২০৩২ ইউরো আয়োজন করে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চায় ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন
২০৩২ ইউরো আয়োজন করে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চায় ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন

করোনা মহামারিতে ৪৩২৭৮ কোটি টাকা লোকসান ইতালিয়ান ফুটবলে

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহ রূপ ইউরোপে সবার আগে দেখেছে ইতালি। একসময় করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষ দেশও ছিল ইতালি। সেই কঠিন সময় ও অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগ পর্যন্ত করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে।

জীবন বাঁচানোই যখন একমাত্র করণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন তো খেলাধুলার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর সবকিছুর মতো থমকে গিয়েছিল ইতালিয়ান ফুটবলও।

সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঠে ফুটবল ফিরলেও অর্থনৈতিক লোকসান কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি। ২০১৯ থেকে ২০২২—মহামারির এ সময়ে ইতালির পেশাদার ফুটবল ক্লাবগুলো সব মিলিয়ে খুইয়েছে ৩৬০ কোটি ইউরো; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার বেশি। এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন

সম্প্রতি ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (এফআইজিসি) ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা ‘রিপোর্টক্যালসিও’ নামে পরিচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সময়ে ইতালীয় ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ তিন স্তরের (সিরি ‘আ’, সিরি ‘বি’ও সিরি ‘সি’) ক্লাবগুলো বছরে গড়ে ১২০ কোটি ইউরো (১৪ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা) করে হারিয়েছে। করোনা আসার আগের মৌসুমে (২০১৮-১৯) ক্রমবর্ধমান ক্ষতি ছিল ৪১ কোটি ২০ লাখ ইউরো (৪ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা)।

শুধু ২০২১-২২ মৌসুমেই ক্ষতি হয়েছে ১৪০ কোটি ইউরো (১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা)। প্রতিবেদনে যেটিকে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় লোকসান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। টালমাটাল হয়ে পড়া ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের ঋণ সেই মৌসুমে ৫৬০ কোটি ইউরোয় (৬৭ হাজার ৩২২ কোটি টাকা) গিয়ে ঠেকেছে, এক বছরের ব্যবধানে যা ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।

করোনার প্রাদুর্ভাবে খেলা বন্ধ থাকায় ইতালির বিখ্যাত সান সিরো স্টেডিয়ামের গ্যালারির আসনগুলোতে ধুলো জমেছিল

তবে তত দিনে করোনার টিকা আবিষ্কার হওয়ায় ও বেশির ভাগ মানুষ অন্তত দুই ডোজ টিকা নেওয়ায় মাঠে আবারও দর্শক সমাগম দেখা গেছে। ২০২১-২২ মৌসুমে তাই টিকিট বিক্রি থেকে আয় কিছুটা বেড়েছে। ওই মৌসুমে টিকিট বিক্রি করে ২৫ কোটি ৪০ লাখ ইউরো (৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা) আয় করেছিল ইতালির পেশাদার ক্লাবগুলো, যা আগের বছরে তুলনায় ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো (৩৩৬ কোটি টাকা) বেশি। যদিও সেটা করোনা আসার আগের মৌসুমের তুলনায় অনেক কম। ২০১৮-১৯ মৌসুমে টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছিল ৩৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ঘরোয়া লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য ইতালি বেশ পিছিয়ে। যেখানে ২০২১-২২ মৌসুমে দেশটির ফুটবলের শীর্ষ তিন স্তরের পেশাদার ক্লাবগুলো টিকিট বিক্রি থেকে আয় করেছিল ২৫ কোটি ৪০ লাখ ইউরো (৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা), সেখানে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড একাই পকেটে পুরেছে ১২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো (১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা)।

বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অবশ্য করোনায় ইতালিয়ান ফুটবলের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী। ২০৩২ সালে তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে চায় দেশটির ফেডারেশন। এটিকে কর্মকর্তারা ‘অনন্য সুযোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

করোনার দুঃসময়ে ইউরো জিতে ইতালিয়ানদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন কিয়েলিনি–বোনুচ্চিরা

আগামী ৯ বছরের মধ্যে পুরোনো স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন ও পরিত্যক্ত স্টেডিয়াম সংস্কার করে দর্শক ফেরাতে চাইছে ইতালিয়ান ফেডারেশন। সেটা বাস্তবায়ন হলে টিকিট বিক্রি থেকে আয় অনেক বাড়বে।