সৌদি আরব সফরে ছেলের সঙ্গে মেসি
সৌদি আরব সফরে ছেলের সঙ্গে মেসি

মেসি-সৌদি আরব চুক্তিতে যা আছে

লিওনেল মেসি সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের ডাকে সাড়া দেননি। পিএসজি ছাড়ার পর নতুন ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিকে। তবে সৌদি আরবের ফুটবলে জড়িত না হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠই বলা চলে। সৌদি আরবের সঙ্গে তাঁর পর্যটনদূতের চুক্তিও বলছে সে কথাই।

মেসি সৌদি আরবের পর্যটনদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ—এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু চুক্তিটা কত দিনের, সৌদি আরব মেসিকে কী পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে আর চুক্তির অংশ হিসেবে মেসিকে কী কী করতে হবে, এসবই গোপন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস মেসি-সৌদি আরব চুক্তির নথি হাতে পেয়েছে। সেখানে এই চুক্তির যে অঙ্কের কথা উল্লেখ আছে, তা খুব বেশি নয়। বিশেষ করে আল হিলালে খেলার জন্য মেসিকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তার তুলনায় কমই।

তবে পারিশ্রমিকের মতো এই চুক্তির অধীনে মেসির দায়িত্বও খুব বেশি নয়—কয়েকটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু পোস্ট এবং পরিবার নিয়ে দেশটিতে অবকাশযাপন। চুক্তিতে সৌদি আরবের দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সম্মানহানি করে—এমন কোনো মন্তব্য মেসি করতে পারবেন না।

সৌদি আরবে গত জানুয়ারিতে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন মেসি। ছবিটি তখন তোলা

মেসির সৌদি আরবের পর্যটনদূত হওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় গত মে মাসের শুরুর দিকে। সে সময় পিএসজি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সপরিবার সৌদিতে বেড়াতে যান মেসি। এ ঘটনায় পিএসজি তাঁকে দুই সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দেয়, যদিও পরে সেটি কমিয়ে আনা হয়। সৌদি থেকে প্যারিসে ফিরে পিএসজি, এর সমর্থক ও সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি ভিডিও বার্তা দেন মেসি, যেখানে এই সফর এড়ানোর সুযোগ ছিল না বলে উল্লেখ করেছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছেই একটি চিঠি লিখে দেশটিতে না যেতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মেসি। সে সময় বার্সেলোনায় ছিলেন মেসি। সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিবকে লেখা চিঠিতে বার্সেলোনা-রিয়াল বেতিস ম্যাচের কারণে না যেতে পারার কথা উল্লেখ করা হয়। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই পর্যটনদূতের চুক্তিটি কার্যকর হয়।

মে মাসের প্রথম দিকে সপরিবারে সৌদি আরবে যান মেসি

চুক্তি অনুসারে তিন বছরের বেশি সময়ে আড়াই কোটি মার্কিন ডলারের মতো পাবেন মেসি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। মেসির ব্যবস্থাপক দল ও সৌদি কর্তৃপক্ষের চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেন সাবেক ফুটবলার ও ব্যবসায়ী রায়কো গার্সিয়া ক্যাবরেরা। নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে আলাপে মেসি-সৌদি চুক্তির অর্থের অঙ্ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমাকে দেওয়া অর্থের তুলনায় ‘খুবই কম’ উল্লেখ করেন তিনি। সঙ্গে যোগ করেন, ‘মেসি বড় অঙ্কের অর্থ না চাওয়ায় আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।’

মেসি-সৌদি আরব চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয়

* বছরে ন্যূনতম একবার পাঁচ দিনের পারিবারিক সফর করতে হবে অথবা তিন দিনের দুটি সফর করতে হবে। এই সফরের ভ্রমণ ব্যয় ও পাঁচ তারকা হোটেলের আবাসনব্যবস্থার খরচ দেবে সৌদি সরকার। মেসির সঙ্গে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে সর্বোচ্চ ২০ জনের খরচ বহন করবে সৌদি আরব। এর বিনিময়ে দেওয়া হবে প্রায় ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বছরে ১০ বার সৌদি আরবের প্রচারণা চালাতে হবে, এটা অবকাশ যাপনকেন্দ্রিক প্রচারণার চেয়ে আলাদা থাকবে। বিনিময়ে দেওয়া হবে ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
* সৌদি আরবে বার্ষিক পর্যটন প্রচারণায় অংশগ্রহণের জন্য দেওয়া হবে আরও ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
* দাতব্য কাজ ও সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হবে ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

সপরিবারে সৌদি আরবে ঘুরে বেড়িয়েছেন মেসি

এ ছাড়া সৌদি আরবের প্রচারণাসংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে দেশটির অনুমোদন করা হ্যাশট্যাগের কথাও বলা হয়েছে চুক্তিতে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মেসি-সৌদি আরব চুক্তির বিষয়ে সরাসরি অবগত—এমন একজনের কাছ থেকে নথিটি পাওয়া গেছে। তবে ২০২১ সালের ১ জুন দেওয়া নথিটির পর নতুন কোনো চুক্তি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয় মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি। নথিতে মেসি এবং তাঁর ভাই ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপক রদ্রিগোর সই আছে। যদিও সৌদি কর্মকর্তাদের কারও নাম ছিল না।