সিগনাল ইদুনা পার্ক থেকে একটু আগে যে হলুদ উৎসব পুরো ডর্টমুন্ড শহরে ছড়িয়ে পড়েছে, তা আজ রাতভর চলার কথা। জার্মানির সবচেয়ে আবেগপ্রবণ সমর্থক হিসেবে পরিচিত বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড ইয়োলো আর্মি’ যেটার নেতৃত্বে।
সমর্থকদের এই উদ্যাপন আজ বাঁধনহারা হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। তাদের প্রিয় দল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড যে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখেছে। আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় আগের লেগে ২–১ ব্যবধানে হেরে আসা ডর্টমুন্ড আজ নিজেদের ডেরা সিগনাল ইদুনা পার্কে ৭০ মিনিট পর্যন্তও ২–২ সমতায় ছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় দলটিকে তখন চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। কারণ, সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে হলে শেষ ২০ মিনিটে দরকার আরও ২ গোল। ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে নিতে হলেও একটি গোল করতেই হতো।
এমন স্নায়ুচাপকে সঙ্গী করেই ৭১ মিনিটে ডর্টমুন্ডকে এগিয়ে দিলেন নিকলাস ফুলক্রুগ। মুহূর্তেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া দলটি ৩ মিনিট পরেই পেল আরেক গোল। এবার ত্রাতার ভূমিকায় মার্সেল সাবিৎজার। বাকিটা সময় ব্যবধানটা ধরে রেখে ডর্টমুন্ড ম্যাচ জিতল ৪–২ ব্যবধানে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫–৪ অগ্রগামিতায় আতলেতিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। সেখানে ডর্টমুন্ডের প্রতিপক্ষ পিএসজি।
এর আগে ২০১২–১৩ মৌসুমে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। সে সময় দলটির কোচ ছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ।
শক্তিশালী রক্ষণভাগের জন্য সুনাম কুড়ানো আতলেতিকো আজ নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে মাত্র দ্বিতীয়বার ৪ গোল হজম করল। দলটি সর্বশেষ ৪ গোল খেয়েছিল ২০১৪ সালের ফাইনালে, নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে।
প্রথম লেগে ২–১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় ঘরের মাঠে আজ গোলের বিকল্প ছিল না ডর্টমুন্ডের। তবে আতলেতিকোর রক্ষণভাগকে প্রথম আধঘণ্টা দমিয়ে রাখতে পারেনি স্বাগতিকেরা।
৩৪ মিনিটে এসে ডর্টমুন্ডকে আর আটকে রাখা যায়নি। ম্যাচের নায়ক সাবিৎজারের কাছ থেকে বল পেয়ে জার্মান ক্লাবটিকে এগিয়ে দেন ইউলিয়ান ব্রান্ড। বিরতিতে যাওয়ার আগেই ব্যবধান ২–০ করে ফেলেন ইয়ান মাটসেন। এবারও গোলের জোগানদাতা সাবিৎজার।
দুই লেগ মিলিয়ে ৩–২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ায় বিরতির পর কৌশলে বদল আনেন আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনে। আলভারো মোরাতা, নাহুয়েল মলিনা ও সিজার আজপিলিকুয়েতাকে তুলে নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামান তিন বদলি আনহেল কোরেয়া, পাবলো বারিয়োস ও রদ্রিগো রিকেলমিকে।
সেটার সুফলও পায় আতলেতিকো। ৬৪ মিনিটে কোরেয়ার গোলেই ২–২ সমতা আনে মাদ্রিদের ক্লাবটি, সেই সঙ্গে দুই লেগে মিলিয়ে ৪–৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এর আগে আতলেতিকোর কাজটা সহজ করে দেন ম্যাটস হামেলস। ৪৯ মিনিটে জার্মানির এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের আত্মঘাতী গোলেই ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পেয়ে যায় সিমিওনের দল।
কিন্তু ৭১ মিনিটে ফরোয়ার্ড ফুলক্রুগ গোল করলে সিগনাল ইদুনা পার্কে যেন প্রাণ ফিরে আসে। ম্যাচে ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া আর সমষ্টিগতভাবে ৪–৪–এ সমতা আসতেই ডর্টমুন্ড খেলোয়াড়ের শরীরি ভাষাও বদলে যায়। দলটি এরপর আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে।
৩ মিনিট পরেই আসে কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত। ফুলক্রুগের পাস থেকে আতলেতিকোর জাল কাঁপান সেই সাবিৎজার, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে ২৮ ম্যাচ পর তাঁর প্রথম গোল। অস্ট্রিয়ান এই মিডফিল্ডারের গোলেই স্বপ্নের সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় ডর্টমুন্ড। আর তিনি বনে যান দলের ত্রাতা।
এই গোলের আগে সাবিৎজার যে দুটি গোলে বলের জোগান দিয়েছিলেন, তা ২৭ বছর পর ডর্টমুন্ডের কোনো খেলোয়াড়ের নকআউট পর্বে জোড়া অ্যাসিস্টের ঘটনা। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ফাইনালে দুটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন আন্দ্রেয়াস মোলার। ওই ম্যাচে জুভেন্টাসকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ডর্টমুন্ডই। জার্মান ক্লাবটি নিশ্চয় এবার ’৯৭ ফেরাতে চাইবে!