মেসি–রোনালদো দুজনই এখন ইউরোপের বাইরে খেলছেন
মেসি–রোনালদো দুজনই এখন ইউরোপের বাইরে খেলছেন

মেসির এমএলএস না রোনালদোর এসপিএল—কোন লিগ শক্তিশালী, কী বলছে গবেষণা

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) চেয়ে সৌদি আরবের প্রো লিগ (এসপিএল) ভালো। ৩৮ বছর বয়সী পর্তুগিজ তারকার এই দাবিকে সঠিক মনে করেন অনেকেই। বিশেষ করে করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো, এনগালো কান্তেসহ ইউরোপীয় ফুটবলের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত তারকা মধ্যপ্রাচ্যের লিগটিতে যোগ দেওয়ায় এর মান অনেক ওপরে উঠে গিয়েছে বলে বিশ্বাস তাঁদের।

তবে বিপরীত মতও আছে। সৌদি প্রো লিগে প্রচুর নামী খেলোয়াড় যোগ দিলেও এটি এখনো এমএলএসের চেয়ে পিছিয়ে আছে বলেই মনে করেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয় আগে থেকেই লিগটিতে ভালো মানের খেলোয়াড়েরা নিয়মিতভাবে খেলেছেন। এখন লিওনেল মেসি যাওয়ার পর এমএলএসের ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিক দিক আরও শক্তিশালী হয়েছে, লিগটিতে তরুণ খেলোয়াড়দের আধিক্যের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেশি।

দুই পক্ষের যুক্তিই আমলে নেওয়ার মতো। তবে এমএলএস বনাম এসপিএলের কোনটি বেশি শক্তিশালী, সেটি সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য বিশদ ব্যাখ্যা দরকার। দরকার দুই লিগের বিভিন্ন বিষয়ের গভীর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ, বিশেষ করে মাঠের ফুটবলের।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্পোর্টস অ্যানালিটিকস কোম্পানি অপটা এমনই এক বিশ্লেষণ চালিয়েছে।

অপটা অবশ্য আলাদাভাবে এমএলএস ও এসপিএলকে বিশ্লেষণ করেনি। ১৮৩টি দেশের ৪১৩টি ঘরোয়া লিগের ১৩ হাজারের বেশি ক্লাব নিয়ে নিয়মিত ‘পাওয়ার র‍্যাঙ্কিং’ হালনাগাদ করে থাকে অপটা। এই র‍্যাঙ্কিংটা করা হয় ইএলও রেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

পাওয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের, দেশের এবং লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে তুলনা করা যায়। যেমন প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ ফিজির লিগের একটি ক্লাবের সঙ্গে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটির শক্তি পার্থক্য কতটুকু, সেটা বলে দেয় এই পাওয়ার রেটিং।

আর ক্লাবের পাওয়ার রেটিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া যায় লিগের র‍্যাঙ্কিং। অপটা অ্যানালিস্টের সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিং বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর লিগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। এক শ রেটিংয়ের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর গড় ৮৭.১। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ক্লাবের মধ্যে ৪টিই এই লিগের। প্রিমিয়ার লিগে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে লুটন টাউন–১১৬। এই লুটনই ফ্রান্সের লিগ আঁর ৯টি, ইতালির সিরি আর ৭টি, স্পেনের লা লিগার ৩টি এবং জার্মানির বুন্দেসলিগার ৩টি দলের চেয়ে ওপরে অবস্থান করছে।

অনেকের ধারণা, লিগ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের পরের অবস্থানটি লা লিগার। তবে ২০২৩–২৪ মৌসুমের লা লিগায় যে দলগুলো আছে, তাদের র‍্যাঙ্কিংয়ের গড়ে লা লিগার অবস্থান তৃতীয়, রেটিং ৮৪.১। লা লিগার চেয়ে বেশি ৮৫.৪ গড় রেটিং নিয়ে দুইয়ে বুন্দেসলিগা। এরপরে ৮৩.৮ গড় রেটিং নিয়ে সিরি ‘আ’ চতুর্থ এবং ৮১.৯ রেটিং নিয়ে লিগ আঁ পঞ্চম স্থানে আছে।

এমএলএস বনাম সৌদি প্রো লি—মেসি বনাম রোনালদো

অপটা–এর পাওয়ার র‍্যাঙ্কিং বলছে বিশ্বের সব লিগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার বা এমএলএস ২৯তম শক্তিশালী লিগ। এই লিগের দলগুলোর গড় রেটিং ৭৩.২। আর সৌদি প্রো লিগ বা এসপিএলের গড় পাওয়ার রেটিং ৭০.০, লিগগুলোর মধ্যে অবস্থান ৩৬তম।

অর্থাৎ শক্তি বিবেচনায় সৌদি প্রো লিগের তুলনায় এমএলএস ৭ ধাপ এগিয়ে।
কী কারণে এমএলএস সৌদি প্রো লিগের চেয়ে এগিয়ে, সেটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ক্লাবগুলোর শক্তি বিবেচনায়। দুই লিগের শীর্ষ চারটি দলের মধ্যে তিনটিই সৌদি প্রো লিগের (আল ইত্তিহাদ, আল হিলাল ও আল নাসর), এমএলএসের মাত্র একটি (ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন)। আবার দুই লিগের সর্বনিম্ন র‍্যাঙ্কিংয়ের ১৪ দলের মধ্যে ১৩টিই সৌদি প্রো লিগের, এমএলএসের একটি। ইএলও রেটিংয়ের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে, মুখোমুখি দলের খেলায় এক দল যে পয়েন্ট পায় অপর দল তা হারিয়ে ফেলে। যে কারণে কম রেটিংয়ের দল ভালো করলে অর্জন বেশি, বেশি রেটিংধারী দলের বিসর্জন বেশি। কোনো লিগে কম রেটিংয়ের বেশি দল থাকার অর্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম। যা বেশি রেটিংধারী দলগুলোর পাওয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলে।

এমএলএস পাওয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৬৩তম। আর সৌদি প্রো লিগের এক নম্বর দল আল ইত্তিহাদ বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৬৪তম। মেসির ইন্টার মায়ামি এমএলএসে আছে ২২ নম্বরে, আর বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫৮৪। রোনালদোর আল নাসর সৌদি আরবে আছে ৩ নম্বরে, বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ২২৯তম।