনেদিন জিদান। দুই যুগ পর প্রথম ফরাসি ফুটবলার হিসেবে বর্ষসেরার পুরস্কারটি জেতেন করিম বেনজেমা।
তবে ব্যালন ডি অর ছাড়িয়েও জিদান-বেনজেমার সম্পর্কে ভিন্ন রসায়ন আছে। রিয়াল মাদ্রিদে পাঁচ মৌসুম জিদানের কোচিংয়ে খেলেছেন বেনজেমা। ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে একে অপরকে নিয়ে জানাশোনা বেশ গভীর। এ ক্ষেত্রে বেনজেমাকে বেশ বড় মানের খেলোয়াড় হিসেবে ধারণা জিদানের। তাঁর মতে, বেনজেমাই নিজের খেলা দিয়ে তাঁকে চেয়ার থেকে উঠতে বাধ্য করতে পারতেন!
সাবেক রিয়াল কোচ জিদানের বয়স ৫১ পূর্ণ হয়েছে গত সপ্তাহে। এ উপলক্ষে ফ্রান্সের টিভি চ্যানেল ‘টিএফ১’–এর ফুটবলবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘তেলেফুত’কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কোচিং ক্যারিয়ার এমবাপ্পে, বেনজেমা, সমসাময়িক ফুটবলসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জিদান।
বেনজেমাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জিদান রিয়ালের ডাগআউটে দাঁড়ানোর সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘যদি একজন খেলোয়াড় থাকে যে আমাকে চেয়ার থেকে তুলে ফেলতে পারে, সে করিম বেনজেমা। হয়তো বা লুকা মদরিচও। যখন তাদের কাছে বল থাকে, মনে হতে পারে বলটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। কিন্তু না, ওরা ঠিকই ওই পরিস্থিতি থেকে বল নিয়ে ঠিক বেরিয়ে যায়।’
কোচ হিসেবে রিয়ালের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা জিদান বেনজেমা ও মদরিচকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে আরও বলেন, ‘অন্যদের তুলনায় এরা দুজন আমাকে বেশি মুগ্ধ করত। ওদের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তাদের জন্য অবদান রাখত।’
মদরিচ এখনো রিয়ালে থাকলেও বেনজেমা এরই মধ্যে মাদ্রিদ ছেড়ে গেছেন। ১৪ বছরে ৩৫৪ গোল ও ২৫ ট্রফি জয় করে নতুন মৌসুমের জন্য সৌদি আরবের ক্লাব আল ইত্তিহাদে নাম লিখিয়েছেন। জিদান অবশ্য ২০২১ সালে রিয়াল ছাড়ার পর থেকে অবসরে আছেন। মাঝে কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর নাম শোনা গেলেও কোথায় দায়িত্ব নেননি। কাতার বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তবে দিদিয়ের দেশম আরেক মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ায় সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ক্লাবপর্যায়ে কয়েকটি প্রস্তাব পেলেও মনমতো না হওয়ায় দায়িত্ব নেননি।
তবে দুই বছর কোচিং থেকে বাইরে থাকার পর এখন আবার মাঠে ফেরার আগ্রহ বেড়েছে জিদানের। আর সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিতও দিয়েছেন, ‘আশা করি, দ্রুতই কোচিংয়ে ফিরতে পারব। আমি কোচিংয়ের উত্তেজনাটা মিস করছি। আমার এটা দরকার। দুই বছর পাইনি, তবে সামনে আবারও পাব এটা নিশ্চিত।’
ফ্রান্স বা পিএসজির কোচিংয়ে তাঁকে দেখা যেতে পারে কি না প্রশ্নে জিদানের জবাব, ‘কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমি জানি, আমি কী চাই আর কী চাই না। আমার যদি মনে হয় একটা বিরতি নেব, তাহলে সেটা দরকার বলেই নিই। এখন আমি নিজেকে বলতে পারি, শিগগিরই অনুশীলনে ফিরতে পারি।’
ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতা জিদান ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল দিয়ে মাঠের ফুটবল ছেড়েছেন। তাঁর সময়কার ফুটবলের সঙ্গে এখনকার ফুটবলের তুলনা টেনে বলেন, ‘আমার সময়ে ফুটবল এতটা শরীরনির্ভর ছিল না, যতটা এখন। তখন টেকনিক দিয়েই অনেক দূর যাওয়া যেত। এখন বিষয়টা অনেক জটিল হয়ে গেছে। এখনকার ফুটবল ভিন্ন। আমি যদি এ সময়ে খেলতাম, আমার শরীর হয়তো নির্দয় আচরণই করত।’