২০২০ সালে বাফুফের সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েও অজ্ঞাত কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে ছিলেন না তরফদার রুহুল আমিন। পরে দাবি করেন, তৎকালীন সরকারের উচ্চ মহল থেকে চাপ দেওয়ায় নাকি প্রার্থী হতে পারেননি। ৪ বছর পর একই পদে এবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী। কিন্তু গুঞ্জনকে সত্যি করে এবারও সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিনে আজ সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফরম সংগ্রহ করেছেন সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বাফুফে ভবনে এসে তাঁর হয়ে মনোনয়নত্র তুলেছেন সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মকর্তা নাজমুল করিম। সাংবাদিকদের নাজমুল বলেন, ‘স্যার ফুটবলের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকতে চান। সে জন্য ওনার পক্ষে আমরা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ফরম কিনেছি।’ তরফদার সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নে নাজমুল করিম বলেন, ‘বিষয়টা উনিই জানেন। এটা স্যারের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি ফুটবলের লোক নই ভাই। এত কঠিন প্রশ্ন আমাকে করবেন না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘উনি ফুটবলের জন্য কাজ করতে চান। আর এখানে পদ–পদবি কোনো ব্যাপার নয়। ফুটবলের সঙ্গে থাকলেই তো হয়।’
সভাপতি পদে আজ মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিলুপ্ত জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ ফোরামের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান ও বাংলাদেশ ফুটবল সাপোটার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন। সব মিলিয়ে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কিনলেন চারজন। এর আগে কেনেন সাবেক ফুটবলার ও বাফুফের সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল ও দিনাজপুরের ফুটবল কোচ এ এফ এম মিজানুর রহমান চৌধুরী।
১৪ ও ১৫ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। তারপর নিশ্চিত হওয়া যাবে সভাপতি পদে প্রার্থী কয়জন থাকেন। বিসিবির সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান বাফুফের সহসভাপতি পদেও মনোনয়নপত্র কিনেছেন। শাহাদাত কিনেছেন সদস্য পদেও।
বাফুফের সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কেনার কারণ জানতে চাইলে রেদোয়ান বলেন, ‘গত ৪ বছর তৃণমূলে কোনো ফুটবল লিগ হয়নি। আমরা ফুটবল গ্রামগঞ্জে নিতে চাই। তাই সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আমার।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে ঘটা করে তরফদারকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল জেলা ও বিভাগীয় সংগঠকদের পক্ষ থেকে। সেই মঞ্চে আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ানও ছিলেন। তরফদার কেন সরে গেলেন, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনি না থাকলে আমরা কী করব! উনি কেন সরলেন উনিই বলতে পারবেন।’ তাঁর সভাপতি প্রার্থী হওয়াটা তাঁদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত বলে জানান রেদোয়ান। তবে কোন সংগঠন জানতে চাইলে নামটা বলতে রাজি হননি (জানা গেছে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠকদের অলিখিত সংগঠন)।
সিনিয়র সহভাপতি পদে আগেই মনোয়নপত্র কিনেছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ও বাফুফের বর্তমান সহসভাপতি ইমরুল হাসান। তরফদার সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফরম নেওয়ায় ইমরুল হাসান শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ না–ও হতে পারেন বলে ইমরুলের ঘনিষ্ঠসূত্রের দাবি। তরফদার ছাড়াও আজ সিনিয়র সহসভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কেনেন নারায়ণগঞ্জের তৃণমূলের সংগঠক মনির হোসেন। তিনি ঢাকার পাইওনিয়ার লিগের একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।
সহসভাপতি পদে আজ মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক, সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, ছাইদ হাসান কানন। তরফদারকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণার অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন মানিক, সাব্বিররাও। মানিক বাফুফের গত নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালে সহসভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন সাব্বির। তাঁরা অভিন্ন সুরে বলেন, ফুটবলের জন্য কাজ করতে চান বলেই বাফুফেতে আসার ইচ্ছা।
সহসভাপতির ৪টি পদের জন্য ১২টি মনোনয়নপত্র কিনেছেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, ফাহাদ করিম, ইকবাল হোসেন, সাব্বির আহমেদ, ওয়াহিদ উদ্দীন, রশিদ শিমুল ইসলাম, সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, শফিকুল ইসলাম মানিক, সত্যজিৎ দাশ রুপু, মিসবাহ আহমেদ বিন সামাদ চৌধুরী ও ছাইদ হাসান কানন। সদস্য পদে বিক্রি হয়েছে ৪৩টি মনোনয়নত্র।
অন্য সব ক্রীড়া ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাউন্সিলর হতে হয়। তবে ব্যতিক্রম ফুটবল। এখানে কাউন্সিলর না হয়েও নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়। যার ইচ্ছা সে-ই মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন। এই সুযোগে ফুটবল জগতে অজানা–অচেনা ব্যক্তিও বাফুফের নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোয়নপত্র কিনেছেন। ২১টি পদের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে মোট ৬২টি।