নেপালে গত বছর সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এরপর থেকে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না সাবিনা খাতুনরা। গত মাসে সিঙ্গাপুরের মাটিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও সেটি হয়নি স্বাগতিকেরা মানা করে দেওয়ায়। এখন ৫ এপ্রিল থেকে মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বেও খেলা হচ্ছে না মেয়েদের। কারণ হিসেবে বাফুফে বলছে আর্থিক সংকটের কথা।
মিয়ানমারে কেন দল পাঠানো হচ্ছে না—এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বাফুফে। আজ সেটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানাতেই তড়িঘড়ি করে বাফুফে ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের। সেখানে নিজের অসহায়ত্বের কথাই তুলে ধরেছেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘মিয়ানমারে আমি দল পাঠাতে পারিনি। কারণ, অর্থনৈতিক সংকট। এটা সত্যি। এটাই একমাত্র কারণ।’ এ সময় সালাউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন বাফুফে নারী ফুটবল উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার।
যেহেতু অলিম্পিকের টুর্নামেন্ট, তাই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) অর্থ জোগাড় করবে, এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি, ‘এই যে দলটি যায়নি, এখানে একটা ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। অলিম্পিক যখন জানিয়েছে, তখন আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ওখান থেকে সমর্থন পাব। কিন্তু শাহেদের (বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা) সঙ্গে আলাপ করার পর সে বলল টাকা দিতে পারবে না। এরপর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে গেলাম। ওরা বলেছে টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই মন্ত্রণালয়ের। দুই–চারটি স্পনসরের সঙ্গেও আলাপ করলাম। কেউই বিষয়টা ইতিবাচকভাবে নিল না। এ জন্য আমি খেলতে যাওয়াটা বাতিল করে দিলাম। এ ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।’
কাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, জাতীয় দল খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘আমাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করা হয়েছিল। ওনারা দুটো বিষয় জানতে চান। প্রথমত বলেছেন কত টাকা লাগবে এখনই তা জানাতে। আমাকে ধমক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সালাউদ্দিন, আমাকে কেন বলোনি?” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কত টাকা লাগবে নিয়ে যাও।’
তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে পাঠানো সম্ভব নয়। দল প্রত্যাহার করার চিঠি এএফসিকে পাঠানোর কারণে সেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এএফসি। তাই নিজের ভুল স্বীকার করেছেন সালাউদ্দিন, ‘আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) আমি জানাইনি, এটা আমার ভুল। দ্বিতীয়ত, এখন আপনি টাকা দিলেও ওদের পাঠাতে পারব না। অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
গত ডিসেম্বর মাস থেকেই সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দারা নিয়মিত বেতন পান না। এরই জেরে গত মাসে ফুটবলাররা অনুশীলন বন্ধ রেখেছিলেন তিন দিন। এভাবে অনুশীলন বন্ধ করায় হতাশ কাজী সালাউদ্দিন, ‘ওরা কিছু দাবি জানিয়েছিল, যেগুলো যৌক্তিক। বেতন ৫ গুণ বাড়াতে বলেছে। ম্যাচ ফি ও বোনাস দিতে বলেছে। খাবারের মান উন্নত করতে বলেছে। কিন্তু এসব পায়নি বলে ওরা ট্রেনিং বন্ধ করে দিল। ওরা অনুশীলন বন্ধ করায় যে কষ্ট পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। একজন প্রফেশনাল ফুটবলার হিসেবে যা–ই করেছি, কখনো ট্রেনিং বন্ধ করিনি।’
জাতীয় পুরুষ দলের র্যাঙ্কিংয়ের অবনতি, পারফরম্যান্সের বাজে অবস্থা—এসব কারণে ফুটবল ফেডারেশনকে কেউ টাকা দিতে চায় না বলে জানালেন তিনি, ‘সত্যি বলছি, আমার এক কোটি টাকা জোগাড় করার ক্ষমতা নেই এখন। কুয়া থেকে পানি তুলতে তুলতে পানিও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমাকে কেউ এখন আর টাকা দিতে চায় না। কারণ, আমার সুনাম নেই। আমাদের সুনামের চেয়ে বদনাম বেশি। এ জন্য কেউ টাকা দেয় না।’
নারী ফুটবল লিগের স্পনসর বাবদ বসুন্ধরা কিংস দিয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ঢাকা ব্যাংক বছরে দেয় ১ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু এই টাকায় ক্যাম্প চালানো সম্ভব নয় বললেন সালাউদ্দিন, ‘ওরা যা দেয়, তাতে খাবারের খরচও হয় না। বাইরে থেকে আরও দেড়–দুই কোটি টাকা লাগে আমাদের।’