স্বাগতিক জার্মানি ও স্কটল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হবে ইউরো ২০২৪। তবে মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে মাঠে নামার আগেই জার্মান অধিনায়ক ইলকায় গুন্দোয়ানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
গুন্দোয়ানকে দিয়ে এবারই প্রথম বড় টুর্নামেন্টে বিদেশি বংশোদ্ভূত কাউকে অধিনায়ক করেছে জার্মানি। লম্বা সময় ধরে দলটিতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও জাতির খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরা হয়নি কারোরই। ফলে গুন্দোয়ানের অধিনায়ক হওয়াকে বিশেষ ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
১৯৯৮ সালের পর থেকেই মূলত বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ছিল জার্মানি দলে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ জন খেলোয়াড় খেলেছেন দলটিতে। যদিও জার্মানি দলে প্রথম বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় দেখা গিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সেবার দলে জায়গা পেয়েছিলেন আফ্রো-আমেরিকান ফুটবলার এরভিন কোসটাডে। এ সংখ্যা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে আরও বেড়েছে। জার্মানির এবারের ইউরো দলেও আছেন বেশ কজন বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়। তবে এবার সবচেয়ে বড় চমক ছিল তুর্কি বংশোদ্ভূত গুন্দোয়ানের অধিনায়ক হওয়ার ঘটনা। যদিও পুরো ঘটনা এখন বিতর্কে রূপ নিয়েছে।
ইউরো শুরুর দুই সপ্তাহ আগেই শুরু হয় এ বিতর্ক। জার্মানির ভেস্ট ডয়চে রুন্ডফুঙ্ক নামের রেডিও ও টেলিভিশন মাধ্যমের এক সমীক্ষায় জানানো হয়, জার্মানির ২০ শতাংশের বেশি মানুষ দেশের ফুটবল দলের অধিনায়ক হিসেবে একজন খাঁটি শ্বেতাঙ্গ জার্মানকে দেখতে চান। এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মনে করেন, আরও বেশি শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেললে ভালো হতো। পাশাপাশি সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তুর্কি বংশোদ্ভূত কাউকে জার্মানি দলের অধিনায়ক করাটাও লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত হয়েছে।
ইউরোর আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন গুন্দোয়ানও। জার্মানির স্পিগেল পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি জার্মানদের মতো দেখতে না হলেও আমি জার্মান।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন কাজের লোকের অভাব দেখা দিয়েছিল, তখন আশপাশের অনেক দেশ থেকে কাজের সন্ধানে লোকজন জার্মানিতে আসতে শুরু করে। সে ধরাবাহিকতাতে জার্মানিতে আসে গুন্দোয়ানের পরিবার।
অতিথি শ্রমিক হিসেবে তুরস্কের বালিকেসির প্রদেশের একটি জেলা শহর দুরসুনবে থেকে ১৯৭৯ সালে জার্মানির খনিসমৃদ্ধ রুড় এলাকায় আসেন তিনি। গুন্দোয়ানের জন্ম ১৯৯০ সালে জার্মানির গেলসেনকির্চেন শহরে। তুর্কি মা–বাবার ছেলে গুন্দোয়ান বেড়ে উঠেছেন গেলসেনকির্চেন শহরেই। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা শৈশব থেকেই। এরপর নিষ্ঠা ও পরিশ্রম তাঁকে নিয়ে আসে জাতীয় দলে।
তবে সম্প্রতি গুন্দোয়ানকে নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে হতাশ তিনি। অভিবাসী ইতিহাস থাকায় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের প্রতি জার্মানির অনেক লোকের এমন নেতিবাচক মনোভাব দেখে বেদনাহত হয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানি যে সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান।’ তবে বিষয়টি তাঁকে অবাক করেনি বলেও জানিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী এই বার্সা মিডফিল্ডার।
এদিকে জার্মানি জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান এবং গুন্দোয়ানের সতীর্থ জশুয়া কিমিখ ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়ন শুরুর আগে এ ধরনের সমীক্ষা নিয়ে বিরক্ত। ইউলিয়ান নাগলসমান বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটি সমীক্ষা এবং এটা দুঃখজনক যে আমরা এখনো এ ধরনের সমীক্ষা করছি।’