ম্যানচেস্টার সিটি কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশ্বাসটা তাহলে এখনো বেশ মজবুতই আছে পেপ গার্দিওলার। কারণ, এর আগে সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে সিটি কোচ গার্দিওলা বলেছিলেন, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরদিনই তিনি ক্লাবের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। দীর্ঘ চার বছর তদন্তের পর এবার ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ এনেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। চার বছরের তদন্তে সিটির বিরুদ্ধে নাকি প্রায় ১০০ অনিয়মের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তারা।
এমন অভিযোগ ওঠার পরই তাই প্রশ্নটা উঠেছিল—গার্দিওলা আর সিটিতে থাকবেন তো? আজ উত্তরটা দিয়েছেন গার্দিওলা নিজেই। জানিয়ে দিয়েছেন, সিটি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না তিনি। স্প্যানিশ এই কোচের বিশ্বাস, আগেরবারের মতো এবারও সিটির বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
আর্থিক অনিয়মের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিটিকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে উয়েফা। যদিও ২০২০ সালের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত সিটির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয় রায় দিয়ে উয়েফার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়।
তখন গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আমি কেন ক্লাবের হয়ে কথা বলি? কারণ, আমি তাদের হয়ে কাজ করি। যখন তাদের বিরুদ্ধে (আর্থিক অনিয়ম) অভিযোগ উঠেছে আমি প্রশ্ন করেছি, বিষয়টি নিয়ে আমাকে ধারণা দিন। তারা আমাকে বলেছে, আমি বিশ্বাস করেছি। আমি তাদের বলেছি, যদি আপনারা আমাকে মিথ্যা বলেন, প্রমাণিত হওয়ার পরদিন আমি দায়িত্ব ছাড়ব। আমি আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি। কারণ, আমি আপনাদের বিশ্বাস করি।’
তবে এবার সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। গত সোমবার প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিটির বিরুদ্ধে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শতাধিক আর্থিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। প্রথমত, অভিযোগ হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ দুর্নীতি করে বাড়িয়ে দেখিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এসব অর্থ মালিকপক্ষের কাছ থেকে এসেছে, যা আর্থিক নীতির আওতায় পড়ে না। কিন্তু সিটি সেগুলোকে বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ বলে চালিয়ে দিয়েছে।
আরেক ধরনের অভিযোগ হচ্ছে, ম্যানচেস্টার সিটি দুর্নীতি করে ক্লাবের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দেখিয়েছে। ক্লাবটি বিভিন্ন সময় এর কোচদের সিটিরই মালিকপক্ষের অধীনে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপনে চুক্তিবদ্ধ করেছে। ক্লাব থেকে কোচদের বেতন কম দেখিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোচদের বেতন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ক্লাবের পরিচালন ব্যয় কম দেখানো গেছে।
এমন অভিযোগ ওঠার পর থেকেই সিটিকে নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ট্রল করে সিটির প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা কেড়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন।
সিটিকে যাঁরা অভিযুক্ত করছেন, বিচারের আগেই তাদের ধুয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা, ‘প্রথমত আমার মনে হচ্ছে, আমাদের এরই মধ্যে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা হয়েছে। যদি আমরা দোষী হই, আমরা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বিচারকেরা যে রায় দেন, তা মেনে নেব। কিন্তু কী হবে যদি উয়েফার সেই ঘটনার মতো আবার আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হই? আমাদের যে ক্ষতি হয়ে গেছে, সে ক্ষতি কি পুষিয়ে দেওয়া হবে?’
এ ধরনের অপরাধে সাবধানবাণী থেকে শুরু করে লিগ থেকে নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত যেকোনো শাস্তিই হতে পারে। ইংলিশ ফুটবল ও ফৌজদারি আইনের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আর্থিক জরিমানা, পয়েন্ট কর্তন, নিষেধাজ্ঞা, অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে কমিশন যেকোনো শাস্তিই দিতে পারে ম্যানচেস্টার সিটিকে। এমনকি এ সময় জেতা সিটির সব ট্রফি কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। ক্লাবের এমন সময়ে গার্দিওলা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিপদের দিনে তিনি কোথাও যাচ্ছেন না।
বরং অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তিনি সিটিতে থাকতে চান, ‘আমি কোচের পদ থেকে কোথাও যাচ্ছি না। আমি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনই সিটিতে বেশি থাকতে চাই। মাঝেমধ্যে আমার মনে সংশয় জাগত, কারণ সাত-আট বছর তো আর কম সময় নয়! কিন্তু এখন আমি কোথাও যেতে চাচ্ছি না। মানুষ বলে, তারা আমাকে মিথ্যা বলেছে। না, তারা মিথ্যা বলেনি। উয়েফায় কী হয়েছিল তাহলে? এ ঘটনাও এমনই। কেন আমি নিজেদের লোকদের বিশ্বাস না করে অন্য ক্লাবের প্রধান নির্বাহীদের বিশ্বাস করব?’