শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মেয়েদের
শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মেয়েদের

নেপালকে হারিয়ে আবারও বাংলাদেশের মেয়েদের শিরোপা–উৎসব

ছয় মাসের ব্যবধানে নেপালকে হারিয়ে আরেকবার শিরোপা উৎসবে মেতে উঠল বাংলাদেশের মেয়েরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েদের জাতীয় দল। আজ অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফেও নেপালের হৃদয় ভেঙে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন শামসুন্নাহার-শাহেদা আক্তাররা।

কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। একটি করে গোল করেছেন শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার ও উন্নতি খাতুন। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার।

ফাইনাল দেখতে মাঠে এসেছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ম্যাচের বিরতিতে প্রেস বক্সে এসে সালাউদ্দিন আক্ষেপ করে বললেন, ‘এই ফাইনালটা কেন আগামীকাল হলো না, তা নিয়ে আমি ওদের (সাফের আয়োজকদের) সঙ্গে রাগারাগি করেছি। আগামীকাল হয়তো এর চেয়েও বেশি দর্শক হতো।’

তারপরও সন্ধ্যাটা রাঙিয়ে নিতে কমলাপুরে দর্শকদের উৎসবের কমতি ছিল না। স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল অস্থায়ী টিকিট বিক্রেতার ভিড়। জাতীয় পতাকা নিয়ে খেলা দেখতে গ্যালারিতে আসা দর্শকদের মুখে ছিল ভুভুজেলা। একটু পরপর মুঠোফোন জ্বালিয়ে দর্শকেরা তৈরি করেন আলোর মিছিল। প্রায় হাজার ছয়েক দর্শক সারাক্ষণ স্টেডিয়াম মাতিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত খুশি মনেই বাড়ি যেতে পেরেছে।

শিরোপা জয়ের উদ্‌যাপনটা এভাবেই করেছেন শামসুন্নাহাররা

গ্রুপপর্বে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালের কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং সেই হারের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন আজ। কিন্তু সেই সুযোগ আর দিলেন কোথায় উন্নতি, শামসুন্নাহাররা? কমলাপুর স্টেডিয়ামে সর্বশেষ ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পর আবারও একই ভেন্যুতে শিরোপার উৎসব বাংলাদেশের মেয়েদের। বয়সভিত্তিক সাফের প্রতিটি আসরেই ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ আটটি টুর্নামেন্টের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন চারটিতেই।

বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী আজ শুরুর একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন। উন্নতি খাতুনের জায়গায় নামিয়েছেন সোহাগী কিসকুকে। আর আইরিন খাতুনের বদলে জায়গা পেয়েছেন মাহফুজা খাতুন। ম্যাচের শুরু থেকেই একচেটিয়া খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। শুধু অপেক্ষায় ছিল একটি গোলের। কখনো শামসুন্নাহার, কখনো শাহেদা আক্তার বক্সে ঢুকে দারুণভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রথম গোলটি করা শাহেদা আক্তারকে নিয়ে শামসুন্নাহারের উচ্ছ্বাস। পরে গোল করেছেন তিনিও

বাংলাদেশের আক্রমণভাগের ত্রয়ীর অন্যতম অস্ত্র আকলিমাকে তো সারাক্ষণ কড়া পাহারায় রাখেন নেপালের তিন ডিফেন্ডার। তারপরও ১৮ মিনিটে গোলের দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলেন আকলিমা। শাহেদার পাস থেকে পাওয়া বলে প্রথম চেষ্টায় শট নিতে পারেননি। একটু সময় নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত দুর্বল শট নেপালের গোলরক্ষক কবিতা বিকে দ্বিতীয় চেষ্টায় ধরেন।

নেপালের বিপক্ষে গোল পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪১ মিনিট পর্যন্ত। নেপালের ডিফেন্ডার কুমারির তামাংয়ের ভুলের সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগান শাহেদা আক্তার। কুমারি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন শাহেদার পায়ে। বক্সের বাইরে থেকে শাহেদা এরপর দুর্দান্ত এক বাকানো শটে বল পাঠান জালে। শাহেদার শট ঠেকানোর সামর্থ্য বলতে গেলে কমই ছিল কবিতার!

বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলটি করেছেন শামসুন্নাহার

বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে বাংলাদেশকে আরেকবার আনন্দে ভাসিয়েছেন দলের প্রাণভোমরা শামসুন্নাহার। মাঝমাঠ থেকে আফঈদা খন্দকারের লং বল নেপালের ডিফেন্ডার প্রতীক্ষা চৌধুরী ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। সেই বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন শামসুন্নাহার, এরপর ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষককে কাটিয়ে করেন ২-০।

গোল শোধে মরিয়া নেপাল অবশ্য দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিল ৫০ মিনিটে। কিন্তু প্রথম দফায় ফাঁকা পোস্টেও সুনকালা রায় গোল করতে পারেননি!

৮০ মিনিটে বক্সের মধ্যে নেপালের আমিশা কারকির দুর্দান্ত শট কর্নারের বিনিময়ে সেভ করেন তিনি। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে নেপালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন উন্নতি। শাহেদার ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল উন্নতির গায়ে লেগে দিক বদলে ঢোকে জালে (৩-০)।