২০০৭ সালে এসি মিলানের তিনটি শিরোপা জয়ে (উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ) বড় অবদান রেখে ব্যালন ডি’অর জিতে নিয়েছিলেন কাকা। এরপর প্রায় ১৭ বছর হতে চললেও আর কোনো ব্রাজিলিয়ান ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কি ব্রাজিলের এই খরা কাটাতে পারবেন?
এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন ভিনিসিয়ুস। রিয়াল মাদ্রিদের এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এখন পর্যন্ত ৩৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৩ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১১টি। রিয়ালকে স্প্যানিশ সুপার কাপ ও লা লিগার চ্যাম্পিয়ন বানাতেও বড় ভূমিকা রেখেছেন। দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তুলতেও সাহায্য করেছেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ করে ব্রাজিলের হয়ে খেলবেন কোপা আমেরিকা। ক্লাবের পর জাতীয় দলকেও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সেরা বানাতে পারলে এ বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তবে ভিনিসিয়ুসের কাছে এ মুহূর্তে ব্যালন ডি’অর নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লন্ডনে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আগামীকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল এবার ১৫তম ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরার অপেক্ষায়।
শিরোপা লড়াইয়ের আগে ভিনিসিয়ুস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় অর্জনই বড়, ‘ব্যালন ডি’অর জয় নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। এই মৌসুমে আমার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা।’
চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফির স্বাদ একবার পাওয়া হয়ে গেছে ভিনির। প্যারিসে ২০২২ সালের ফাইনালে তাঁর গোলেই লিভারপুলকে হারিয়েছিল রিয়াল। আগামীকাল রাতে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেও কি স্কোরলাইন একই চান কিংবা জয়সূচক গোলটা তিনিই করতে চান—এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘অবশ্যই। তবে গোলটা যে কেউ করলেই চলবে।’
একসময় প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করায় ভিনিসিয়ুসকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসাহাসি হতো। তবে কার্লো আনচেলত্তি ২০২১ সালে রিয়ালের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরুর পর বদলে যেতে থাকেন ভিনি। গত ৩ বছরে তাঁর খেলায়, বিশেষ করে গোল–দক্ষতায় অনেক দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে।
পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে। আনচেলত্তি আসার আগের ৩ মৌসুমে মাত্র ১৪ গোল করেছিলেন ভিনি, আনচেলত্তি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩ মৌসুমেরও কম সময়ে গোল করেছেন ৬৮টি। গোল করানোর ক্ষেত্রেও দারুণ উন্নতি করেছেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। আনচেলত্তি–পূর্ব সময়ে অ্যাসিস্টের সংখ্যা ছিল ২৩টি, আনচেলত্তির সময়ে ৫৩টি।
শুধু কি তাই? জুড বেলিংহাম রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর আক্রমণভাগে আরও স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। বেলিংহাম আসার আগে বেশির ভাগ ম্যাচ খেলতেন লেফট উইঙ্গার হিসেবে। ইদানীং প্রায়ই তাঁকে সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
নতুন পজিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগলেও নিজের উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্ট ভিনি, ‘এখন আমি আরও অনেক পজিশনে খেলতে পারি এবং এভাবেই আমি আমার খেলাকে আগের তুলনায় ভালো করে তুলেছি। কোচ (আনচেলত্তি) আমাকে যা যা বলেন, সবকিছুতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ, তিনিই আমার খেলা বদলে দিয়েছেন।’
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দিয়েই ক্লাব ফুটবলকে বিদায় বলে দেবেন রিয়ালের জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুস। এরপর ঘরের মাঠে ইউরো খেলে সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরে যাবেন। মাঠে কীভাবে শান্ত থাকতে হয় এবং খেলার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে হয়, তা ক্রুসকে দেখেই শিখেছেন ভিনিসিয়ুস। বিদায়ী সতীর্থকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে বিকশিত করতে চাই, যেমনটা টনি ক্রুস করছেন।’
গত দুই মৌসুম স্পেনের বেশ কয়েকটি ভেন্যুতে ভিনিকে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়েছে। বর্ণবাদ নিয়ে এই ব্রাজিলিয়ান তারকা প্রতিবাদ শুরুর পর অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়ান। স্পেনের আদালতে বর্ণবৈষম্যমূলক অপরাধে জড়িত কয়েকজনের বিচারও শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ভিনিসিয়ুস বলেছেন, ‘এটা (বর্ণবাদ) এমন কিছু, যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তবে আমি সব সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করি।’
সৌভাগ্যবশত সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ করতে দেখা যায়নি। ফুটবলার ভিনির আরও বিকশিত হতে পারার অন্যতম কারণ হতে পারে এটিও।