লিওনেল মেসির আগমন উপলক্ষে ফুটবলীয় উন্মাদনায় জেগে উঠেছিল হংকং। মেসিকে একনজর দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন হংকংবাসী। গতকাল মেসির খেলা দেখতে হংকং স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছিলেন ৩৮ হাজারের বেশি দর্শক। মেসির খেলা দেখতে টিকিটপ্রতি তাঁরা গড়ে ন্যূনতম ১২৫ ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা) বেশি খরচ করেছিলেন।
তবে এই অপেক্ষা শেষ পর্যন্ত হতাশায় পরিণত হয়। যাঁর জন্য এত আয়োজন, সেই মেসিকে মাঠেই নামাননি ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণেই মূলত মাঠে নামা হয়নি মেসির। ৪–১ গোলে মায়ামির জেতা ম্যাচে তিনি বেঞ্চে বসে ছিলেন।
তবে মাঠে উপস্থিত দর্শকেরা মেসির খেলা দেখতে না পাওয়ার হতাশা গোপন করেননি। টিকিটের মূল্য ফেরত চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ‘রিফান্ড’ বলে দুয়োও দেন দর্শকেরা। এমনকি ম্যাচের পর মায়ামির অন্যতম মালিক ডেভিড বেকহামকেও শুনতে হয় দুয়ো। পরিস্থিতি আরেকটু জটিল হয়েছে মেসিকে নিয়ে হংকংয়ের ক্রীড়ামন্ত্রী কেভিন ইয়েউংয়ের মন্তব্যে। তাঁর দাবি, হংকং লিগ একাদশের বিপক্ষে প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতির এই ম্যাচে মেসি অন্তত ৪৫ মিনিট খেলবেন বলে চুক্তি হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কেভিন জানিয়েছেন, ম্যাচটির সঙ্গে যেসব সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বারবার মেসির খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তাঁরা মেসির চোটের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। কেভিন বলেছেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্য উপায় বের করার অনুরোধ করি। যেমন মাঠে নেমে সমর্থকদের সঙ্গে মেসির ভাব আদান–প্রদান এবং ট্রফি গ্রহণ করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আপনারা সবাই দেখেছেন যে এমনটা হয়নি।’
কেভিন এরপর চুক্তির প্রসঙ্গটি টেনেছেন, ‘আয়োজক ট্যাটলার এশিয়ার সঙ্গে আমাদের অর্থায়নের চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল ফিটনেস এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে ম্যাচে মেসি অন্তত ৪৫ মিনিট খেলবেন। আমরা এখনো কোনো টাকা দিইনি। সামনের সপ্তাহগুলোতে আমরা আয়োজক ট্যাটলার এশিয়ার সঙ্গে আরও যোগাযোগ করব। পুরো ইভেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা কথা বলব।
স্পনসরশিপের বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করব, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেব।’ মেসির না খেলা ‘চরম হতাশা’র বলে বিবৃতি দিয়েছে এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজক ট্যাটলার এশিয়াও, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ছাড়া (মেসির) না খেলার বিষয়ে আমরা কোনো তথ্য পাইনি।’
কয়েক ঘণ্টা পরই অবশ্য ট্যাটলার এশিয়ার প্রধান নির্বাহী মাইকেল লামুনিয়েরে এক বিবৃতিতে সরকারি অনুদানের অর্থ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ১ কোটি ৬০ লাখ হংকং ডলার সরকারি অনুদানের আবেদনটা প্রত্যাহার করব।’
এর আগে আল নাসরের বিপক্ষে ৬–০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া ম্যাচের ৮৩ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। সে ম্যাচের পর চোটাক্রান্ত মেসির হংকং একাদশের বিপক্ষে খেলা না খেলা নিয়েও ছিল নানা গুঞ্জন। তবে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মায়ামি কোচ মার্তিনো জানান, মেসির এই ম্যাচে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত।
তবে সর্বশেষ অনুশীলনে মেসির অবস্থা পর্যালোচনা করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর মাঠে নামা হয়নি আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। ম্যাচ শেষে অবশ্য মেসিকে না নামানোয় দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মায়ামি কোচ মার্তিনো।