ইউনাইটেডের হয়ে দারুণ ছন্দে আছেন কাসেমিরো
ইউনাইটেডের হয়ে দারুণ ছন্দে আছেন কাসেমিরো

কাসেমিরো নাকি ‘বুড়ো’, তা এখন কী বলবেন?

একটু পেছনে ফেরা যাক, গত বছরের আগস্টের কথা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শুরুর দিকে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এমন একটা বিপর্যয়ের পর যা হওয়ার কথা, সেটাই হয়। ইউনাইটেড সমর্থকেরা ধরেই নেন, দুঃস্বপ্নের আরেকটি মৌসুম অপেক্ষা করছে তাঁদের সামনে। ঠিক সে সময়েই নিজের এজেন্টকে দিয়ে ইউনাইটেডের কাছে একটি বার্তা পাঠান কাসেমিরো, ‘তাদের বলো, আমি এই সমস্যা ঠিক করে দেব।’

তাঁর বার্তাটি যে নিছক কথার কথা ছিল না, তিনি যে এটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেছিলেন, সেই প্রমাণ কাসেমিরো এখন প্রায় প্রতি ম্যাচেই দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গতকাল রাতে এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে রিডিংয়ের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে অনবদ্য নৈপুণ্য দেখিয়ে জোড়া গোল করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। আরেক ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ আন্তোনিও পাস থেকে লক্ষ্যভেদের ৪ মিনিট পর কাসেমিরো দ্বিতীয় গোলটি করেন ৩০ গজ দূর থেকে দৃষ্টিনন্দন এক শটে।

ম্যানচেস্টারের ফ্লাইট ধরার আগেই রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজেকে সময়ের সেরা রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কাসেমিরো। ২০১৩ সালে রিয়ালের জার্সিতে অভিষেক। মাঝে এক মৌসুম ধারে পোর্তোতে খেলে এসেছেন। তবে রিয়ালে থিতু হওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। রিয়ালের হয়ে তিনটি লিগ ও পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। তবে রিয়ালে নিজের গল্পটাকে আর লম্বা করতে চাননি কাসেমিরো। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এরিক টেন হাগের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে আসেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে।

ইউনাইটেডে কাসেমিরোর আসা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে অনেক। অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইংলিশ ফুটবলের গতির সঙ্গে কাসেমিরো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না। কেউ কেউ আবার বলেই দিয়েছিলেন, ৩০ পেরোনো একজন ‘বুড়ো’ খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়ে বড় ভুল করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড। অনেক ইউনাইটেড সমর্থকও তাঁকে দলে টানার বিষয়টি সে সময় মানতে পারেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর দলবদল নিয়ে বিরতিহীন বিতর্কও হয়েছিল।

গতকাল রাতে এফএ কাপের ম্যাচে কাসেমিরো করেছেন জোড়া গোল

টেন হাগের অবশ্যই এমন কিছু মনে হয়নি। হলে তো আর কাসেমিরোকে দলে পেতে এমন ব্যাকুল হয়ে উঠতেন না। কাসেমিরোর ক্ষেত্রে দলবদলে সাম্প্রতিক প্রবণতার পথেই হেঁটেছিলেন টেন হাগ। কোনো খেলোয়াড়কে নেওয়ার সময় বর্তমানে দলগুলো তাৎক্ষণিক সাফল্যের ওপর জোর দিচ্ছে।

তরুণদের কিনে এনে দল গড়ায় যে সময় একজন কোচের প্রয়োজন, ক্লাবগুলো এখন আর কোচদের তা দিতে চাইছে না। কয়েক ম্যাচে ব্যর্থ হলেই যেখানে শোনা যায় ছাঁটাইয়ের গুঞ্জন, এই ঝুঁকি কোচরাই বা নিতে যাবেন কেন! এ কারণেই গত কয়েক মৌসুমে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন ক্লাবের কোচরা। যেখানে পরীক্ষিত খেলোয়াড়েরা দলকে এনে দিচ্ছেন তাৎক্ষণিক সাফল্য। আর এই প্রক্রিয়ার সার্থক উদাহরণ কাসেমিরো।

যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাসেমিরোকে টেন হাগ দলে নিয়েছিলেন, মাঠের খেলায় তা রূপান্তরিত হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। মাত্র কয়েক ম্যাচ খেলেই ইউনাইটেডের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন কাসেমিরো। নড়বড়ে ইউনাইটেড রক্ষণকে সুরক্ষা তো দিচ্ছেনই, ভূমিকা রাখছেন আক্রমণেও।

এই দুটোর যোগসূত্র হয়ে থাকার কাজটা তো করছেনই। এখানেই শেষ নয়। গোল করানোর পাশাপাশি গোল করছেন নিজেও। মাঠে তাঁর উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির পার্থক্যটাও টের পাওয়া যাচ্ছে পরিষ্কার। কার্ডের খাঁড়ায় কাটা পড়ে লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি। সেই ম্যাচে ইউনাইটেডের পরাজয় আরও বেশি করে বুঝিয়ে দেয় কাসেমিরোর মহিমা।

কাসেমিরোর গোল উদ্‌যাপন

সেই ম্যাচের আগপর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল কাসেমিরোর উপস্থিতিতে ইউনাইটেডে জয়ের হার যেখানে ৬৬.৭ শতাংশ, কাসেমিরো না থাকলে সেটি নেমে আসছে ৫৭.১ শতাংশে। এমনকি বল দখলেও তাই কাসেমিরোসহ ৫৪.৯ শতাংশ, তাঁকে ছাড়া ৪৮.৮ শতাংশ। গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর থাকা না-থাকার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। কাসেমিরো থাকলে ইউনাইটেড ম্যাচপ্রতি গোল লক্ষ্য করে শট নিচ্ছে ১৫টি, তাঁকে ছাড়া ১২.৪টি।

রিডিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের পর দলে কাসেমিরোর প্রভাব নিয়ে টেন হাগের মুখে যেন প্রশংসার খই ফুটছিল, ‘হ্যাঁ, আমরা জানি, সে অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠে টনি ক্রুস ও মদরিচের সঙ্গে মিলে সে কী করেছিল, তা–ও জানি। এটা দারুণ ব্যাপার! কাসেমিরো অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। ব্যাকলাইনের সামনে তাঁর জায়গা নেওয়ার ক্ষমতা দুর্দান্ত। বলকেও সে দারুণভাবে সামলাতে পারে। সঠিক পাস দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনন্য। খেলার গতি বাড়ানোর সঙ্গে দলের প্রয়োজনে সে গোলও করতে পারে।’

কাসেমিরোর এমন পারফরম্যান্স সমালোচকদের জন্যও বড় জবাব। যেসব সমর্থক তাঁকে কেনায় অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁদের ভুল যেমন ভেঙেছে, তেমনি অনেক ফুটবলবোদ্ধাও স্বীকার করে নিয়েছেন নিজেদের ভুল। কদিন আগে নিজের ভুল স্বীকার করে চেলসির সাবেক স্ট্রাইকার টনি কাসকারিনো যেমন বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, তার পেছনে অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি ভুল বলেছিলাম।’