বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। আজ কিংস অ্যারেনায় অনুশীলনে
বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। আজ কিংস অ্যারেনায়  অনুশীলনে

আত্মবিশ্বাস নিয়েই ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন জামালরা

কথা ছিল অনুশীলন হবে দেড় ঘণ্টার—বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। কিন্তু বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা অনুশীলনের জন্য একটু বাড়তি সময়ই ব্যয় করলেন। ‘বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ’ বলে কথা! ১২ অক্টোবর ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটিকে এমনভাবেই দেখছেন তিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি তাঁর কাছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচের পর যদিও ১৭ অক্টোবর ঢাকায় হোম ম্যাচে মাঠে নামবে দল। তবুও মালেতে অনুষ্ঠিত অ্যাওয়ে ম্যাচটির ওপর যে অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

হোম ও অ্যাওয়ে মিলিয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে এ দুটি ম্যাচের বৈতরণি পার হওয়ার ওপর আগামী দুই বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ফুটবলের গতি–প্রকৃতি কী হবে, সেটি বোঝা যাবে। যদিও এ ম্যাচের বাধা পেরোতে না পারলেও সুযোগ থাকছে আগামী সেপ্টেম্বরে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে খেলার। কিন্তু মালদ্বীপকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে খেলাটাই যে বাংলাদেশের লক্ষ্য। সেখানে ‘আই’ গ্রুপে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবানন। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের আগে বাংলাদেশ চাইবে যেকোনো মূল্যেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূলপর্বে জায়গা করে নিতে।

কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সেটিই চান। মালদ্বীপ রওনা হওয়ার আগে আজ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কাবরেরা তো বলেই দিলেন ‘এটি বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ’। জামাল ভূঁইয়ার কাছেও তাই–ই, ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে এই ম্যাচটা ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি। হ্যাঁ, এটা আমাদের জন্য এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া

গত জুনে সাফ ফুটবলে ১৪ বছর পর সেমিফাইনাল খেলা, সেখানে মালদ্বীপ, ভুটানকে হারানো; লেবাননের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সবচেয়ে বড় কথা, সেমিফাইনালে কুয়েতের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে জিতে যাওয়ার মতো খেলা—কাবরেরার অধীনে ভালো কিছুর প্রত্যাশাটা তৈরি হয়ে গিয়েছে আগেই। সেই সঙ্গে গত মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিংস অ্যারেনার দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচেও দল ভালো খেলেছে। হাংজু এশিয়াডেও অনূর্ধ্ব–২৩ দল ভারত, মিয়ানমার আর চীনের বিপক্ষে মন্দ করেনি। ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে ন্যূনতম ব্যবধানে হারলেও শেষ ম্যাচে চীনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করাটা আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনূর্ধ্ব–২৩ দল হলেও এশিয়াড থেকে যে জাতীয় দলের জন্য ভালোই রসদ খুঁজে পেয়েছেন কোচ কাবরেরা।

মালদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচটা যেখানে আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে যাওয়ার কথা। সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাটা অসম্ভব কিছু নয়। এএফসি কাপে খেলতে গিয়ে বসুন্ধরা কিংসের পাঁচ ফুটবলারের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা জাতীয় দলকে বড় ধাক্কাই দিয়েছে। পাঁচ ফুটবলারের তিনজনই যে কাবরেরার মালদ্বীপ–অভিযানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিলেন। সেই ঘটনায় বসুন্ধরা গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো, ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, ফরোয়ার্ড শেখ মোরছালিন, রিমন হোসেন ও তৌহিদুল আলম সবুজ নিষিদ্ধ করার ধাক্কাটা লেগেছে জাতীয় দলের গায়েও। কাবরেরাও দলে নেননি ‘গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়’ তপু বর্মণ, শেখ মোরছালিন ও আনিসুর রহমান জিকোকে

মালদ্বীপ যাওয়ার আগে বাংলাদেশ ফুটবল দলের গ্রুপ ছবি

আজ সংবাদ সম্মেলনে সেটি নিয়ে আলোচনাটা অনুমিতই ছিল। কাবরেরা বললেন, ‘এটা ঠিক, তাদের নিয়ে গত জুন ও সেপ্টেম্বরে আমরা ভালো করেছি। কিন্তু দিনের শেষে আমরা তো একটা দল। আমাদের আরও খেলোয়াড়েরা আছে। তারা যে সুযোগটা পেয়েছে, সেটা কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ঘটনাটি যেন দলের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না রাখতে পারে।’

কয়েক মাস ধরেই আমরা ভালো খেলছি। সাফে মালদ্বীপকে হারিয়েছি। লেবানন, কুয়েতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়েছি। গত মাসে আফগানিস্তানের ম্যাচে প্রমাণ করেছি, আমাদের চেয়ে শক্তি–সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গেও আমরা লড়তে জানি। আমরা আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকেই মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি
হাভিয়ের কাবরেরা, বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ

মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট কঠিন—এটা জানেন কোচও। তার ওপর মালের মাঠে বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। চারটি ম্যাচ খেলে ড্র মাত্র একটিতে, সেটিও ২৩ বছর আগে, ২০০০ সালে মালদ্বীপের গোল্ডেন জুবিলি টুর্নামেন্টে। এই মালেতে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫–০ গোলে হারের অভানীয় রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। কাবরেরার অধীনেই মালেতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। হেরেছে ২০২১ সাফের ম্যাচেও। যদিও মালদ্বীপের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে, সেটি বেঙ্গালুরুর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৩–১ গোলে। ১২ অক্টোবরের ম্যাচটিকে নিয়ে কাবরেরার ভাবনা তারপরেও ইতিবাচকই, ‘ইতিহাস আমাদের বিপক্ষে। আমরা মালেতে জিততে পারিনি। মালদ্বীপ অবশ্যই কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু এ ম্যাচ থেকে আমরা ইতিবাচক ফলই চাই। মালের ম্যাচটির পর ঢাকার হোম ম্যাচে জিতে আমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূল পর্বে খেলতে চাই। আমি নিশ্চিত আমার দলের খেলোয়াড়েরা যেহেতু ম্যাচের গুরুত্বটা বোঝে, তাই তারা নিজেদের সেরাটা দিয়েই খেলবে।’

কাবরেরার মতে, মালদ্বীপে দল সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে যাচ্ছে, ‘কয়েক মাস ধরেই আমরা ভালো খেলছি। সাফে মালদ্বীপকে হারিয়েছি। লেবানন, কুয়েতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়েছি। গত মাসে আফগানিস্তানের ম্যাচে প্রমাণ করেছি, আমাদের চেয়ে শক্তি–সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গেও আমরা লড়তে জানি। আমরা আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকেই মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি।’