জীবনের শেষ সময়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে পেলেকে। চরম সেই অসুস্থতার মধ্যেও ব্রাজিলের খেলা থাকলেই টেলিভিশনের সামনে বসে যেতেন এই কিংবদন্তি। অনুজরা ভালো করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাহবা দিতেন। আর ব্রাজিল ভালো ফল করতে না পারলে সাহস জোগাতেন। নেইমার ভালো পারফর্ম করলে তাঁকে জানাতেন অভিনন্দন।
কাতার বিশ্বকাপের সময়ও বেঁচে ছিলেন পেলে। বেশির ভাগ খেলাই দেখেছেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলকে ছিটকে পড়তে দেখে নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছেন। এর কিছুদিন পর ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে মারা যান পেলে।
পেলে মারা যাওয়ার পর আরও ছন্নছাড়া হয়ে গেছে ব্রাজিল দল। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে কোচের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিতে। এরপর স্থায়ী কোনো কোচই নিতে পারেনি ব্রাজিল। দল চলছে ভারপ্রাপ্ত কোচ দিয়ে।
পেলে মারা যাওয়ার পর খেলা ৯ ম্যাচের ৫টিই হেরেছে ব্রাজিল। বাকি ৪ ম্যাচে ৩টি জয়, একটি ড্র। ব্রাজিল দলের এই অবস্থা দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি পেলের ছেলে এদিনিও। ৫৩ বছর বয়সী এদিনিও বলেছেন, ব্রাজিল দলের এই দুরবস্থা দেখলে তাঁর বাবা খুবই কষ্ট পেতেন।’
ব্রাজিল দলের এমন অবস্থা নিয়ে এদিনিও বলেছেন, ‘সমস্যা এক রাতে তৈরি হয়নি। সমস্যাগুলো অনেক বড় এবং জটিল। আমরা পতন দেখছি...এখনো আমাদের ভালো খেলোয়াড় আছে। তবে আগে আমাদের খেলোয়াড়দের মান এখনকার চেয়ে বেশি ভালো ছিল।’
পেলের সাত সন্তানের একজন এদিনিও, মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন। ১৯৭৫ সালে পেলে নিউইয়র্ক কসমসে নাম লেখানোর পর এদিনিওর মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যান পেলে। পেলের শেষ সময়ে অবশ্য বাবার কাছেই ছিলেন এদিনিও।
সেই সময়েই দেখেছেন, ব্রাজিলের ফুটবলকে কতটা ভালোবাসতেন পেলে। সেই দেখা থেকেই তিনি বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, তিনি (পেলে) যদি এ বছর বেঁচে থাকতেন, (ব্রাজিলের এমন অবস্থা দেখে) অনেক কষ্ট পেতেন।’
পেলে তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছেন ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। এই ক্লাবে খেলেই পেলে মূলত পেলে হয়েছেন। কিংবদন্তি ফুটবলারের প্রিয় সেই সান্তোসও পার করছে কঠিন সময়। ক্লাবটির ১১১ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গেছে সান্তোস।
এদিনিও এটা নিয়েও কথা বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা কোনো বিস্ময় নয়। যাঁরা ক্লাবটির প্রতিদিনের বিষয়গুলো লক্ষ করেছেন, তাঁদের সবাই বুঝতে পেরেছিলেন যে এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এটা ঘটলই।’
আগামী শুক্রবার পেলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সেদিন হয়তো বাবার কথা আরও বেশি করে মনে পড়বে এদিনিওর। এর আগে বাবাকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন অন্য রকম। আমরা তাঁকে অনেক মিস করি। ফুটবলের মাধ্যমে তিনি আমাদের দেশকে বয়ে নিয়ে গেছেন, যা নিয়ে আমরা গর্বিত।’