১৪টি ম্যাচের ১১টিতেই জয়। বিপরীতে দুটি ড্র, হার একটিতে। জয় সর্বশেষ চার ম্যাচেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে রেকর্ড পুরোপুরি বাংলাদেশের পক্ষেই। তবু সেই ভুটানকেই সমীহ করছে বাংলাদেশ। আজ সন্ধ্যা ছয়টায় থিম্পুতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আগে ১৪ ম্যাচের ১১টিতেই জেতা দেশটির বিপক্ষে জোর গলায় ‘জিতব’ কথাটা বলতে পারছে না হাভিয়ের কাবরেরার দল।
সেপ্টেম্বরের ফিফা উইন্ডোতে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভুটানকে বেছে নেওয়ার পর কিছুটা প্রশ্নের সম্মুখীনই হতে হয়েছে বাফুফেকে। কোচ কাবরেরার দিকেও ছুটে গিয়েছিল প্রশ্ন, যেখানে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলা দরকার, তখন কেন প্রীতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভুটান। কাবরেরা কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মাঝেমধ্যে এমন কিছু ম্যাচ খেলতে হয়, যেখানে আপনার জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ছয়টি কঠিন ম্যাচ খেলেছে, তার আগে আরও চারটি ম্যাচে মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছে, সেই দুটিও ছিল কঠিন ম্যাচ।’
উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, ভুটানের বিপক্ষে জেতাটাই লক্ষ্য। কিন্তু ম্যাচ ভুটানের মাটিতে হওয়াতেই জয়ের কথা জোরেশোরে বলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশকে। যে একটি ম্যাচে ভুটানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ, সেটি যে থিম্পুর মাটিতেই হয়েছিল। ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের সেই ম্যাচে ৩–১ গোলে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আট বছর আগের সেই ম্যাচটি ছিল ভুটানের মাটিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। থিম্পুর উচ্চতা সে ম্যাচে কোনো সমস্যা তৈরি করেছিল কি না, তা নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না। ভুটানের বিপক্ষে হারটাই সে সময় সমালোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
এবার ভুটানে যাওয়ার আগেই কোচ কাবরেরা উচ্চতার কথা বারবার বলেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত থিম্পুতে খেলাটা বাংলাদেশি ফুটবলারদের জন্য যে সমস্যা, সেটিই তিনি বলেছিলেন। থিম্পুতে গিয়েও সেই সমস্যা টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, শেখ মোরসালিনরা সবাই বলেছেন উচ্চতার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যার কথা। সমস্যাটা আরও বেড়েছে তিন মাস ধরে খেলোয়াড়েরা খেলার বাইরে থাকায়। ২৯ মে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ হওয়ার পর জুনে অস্ট্রেলিয়া ও লেবাননের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ দুটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরপর খেলোয়াড়েরা ছিলেন পুরোপুরি ছুটিতে। আজ ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে তিন মাস খেলার বাইরে থাকাটা বড় সমস্যাই মনে হচ্ছে বাংলাদেশের।
কাল ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জামাল খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফিটনেস নিয়েও কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি কঠিন হবে। আমরা তিন মাস খেলার বাইরে ছিলাম। ম্যাচ ফিটনেসে কিছুটা ঘাটতি আছে। ভুটান দল তাদের ফুটবল মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এই ম্যাচ খেলবে। সে কারণে ওরা তো কিছুটা এগিয়েই থাকবে।’
কাবরেরার কাছে এটি চ্যালেঞ্জ। দুটি ম্যাচই শুরুতে ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল থাকায় ভুটানই খেলাটা তাদের মাটিতে আয়োজনের অনুরোধ করে। ঢাকায় খেলা দুটি হলে হয়তো আত্মবিশ্বাস নিয়েই জয়ের কথা বলতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু থিম্পুতে সেটিকে চ্যালেঞ্জই মনে হচ্ছে কোচের। তিনি দেশ ছাড়ার আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘থিম্পুতে যেহেতু কিছুটা কঠিন কন্ডিশনে খেলতে হবে, তাই ম্যাচটা চ্যালেঞ্জিং। সেটি এক দিক দিয়ে দলের জন্যও ভালো। ম্যাচ দুটি জিততে পারলে সেটি দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে।’
কাবরেরা একটা জিনিস মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের এ দলটা লড়তে জানে, ‘আমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছি, সেই তুলনায় ভুটান হয়তো সহজ প্রতিপক্ষ। কিন্তু যেখানে খেলা হবে, সেই কন্ডিশন কঠিন। বড় প্রতিপক্ষের সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছে বাংলাদেশ, তাই ভুটানের কন্ডিশনের সঙ্গে লড়াই করেই ম্যাচটা জিততে চাচ্ছি আমরা।’