পুরস্কারের ভারে রীতিমতো নুয়ে পড়ছিলেন মোসাম্মাৎ সাগরিকা। দেশের নারী ফুটবলের হালের চমক। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর আজ সাগরিকার হাতে তুলে দেওয়া হলো দুটি পুরস্কার—টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ফাইনালে যোগ করা সময়ে তাঁর গোলেই সমতা ফিরিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর সেই মহানাটক। ম্যাচ কমিশনারের টস-কাণ্ড, এক দলের মাঠ ছেড়ে যাওয়া ও আরেক দলের বসে থাকা মিলিয়ে উত্তেজনা, অচলাবস্থা, এরপর বাংলাদেশ ও ভারত দুই দলকেই যুগ্ম বিজয়ী ঘোষণা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও সাগরিকার পারফরম্যান্সের মাহাত্ম্য এতটুকু কমেনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে এসে তিনিই বড় তারকা। আজ বাফুফে ভবনে বাংলাদেশ দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যুগ্ম শিরোপার ট্রফি তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলের হাতে। সেই সঙ্গে সাগরিকার হাতে তুলে দেওয়া হয় সেরা খেলোয়াড় আর সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার। কিন্তু এ অনুষ্ঠানেও সব আলো কেড়ে নিলেন ওই সাগরিকাই।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও সাগরিকা সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতির কথা জেনেছেন গতকাল। আজ সেই স্বীকৃতির স্মারক হাতে নিয়ে নিজের সাম্প্রতিক অতীত আর বর্তমানের দিকে ফিরে চাইলেন সাগরিকা, ‘সাফ শুরুর আগের সাগরিকা আর পরের সাগরিকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আগে কেউই আমাকে চিনত না, জানত না, এখন সবাই চেনে।’
‘অচেনা’ থেকে ‘চেনা’ হয়ে ওঠার পরিবর্তনের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাগরিকা বলেন, ‘মানুষ এখন চিনতে পারে, আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকায়, একটু যেন কেমন-কেমন লাগে। ব্যাপারটাতে আমি অভ্যস্ত নই। একটু লজ্জাই লাগে।’
বাবা লিটন আলী আর মা আনজুয়া বেগম ঠাকুরগাঁও থেকে সাফের ফাইনাল দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন। সেদিন সাগরিকা জানতেনই না যে তাঁর বাবা-মা এসেছেন। ফাইনাল শেষে তাঁদের দেখতে পেয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলেন। ফাইনাল শেষে বাবা-মাকে হঠাৎ দেখে অনুভূতিটা ছিল স্বপ্নের মতো, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল স্বপ্ন। বাবা-মা আমার খেলা দেখতে এসেছেন। তাঁদের দোয়া আর শুভ কামনাতেই বোধ হয় ফাইনালের গোলটা করতে পেরেছিলাম, এটা আমার বিশ্বাস।’
সাফের সেরা খেলোয়াড় আর সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার খবরটি বাবা-মা জানেন কি না, বলতে পারলেন না সাগরিকা, ‘তাঁরা জানেন কি না, বলতে পারব না। কথা হয়নি। তবে বাবা সেদিনই বলেছিলেন, “তুই সেরা প্লেয়ার হতে পারিস”। বাবার কথা সে সময় ঠিক বিশ্বাস হয়নি। ফোন দিয়ে জানাব ট্রফি পাওয়ার কথা। তাঁরা নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন।’
সাগরিকার সামনে লক্ষ্যটা অনেক বড়, ‘অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ পেরিয়ে আমার লক্ষ্য বাংলাদেশ জাতীয় দল। জানি, সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন। আমার পজিশনে সাবিনা আপু, শামসুন্নাহার আপুরা আছেন। দলে আছেন সানজিদা আপু। আমাদের জাতীয় দল খুবই ভালো। সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছাড়া জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। আমাকে এখন প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে।’