শেখ হাসিনা সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটেছে। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর, যার প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। ধানমন্ডিতে ভাঙচুর করা হয়েছে শেখ কামাল প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্লাবে। শেখ জামাল, কলাবাগান ক্লাবও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে গতকাল রাতে একটি চিঠি দিয়ে গেছে ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’। চিঠিতে তারা বাফুফে সভাপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে।
‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’–এর ২০-২৫ জনের একটি দল আজ বিকেলে ৫টায়ও বাফুফে ভবনের সামনে জড়ো হয়েছে। তবে কোনো স্লোগান দেয়নি তারা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সমর্থকেরা অবশ্য সালাহউদ্দিনকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে, এমন দাবি থেকে সরে এসে বলেছেন, এখনই পদত্যাগ না করলেও আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফের সম্ভাব্য নির্বাচনে তিনি যেন প্রার্থী না হন।
শুধু সালাহউদ্দিন নন, ফুটবল আলট্রাসের সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেছেন আরও দুজনের নাম, ‘বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার (কিরণ)—এই তিনজনকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, সসম্মানে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করতে যদি ফিফার নিয়মে সমস্যা হয়, তাহলে এটা নিশ্চিত করতে হবে, আগামী নির্বাচনে এই তিনজন দাঁড়াবেন না। দেশের ফুটবল বাঁচাতে এটা তাঁদের করতে হবে।’
মেয়াদ শেষের আগে বাফুফের কাউকে জোর করে পদত্যাগ করালে ফিফার নিষোধাজ্ঞায় পড়তে পারে বাংলাদেশ। কথাটা মনে করিয়ে দিলে সংগঠনের সহসভাপতি বলেন, ‘কাজী সালাহউদ্দিন আমাদের নিশ্চিত করুক যে আগামী নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। তত দিন পর্যন্ত তিনি থাকুন, আমরা তাঁকে বাধা দেব না।’
তন্ময় নামের ফুটবল সমর্থক বাফুফেতে অবাধ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘কাজী সালাহউদ্দিন নির্বাচনের মাধ্যমে বাফুফের ক্ষমতায় এলেও তিনি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ দেননি। পুরোটাই একটা সিন্ডিকেট করে রেখেছেন। আমাদের দাবি, বাফুফের নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে।’
এ সময় বাফুফে ভবনের প্রধান ফটকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম। সমর্থক দলটিকে তিনি ভবনে আক্রমণ না করার অনুরোধ করেন। আমিরুল বাফুফে ভবনে থাকা মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এসেছেন জানালেও বাফুফে ভবনের সুরক্ষা বলতে আপাতত কিছু নেই। দুই ফটকের কোনোটিতেই কোনো নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা যায়নি। ফটক ভেতর থেকে বন্ধ। ফেডারেশন কার্যালয়ের সবাইকে বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভবনের পেছনের দিকের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাফুফে ভবনের ভেতরে থাকা তৃণমূলের ক্রীড়া সংগঠক ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে। ‘মোহামেডানের কালা’ নামে পরিচিত এই সংগঠক বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার দিকে একদল মানুষ এসে বাফুফে ভবনে ঢুকতে চেয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল হামলা করা। তারা কাজী সালাহউদ্দিনের খোঁজ করে। আমি তাদের বুঝিয়ে বলেছি, সালাহউদ্দিন সাহেব এখানে নেই। আর বাফুফে ভবন সরকারি নয়, এটা জনগণের, ফুটবলের। বুঝিয়ে বলার পর তারা চলে যায়।’
ওদিকে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামাল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী ক্লাবে গতকাল হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। ক্লাব চত্বরে থাকা শেখ কামালের মুর্যালের একটি অংশ ভেঙে ফেলার পাশাপাশি আগুনও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কক্ষের আসবাব ও কাগজপত্র তছনছ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায়ও বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। আজ দুপুরে স্টেডিয়ামপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, কোনো ফেডারেশন কার্যালয়ই খোলা নেই। তবে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন ফেডারেশনের দখল নেওয়া।
বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার হাসান দিলুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন। ফেডারেশনের ভেতরে বসে সভা করেছেন। আগামীকাল বেলা ১১টায় সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়, কোচ, জাজ ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা আহ্বান করেছেন তিনি। এ সময় ২০১০ এসএ গেমসে সোনাজয়ী উশুকা মেজবাহ উদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কারাতে ফেডারেশনেও একই অবস্থা। বান্দরবান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যা শৈ হ্লার অনুপস্থিতিতে কারাতে ফেডারেশনের দখল নিয়েছে সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টুর দল। সেন্টু বলেছেন, ‘আওয়ামী ঘরানার কর্তারা পদত্যাগ করলে আমরা নতুন করে নেতৃত্ব সাজাব।’
অ্যাথলেটিকস, হকিসহ অনেক ফেডারেশনেই নতুন নেতৃত্ব আনার তৎপরতা চলছে। অ্যাথলেটিকসের ‘বঞ্চিত’ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা ফেডারেশনে ঢুকবেন দু–এক দিনের মধ্যেই। হকির ‘বঞ্চিতরাও’ সংগঠিত হচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদ এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন।