লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ

১০ কোটির দলবদল নিয়ে ক্লপের কণ্ঠে উল্টো সুর

ঘটনাটা ২০১৬ সালের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রেকর্ড ৮ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডে নতুন করে দলে ফেরায় পল পগবাকে। সে সময় ১০ কোটি পাউন্ডের দলবদল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লিভারপুল বস ইয়ুর্গেন ক্লপ। এত টাকা খরচ করে একজন খেলোয়াড়কে দলে আনার বিষয়টি যেন মানতেই পারছিলেন না ক্লপ। তাঁর অধীন ভবিষ্যতেও এই অঙ্কের দলবদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন লিভারপুল বস।

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে নিজের সেই অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে ক্লপকে। ক্লপের দল এখন শুধু ১০ কোটি পাউন্ডের মাত্রাই অতিক্রম করছে না; বরং ব্রিটিশ ট্রান্সফার রেকর্ডও ভেঙে দিতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য ক্লপ এখন বলেছেন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করার কথা।

১০ কোটি পাউন্ডের দলবদল নিয়ে ক্লপের অবস্থান নিয়ে কথা হয়েছে গত গ্রীষ্মের দলবদলেও। ডারউইন নুনিয়েজকে ৮ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে দলে ভেড়ায় লিভারপুল। ইউরো ও ডলারের হিসাবে যা তখন ১০০ মিলিয়নের (১০ কোটি) মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার মইজেস কাইসেদোকে দিয়ে সব সীমাই ছাড়িয়ে গেছে ক্লপের লিভারপুল। কাইসেদোর জন্য ব্রাইটনকে ১১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছে লিভারপুল।

শেষ পর্যন্ত এ চুক্তি আলোর মুখ দেখলে কাইসেদো হবেন ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি তারকা। জানুয়ারিতে ১০ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে বেনফিকা থেকে চেলসিতে আসা এনজো ফার্নান্দেজ এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডে খেলা সবচেয়ে দামি ফুটবলার। কাইসেদো এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।

মইজেস কাইসেদোর জন্য ১১ কোটি পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছে লিভারপুল

কাইসেদোর জন্য লিভারপুলের আকাশচুম্বী প্রস্তাবের পর কথা হচ্ছে ক্লপের সেই মন্তব্য নিয়েও। লিভারপুল বস সে সময় বলেছিলেন, ‘যে দিন ফুটবলে এটি হবে (১০০ মিলিয়নের দলবদল), আমি আর চাকরিতে থাকব না। কারণ, খেলাটি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে খেলার। অন্য ক্লাবগুলো এটা করতে পারে এবং অনেক অর্থ খরচ করে খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু আমি এটা ভিন্নভাবে করতে চাই। আর আমি যদি সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পাই, তবে আমি সেটা ভিন্নভাবে করব।’

চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ক্লপকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১৬ সালে করা তাঁর সেই মন্তব্যের কথা। তবে সে সময় তাঁর মন্তব্যটি ভুল ছিল দাবি করলেও বিষয়টা যে তিনি পছন্দ করেন না তা–ও জানিয়েছেন লিভারপুল বস। ক্লপ বলেছেন, ‘সবকিছু বদলে যায়। আমি কি এটা পছন্দ করি? না। আমি কি বুঝতে পারছি যে আমি ভুল ছিলাম? হ্যাঁ।’

দলবদলের অঙ্ক এভাবে বাড়ার জন্য কাউকে দায় দিতে না চাওয়া ক্লপ আরও বলেছেন, ‘আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু এটাই বাজার। দিন শেষে ক্লাব হিসেবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যে সম্পদ আমাদের আছে, তা ব্যবহার করে আমরা সেরা খেলোয়াড়টিকেই আনতে পারব। আমি সেদিন যা ভেবেছিলাম, সেটা বলেছিলাম। এখন আমি বুঝতে পারছি যে আমি ভুল ছিলাম।’

তবে ক্লপের ব্যাখ্যার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কথা হচ্ছে। পেদ্রো ব্রেন্ডান নামের এক ফুটবলপ্রেমী লিখেছেন, ‘ক্লপ বলেছিলেন, তারা যদি ১০ কোটির খেলোয়াড় কেনেন তবে তিনি ফুটবল ছেড়ে দেবেন। ক্লপের উচিত তাঁর কথায় অটল থাকা এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়া।’ ক্রিস ফিলিপস নামের অন্য এক ফুটবলপ্রেমী ক্লপের পক্ষ নিয়ে লিখেছেন, ‘তিনি ব্যাখ্যা করেছেন অর্থনৈতিক চুক্তি এবং তাঁর পেছনে কারণগুলো। কিন্তু আপনারা কথা বলছেন তাঁর সাক্ষাৎকারের শেষ লাইন নিয়ে।’

কেউ কেউ আবার বলেছেন, ক্লপ ১০ কোটি পাউন্ড নিয়ে কথা বলেছেন ৭ বছর আগে। সে সময়ের অর্থের মান আর বর্তমান অর্থের মান মোটেই এক নয়। তাই ক্লপের সেই মন্তব্য নিয়ে হাস্যরসের কোনো সুযোগ নেই।