মেসির অনুপস্থিতিতে তাঁর ‘দ্য বেস্ট’ ট্রফিটি নেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ফ্রান্সের কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি
মেসির অনুপস্থিতিতে তাঁর ‘দ্য বেস্ট’ ট্রফিটি নেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ফ্রান্সের কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি

হলান্ড-এমবাপ্পেকে হারিয়ে ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ মেসি

তারার মেলা তো ছিলই। ব্রাজিলের কাফু, রবার্তো কার্লোস থেকে জার্মানির পল ব্রেইটনারও ছিলেন দর্শকসারিতে। আর ছিল চমক। কেউ কেউ বিতর্কও বলতে পারেন।২০২৩ ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ ছেলেদের বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ে বিশ্লেষকদের বিচারে আর্লিং হলান্ড ছিলেন এগিয়ে। কিন্তু পুরস্কারটি শেষ পর্যন্ত জিতেছেন মেসি। এবার তাঁর টানা দ্বিতীয়, সব মিলিয়ে তৃতীয়বার।

লন্ডনে ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ এর জমকালো এই রাতে মেসি উপস্থিত থাকতে পারেননি। সঞ্চালকের ভূমিকায় নামা ফরাসি কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি তাঁর পুরস্কারটি নেন। সহ-সঞ্চালক রেশমিন চৌধুরির প্রতি একটু কৌতুকের সুরে অঁরি বললেন, ‘আমি নিচ্ছি। কারণ কখনো এটা জিততে পারিনি।’ দর্শকসারিতে বসা আলিং হলান্ডের বাবা সাবেক ফুটবলার আলফি হলান্ডের মুখখানা তখন একটু থমথমেই। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে তাঁর ছেলে ‘ট্রেবল’ জিতেও যে ‘বেস্ট’ হতে পারেনি! সংক্ষিপ্ত তালিকায় মেসি ও হলান্ডের সঙ্গে অন্যজন পিএসজি ও ফ্রান্সের তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে।

ফিফার ওয়েবসাইটে ‘দ্য বেস্ট’ এর লাইভ বিবরণী জানাল, মেসি ও হলান্ডের মধ্যে ভোটের লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। দুজনেরই পয়েন্ট ৪৮। কিন্তু মেসি জিতেছেন জাতীয় দলের অধিনায়কদের ভোটে প্রথম পছন্দের তালিকায় এগিয়ে থাকায়। ফিফার ‘রুলস অব অ্যালোকেশন’ এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত।  এমবাপ্পে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়।

মেসির বিজয় এবারে ‘দ্য বেস্ট’ এর হয়তো শিরোনাম, তবে রাতটা ছিল মেয়েদের। গোটা অনুষ্ঠানটিই সাজানো হয়েছিল নারী ফুটবলকে উদ্‌যাপনের ছায়া ধরে রেখে। আর তাতে আইতানা বোনমাতির মেয়েদের ‘দ্য বেস্ট’ বর্ষসেরা হওয়া সেরা মুহূর্ত। স্পেন ও বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড মঞ্চে নিজের উদ্‌যাপনের সেই মুহূর্তে একাই ছিলেন। সেটা সম্ভবত সর্বশেষ নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের বিজয়মঞ্চে লুইস রুবিয়ালেসের সেই চুমু-কাণ্ডেরই এক তির্যক ইঙ্গিত। বোনমাতি সতীর্থ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ কথায় বলেছেন, ‘আমি সেই শক্তিশালী নারীদের প্রজন্মের একজন, যাঁরা এই খেলার সঙ্গে বিশ্বকেও পাল্টে দিচ্ছে।’

মেয়েদের ‘দ্য বেস্ট’ ট্রফি হাতে আইতানা বোনমাতি

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ট্রেবল জেতা কোচ পেপ গার্দিওলার হাতেই উঠেছে ছেলেদের ‘দ্য বেস্ট’ কোচের পুরস্কার। সংক্ষিপ্ত তালিকায় গার্দিওলার সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ইন্টার মিলানের কোচ সিমোন ইনজাঘি ও ইতালির কোচ লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি। ট্রফিটি গার্দিওলা ভাগ করে নিতে চেয়েছেন এ দুজনের সঙ্গে। অঁরি এ সময় গার্দিওলার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর কোচিং করানো বার্সেলোনার সেই দল এবং সিটির ট্রেবলজয়ী এই দলের মধ্যে সেরা কারা? গার্দিওলা বলেছেন, ‘বার্সেলোনা সব সময় আমার হৃদয়ে থাকবে। আমার প্রথম ভালোবাসা। তবে সিটির সঙ্গে এই পুরস্কার জয়টা বিশেষ কিছু। কারণ আমরা আগে এই সাফল্য পাইনি।’

অনুষ্ঠানের মাঝে গত বছর প্রয়াত তিন কিংবদন্তি মারিও জাগালো, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ও ববি চার্লটনের প্রতি শ্রদ্ধা্ও জানানো হয়। বেকেনবাওয়ারকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন জার্মানির সাবেক মিডফিল্ডার ব্রেইটনার।

মেয়েদের ‘দ্য বেস্ট’ কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইংল্যান্ড নারী দলের ডাচ কোচ সারিনা ভাইগমান। সিটির হয়ে ট্রেবলজয়ী ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এদেরসনের হাতে উঠেছে ছেলেদের ‘দ্য বেস্ট’ গোলকিপারের পুরস্কার। সংক্ষিপ্ত তালিকায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মরক্কো ও আল হিলালের গোলকিপার ইয়াসিন বুনু এবং রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া।ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার মেরি আর্পস টানা দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন মেয়েদের ‘দ্য বেস্ট’ গোলকিপারের ট্রফি।

এদেরসন জিতেছেন ছেলেদের ‘দ্য বেস্ট’ গোলকিপার পুরস্কার

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালি অবস্থানের জন্য ফিফা ফেয়ারপ্লে পুরস্কার পেয়েছে ব্রাজিল ছেলেদের জাতীয় দল। রবার্তো কার্লোস ও রোনালদোদের নিয়ে ট্রফিটি নিয়েছেন ব্রাজিলেরই বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি কাফু।

আর্জেন্টিনার ক্লাব কোলনের সমর্থক হুগো দানিয়েল ইনিগুয়েজ জিতেছেন ফিফা ফ্যান পুরস্কার।গত বছর আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে বারাকাস-কোলন ম্যাচে নিজের বাচ্চা শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ম্যাচ দেখছিলেন তিনি। মঞ্চে ওঠার পর তাঁর বাচ্চা অবশ্য কেঁদে দিয়েছে।

সন্তান কোলে মঞ্চে হুগো দানিয়েল ইনিগুয়েজ

অনুষ্ঠানের মাঝে এক ফাঁকে অঁরি জানান, আগামী বছর থেকে মেয়েদের ফুটবলে সেরা গোলের পুরস্কারের নাম হবে ‘মার্তা অ্যা্ওয়ার্ড।’ ব্রাজিলের ‘স্কার্ট পরা পেলে’খ্যাত মার্তাকে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ ট্রফিও দেওয়া হয়। ট্রফিটি দেন ব্রাজিলের প্রয়াত কিংবদন্তি পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আইওকি। বোটাফোগো-এসপির হয়ে গত বছর ব্রাজিলের দ্বিতীয় বিভাগে বাইসাইকেল কিকে করা গিলের্মে মাদুরগার গোলটি পেয়েছে পুসকাস অ্যাওয়ার্ড।