ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার রদ্রি
ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার রদ্রি

৩৬৮ দিন, ৫০০০ মিনিট, ৬১ ম্যাচ অপরাজিত রদ্রি

ফুটবল দলীয় খেলা। তাই দল সবকিছুর ঊর্ধ্বে কিংবা কোনো খেলোয়াড়ই দলের চেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নয়—কথাগুলো প্রায়ই শোনা যায়।

কিন্তু একটা দলকে তো কোনো না কোনো খেলোয়াড়ই জেতান। কখনো কখনো সেই খেলোয়াড় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন, মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে হয়ে ওঠেন দলের অপরিহার্য অংশ। তিনি দলে থাকলে কতটা প্রভাব ফেলেন, কীভাবে দুদলের মধ্যকার ব্যবধান গড়ে দেন; হয়তো তা বোঝা যায় না। কিন্তু না থাকলে তাঁর অভাব হাড়ে হড়ে টের পাওয়া যায়।   

বর্তমান সময়ে এমন একজন ফুটবলারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিতে গেলে রদ্রির নাম ওপরেই দিকেই থাকবে। ম্যানচেস্টার সিটির এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপরাজিত। মানে তিনি মাঠে নেমেছেন, এমন ম্যাচে হারেনি তাঁর দল! সর্বশেষ গত বছরের ২৮ মার্চ উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই পর্বের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ২–০ ব্যবধানে হেরেছিল স্পেন। সেদিনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি খেলেছেন, এমন ম্যাচে জাতীয় দল ও ক্লাব হয় জিতেছে নয়তো ড্র করেছে।

এ সময়ে রদ্রির পরিসংখ্যানটা চোখ কপালের তোলার মতোই। ৩৬৮ দিনে খেলেছেন ৬১ ম্যাচ। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি ও স্পেনের হয়ে জিতেছেন ৪৮ ম্যাচ, শতকরা হিসাবে ‘লেটার মার্কসের’ কাছাকাছি—৭৮.৬৯। বাকি ১৩ ম্যাচ ড্র করেছে তাঁর দল। এ সময়ে তিনি মাঠে ছিলেন ঠিক ৫০০০ মিনিট।

* এফএ কমিউনিটি শিল্ডে নির্ধারিত সময়ে আর্সেনালের সঙ্গে ১–১ সমতায় ছিল রদ্রির ম্যানচেস্টার সিটি। পরে টাইব্রেকারে হেরে যায় তাঁর দল

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলের সঙ্গে ৩–৩ গোলে ড্র করেছে স্পেন। ওই দিন পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল করেছেন রদ্রি। এ ম্যাচে মধ্য দিয়ে ১ বছর অপরাজিত থাকার কীর্তি গড়েছেন ২৭ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।

‘অজেয়’ থাকার অবিশ্বাস্য যাত্রাপথে রদ্রি জিতেছেন ছয়–ছয়টি শিরোপা। সিটির হয়ে ট্রেবল (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ) জয়ের পর উঁচিয়ে ধরেছেন উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি। স্পেনের হয়ে জিতেছেন উয়েফা নেশনস লিগ, যা ছিল দেশটির ১১ বছর পর প্রথম ট্রফির স্বাদ।

চ্যাম্পিয়নস লিগ আর নেশনস লিগের ফাইনাল হয়েছিল মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে। এত কম সময়ে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দুটি মহাদেশীয় শিরোপা জয়ে সতীর্থ আইমেরিক লাপোর্তের সঙ্গে যৌথ কীর্তি তো গড়েছেনই, একই বছরে উয়েফা আয়োজিত দুটি প্রতিযোগিতায় একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পাওয়ার অনন্য নজিরও গড়েছেন।

গত এক বছরের হিসাব বাদ দিয়ে শুধু ক্লাবকে বিবেচনায় নিলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন রদ্রি। গত ৩ মার্চ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় ম্যানচেস্টার সিটি।

প্রিমিয়ার লিগের এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫৯ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা রদ্রির দখলে

এর মধ্য দিয়ে তিনি সিটির হয়ে টানা ৫৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছেন, যা ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল চেলসির রিকার্দো কারভালিওর দখলে। পর্তুগালের সাবেক এই সেন্টার–ব্যাক ২০০৬ সালে নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চেলসির হয়ে টানা ৫৮ ম্যাচ অপরাজিত ছিলেন।

২০১৯ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদ ছেড়ে সিটিতে যোগ দেন রদ্রি। একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও সিটির জার্সিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ মৌসুমের চারটিতেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গোলে অবদান রেখেছেন। ইস্তাম্বুলে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফাইনালে তাঁর গোলেই পরম আরাধ্যের চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল সিটি।

এ মৌসুমেও ট্রেবল জয়ের দারুণ সম্ভাবনা আছে সিটির। দলটি এফএ কাপের সেমিফাইনালে ও চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে, প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট তালিকার তিনে থাকলেও শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্টের। এবারও দলকে শিরোপার দৌড়ে টিকিয়ে রাখতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন রদ্রি।

এ মৌসুমে তাঁর অনুপস্থিতিতে সিটি গুরুত্বপূর্ণ ৩টি লিগ ম্যাচ হেরে গেছে, তাঁকে ছাড়া খেলতে নেমে লিগ কাপ (কারাবাও কাপ নামে পরিচিত) থেকেও ছিটকে পড়েছে। ওই ম্যাচগুলোতে তিনি থাকলে ফল যে অন্যরকম হতেই পারত, তা তো ‘অজেয়’ থাকার রেকর্ডই বলে দিচ্ছে।

রদ্রির লক্ষ্য শুধু ট্রফি জেতা

সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা তো রদ্রিকে আর এমনি এমনি ‘অন্যদের চেয়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার’ বলেননি। কিন্তু ওই যে কথাটা প্রায়ই শোনা যায়, ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলীয় সাফল্যই বড়—রদ্রির কাছেও ব্যাপারটা ঠিক তাই।

গত সপ্তাহে প্রীতি ম্যাচে রদ্রিকে ছাড়া খেলতে নেমে কলম্বিয়ার কাছে ১–০ ব্যবধানে হেরে যায় স্পেন। ওই ম্যাচের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘এতটা লম্বা সময় ধরে অপরাজিত থাকা আমার জন্য গর্বের। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের পিছু ছুটি না। যদি এটা দলকে ম্যাচ ও ট্রফি জেতাতে সহায়তা করে, তাহলে বড় ব্যাপার। এটা এমন কিছু, যা নিয়ে আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে ডিনারে বসে আলোচনা করতে পারেন। সত্যি বলতে আমার লক্ষ্য ও আমি যার পেছনে ছুটি, তা হলো ট্রফি।’