সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে এখনই ‘বিদায়’ বলছেন অনেকে। কিন্তু রবার্তো মার্তিনেজ আপাতত তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। পর্তুগালের এই কোচের মতে, জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেননি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। হামবুর্গে গতকাল রাতে ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে হেরে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল। এ ম্যাচই পর্তুগালের হয়ে ৩৯ বছর বয়সী রোনালদোর শেষ ম্যাচ—‘আগেভাগে’ই এমন কিছু ভেবে নিতে নিষেধ করলেন পর্তুগাল কোচ মার্তিনেজ।
নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ব্যবধানে সমতায় ছিল ফ্রান্স ও পর্তুগাল। অতিরিক্ত সময়ে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করা রোনালদো অবশ্য পর্তুগালের হয়ে টাইব্রেকারে প্রথম শটে লক্ষ্যভেদ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মার্তিনেজের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পর্তুগালের হয়ে এটাই রোনালদোর শেষ ম্যাচ কি না? পর্তুগাল কোচ বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই এটা নিয়ে কথা বলাটা একটু আগেভাগেই হয়ে যায় এবং ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
পর্তুগালের হয়ে ২১২ ম্যাচে ১৩০ গোল করেছেন রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর বেশি গোল কেউ করতে পারেননি, বেশি ম্যাচও কেউ খেলেনি। তবে জার্মানিতে এবার ইউরোয় নিজের হারানো সময় ফিরিয়ে আনতে পারেননি রোনালদো। টাইব্রেকার ছাড়া লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। বড় মাপের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এবারই প্রথম গোলহীন থেকেই বিদায় নিলেন রোনালদো। শুধু কি তা–ই, ইউরোয় এক আসরে সর্বোচ্চসংখ্যক শট নিয়েও গোল না পাওয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে যৌথভাবে ভাগও বসিয়েছেন রোনালদো। ১০টি শট নিয়ে একটি গোলও পাননি। ২০১৬ ইউরো এমন কেটেছিল বেলজিয়ামের মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনার।
পর্তুগালের হয়ে ২০১৬ ইউরোজয়ী রোনালদো এখন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তখন তাঁর বয়স হবে ৪১ বছর। তবে রোনালদোর ক্যারিয়ারে এটাই যে শেষ ইউরো, তা তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। শেষ ষোলোয় স্লোভেনিয়াকে হারানোর পর রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ইউরো খেলতে আসা রোনালদো বলেছিলেন এবারই শেষ, ‘কোনো সন্দেহ নেই অবশ্যই এটাই শেষ (ইউরো। তবে আবেগ ছুঁয়ে যাচ্ছে না। ফুটবলের সবকিছুই আমাকে প্রভাবিত করে। খেলাটির প্রতি এখনো আমার যে উৎসাহ, দর্শকের আগ্রহ, পরিবারকে পাওয়া, লোকজনের ভালোবাসা...ব্যাপারটা আসলে ফুটবল–বিশ্ব ছেড়ে যাওয়া নয়। আমার জেতার বা করার জন্য আর কীই-বা বাকি আছে?’
ফ্রান্সের কাছে পর্তুগালের হারের পর রোনালদোর হাত জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ পেপে। রোনালদো নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁকে কী বলেছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে টিভি চ্যানেল ক্যানাল ১১–কে পেপে বলেছেন, ‘আমি এটা জনসমক্ষে বলব না। তবে আমরা কষ্টটা টের পাচ্ছি। অনেকে যা ভাবছে তার বিপরীত। ম্যাচটি জিততে না পারার হতাশা পোড়াচ্ছে আমাদের। দলে অনেক ভালো প্রতিভা আছে জানার পরও এমন বড় একটি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে, এ কষ্টই আমাদের পোড়াচ্ছে।’
পর্তুগাল জাতীয় দলে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ৪১ বছর বয়সী পেপে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাব। এখন কথা বলতে চাই না। কারণ, লোকে তাহলে প্রক্রিয়া ভুলে আগামীকাল আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবে।’
রোনালদো পর্তুগালের হয়ে ৯ ম্যাচে গোলবঞ্চিত। তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেছেন অতিরিক্ত সময়ে। ফ্রান্সিসকো কনসেইকাওয়ের কাট ব্যাক পেয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। সুবর্ণ সুযোগ বুঝেও গোল করতে পারেননি। ক্রসবারের ওপর দিয়ে মেরেছেন।