‘দ্বৈরথ’ শব্দটি যে অর্থে হয়, মোহামেডানের স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির লড়াইকে কোনোভাবেই তাতে ফেলা যায় না। দুটি ক্লাবই ঐতিহ্যবাহী, কিন্তু ধারে-ভারে রহমতগঞ্জের চেয়ে মোহামেডান এগিয়ে যোজন ব্যবধানে। মোহামেডান এ দেশের খেলার জগতের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব। তুলনায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের পরিচিত পুরান ঢাকার এলাকাভিত্তিক দল হিসেবেই।
কিন্তু নকআউট ম্যাচে এই দুই দলের সর্বশেষ মোকাবিলায় জয়ী দলের নাম রহমতগঞ্জ। ২০২০ সালের ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল পুরান ঢাকার ক্লাবটি। এমনকি ২০১৯ সালের প্রিমিয়ার লিগেও মোহামেডান দুবার রহমতগঞ্জের সঙ্গে খেলে জিততে পারেনি। প্রথম লেগে ২-২ ড্রয়ের পর দ্বিতীয় লেগে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় সবুজ-হলুদ জার্সিধারীরা।
এই ম্যাচগুলোর ফল রহমতগঞ্জের পক্ষে গেছে ঠিকই, কিন্তু দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সব সময়ের ‘ফেবারিট’ বলতে যা বোঝায়, সেটি মোহামেডানই। ২০২০ সালের ফেডারেশন কাপ কিংবা ২০১৯ সালের প্রিমিয়ার লিগ বাদ দিলে এই দুই দলের সর্বশেষ ৫ লড়াইয়ে মোহামেডানই জিতেছে। এর মধ্যে আছে ৭-০ ও ৫-১ স্কোরলাইনের দুটি বড় ব্যবধানে জয়ও।
তবে আজ গোপালগঞ্জে বেলা দেড়টায় স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে মোহামেডান যখন রহমতগঞ্জের মুখোমুখি হবে, তখন কি তারা নিজেদের ফেবারিট বলতে পারবে? মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলার রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির অবশ্য আশাবাদী, ‘আমি মোহামেডানকে সরাসরি ফেবারিট বলতে চাই না। এখন দেশের ফুটবলে দলগুলোর মধ্যে ব্যবধান কমে এসেছে। মোহামেডানকে লড়তে হবে, তবে শেষ পর্যন্ত তারাই জিতবে বলে আমি মনে করি।’
মোহামেডান-রহমতগঞ্জ ম্যাচ বহু বছর ধরেই ছিল একেবারেই একপেশে। আশি-নব্বইয়ের দশকেও এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে বেশির ভাগ সময়ই জয়ী দল ছিল মোহামেডানই। তবে সেই সময়ের দৃশ্যপট ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। মোহামেডান তখন ধারে-ভারে বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী দল। তবে সেই সময় রহমতগঞ্জ, আরামবাগ, ওয়ারীর মতো কিছু দল বড় দলগুলোর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত। দারুণ লড়াই করে এই দলগুলো মোহামেডান-আবাহনীর মতো দলগুলোর পয়েন্ট কেড়ে নিত। কখনো কখনো জিতেও যেত। মোহামেডানের বর্তমান গোলকিপিং কোচ ও সাবেক গোলকিপার ছাইদ হাছান কাননের স্মৃতি তেমনই, ‘আমি যত দিন মোহামেডানে খেলেছি, তত দিন মোহামেডানকে রহমতগঞ্জ হারিয়েছে বলে মনে পড়ে না। তবে দু-একটা ম্যাচে হয়তো পয়েন্ট কেড়েছে। এটা ঠিক, আরামবাগ, ওয়ারী বা রহমতগঞ্জের মতো দলগুলোর সঙ্গে খেলার আগে কিছুটা অস্বস্তি হতো। ওদেরকে কখনোই হালকাভাবে নিতাম না।’
সত্তরের দশকের শেষ দিকে রহমতগঞ্জ নিজেদের লড়াকু শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৭৭ সালের রানার্সআপ দলটি ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশের শীর্ষ ফুটবল লিগে। ১৯৭৯ সালে রহমতগঞ্জ ক্লাবে খেলেই উত্থান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনির। ১৯৮২ সালে তিনি নাম লেখান আবাহনীতে। রহমতগঞ্জের সঙ্গে মোহামেডানের একটি ম্যাচের কথা তাঁর পরিষ্কার মনে আছে, ‘আমি নিজে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছি। কখনো হেরেছি বলে মনে পড়ে না। তবে রহমতগঞ্জের জার্সিতে ১৯৮১ সালের লিগে মোহামেডানের পয়েন্ট কেড়ে নিয়েছিলাম আমরা।’
সেই ম্যাচের জের কাটতে না কাটতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে আবাহনীর কাছে হেরে যায় মোহামেডান। প্রবীণ সমর্থকেরা বলেন, ’৮১ লিগে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল মোহামেডানের জন্য। প্রসঙ্গক্রমে, ১৯৮২ সালের লিগে আবাহনীর সর্বনাশ হয়েছিল রহমতগঞ্জের সঙ্গে হেরে।
তেমন কোনো কিছুই আজ রহমতগঞ্জের লক্ষ্য। ২০২০ সালের ফেডারেশন কাপের সেমির পুনরাবৃত্তি তারা করতেই চাইবে। মোহামেডান চাইবে পুরান ঢাকার পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নিজেদের আধিপত্যের ধারাবাহিকতা। এ ম্যাচে হারাটা নিশ্চয়ই মোহামেডানের অহমকে বড় ধাক্কা দেবে।