সংবাদ সম্মেলনে দুই কোচ ও অধিনায়ক
সংবাদ সম্মেলনে দুই কোচ ও অধিনায়ক

এএফসি কাপ

ঢাকায় দুই বাংলার ফুটবল মহারণ

এএফসি কাপে তিনবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। প্রথমবার মালেতে ১-১ গোলে ড্র। দ্বিতীয়বার কলকাতায় ৪-০ গোলে হার। সর্বশেষ কদিন আগে ওডিশার মাঠে ২-২ গোলে ড্র। আগামীকাল রাত আটটায় দুই দল চতুর্থবারের মতো মুখোমুখি হতে চলেছে। এবারও এএফসি কাপেই। তবে এবার ম্যাচটা বসুন্ধরা কিংসের মাঠে। তাই কিংস জয়ও আশা করছে এবং চাইছে পুরোনো হিসাব চুকাতে।

গ্রুপে সেরার লড়াই থাকতে জয়ের বিকল্পও নেই কিংসের। প্রথম তিন ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট ৭, কিংসের ৪। কাজেই এই ম্যাচ হারলে কিংসের পক্ষে গ্রুপসেরা হয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার আশা শেষই হয়ে যাবে। ফলে কিংসের জন্য এই ম্যাচ বাঁচা–মরার লড়াই। কিন্তু মোহনবাগানের আক্রমণভাগ যেমন শক্তিশালী তাতে তাদের থামানো কঠিনই।

তবে কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন তাকিয়ে আছেন সামনে। আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেছেন, ‘এটা গ্রুপে আমাদের চতুর্থ ম্যাচ। গ্রুপটা এখনো উন্মুক্ত। আমরা মোহনবাগানে শক্তি সম্পর্কে জানি। ওরা বড় ক্লাব। আইএসএল এবং এএফসি কাপে এগিয়ে আছে। আমরাও সামনে তাকাচ্ছি। ঘরের মাঠে অবশ্যই ইতিবাচক ফল চাই।’

ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুবিধা নিতে চায় কিংস। ব্রুজোন সেটাই বলেছেন আলাদাভাবে, ‘মোহনবাগানের সঙ্গে গত ম্যাচে আমরা ড্র করেছি। কাল ঘরের মাঠে খেলার কারণে আমরা সুবিধা পাব। মোহনবাগান দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্লাব। তবে কালকের ম্যাচ নিয়ে আমরা আশাবাদী।’

অনুশীলনে বসুন্ধরার খেলোয়াড়েরা

এবার এএফসি কাপে ৩ ম্যাচ ৫ গোল করে ৭ গোল খেয়েছে কিংস। নিষিদ্ধ থাকায় দলে নেই গোলকিপার আনিসুর, ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। এ কারণে রক্ষণ নিয়ে চিন্তা থাকছেই। গোল খাওয়া কীভাবে কমাবেন—এমন প্রশ্ন ব্রুজোন বলেন, ‘গত তিন ম্যাচেই আমরা গোল খেয়েছি। এ ম্যাচে গোল খাওয়া চলবে না। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। ভুল করা চলবে না। আমাদের ১১ জনকেই ডিফেন্ডার হতে হবে।’

কিংস কোচ আক্রমণাত্মকই ফুটবলই চাইছেন দলের কাছে, ‘আমাদের পরিকল্পনা হলো আক্রমণাত্মক খেলা। আমরা গোল করতে চাই, জিততে চাই। ফুটবলে গুরুত্বপূর্ণ হলো আক্রমণে। কাল ড্র মোহনবাগানের জন্য ভালো ফল। কিন্তু আমাদের অবস্থা ভিন্ন। আমাদের জিততে হবে।’

কিন্তু মোহনবাগান ধারেভারে এগিয়ে। দুই দলের ফুটবলারদের মানের দিক থেকেও বাগান বেশি নম্বর পাবে। দলটির মূল শক্তি দুই অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড দিমিত্রি আর গত বিশ্বকাপে খেলা জেসন কামিন্স। কামিন্স দলের মূল স্ট্রাইকার। দিমিত্রি থাকেন তাঁর পেছনে। ফরোয়ার্ডে আছেন সাহাল আবদুল সামাদ ও হুগো বুমোসও। এই খেলোয়াড়দের নিয়ে মোহনবাগানের শক্তি আক্রমণভাগ।

মাঝমাঠও শক্তিশালী। আছেন লিস্টন কোলাসো। এই মুহূর্তে ভারতের জাতীয় দলের সবচেয়ে বেশি ফুটবলার খেলছে মোহনবাগানে। তাঁদের মধ্যে আছেন অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার শুভাশিস বোস, আনোয়ার আলী, আশিস রাই, ফরোয়ার্ড সাহাল আবদুল সামাদ, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড অনিরুদ থাপা, উইংয়ে মানবীর সিং। চোটের কারণে অবশ্য আসতে পারেননি আনোয়ার আলী।

মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো অবশ্য তা নিয়ে চিন্তিত নন। বরং জিততে মরিয়াই তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৩ পয়েন্ট পেতে আমরা নিজেদের সেরাটাই দেব। জানি, কঠিন ম্যাচ হবে। বসুন্ধরা বাংলাদেশের সেরা দল। তাদের হারানো সহজ নয়। গ্রুপে এখন আমরা ৩ পয়েন্ট এগিয়ে। কিংসের সঙ্গে আগে জিতেছি। তবে আগে কী হয়েছে, সেটা দেখে লাভ নেই। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।’

অনুশীলনে মোহনবাগান

আগে এএফসি কাপে চারজন বিদেশি খেলতে পারতেন, এখন ছয়জন। এ কারণে আগের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানকে মেলাতে চান না মোহনবাগান কোচ। বরং বসুন্ধরার প্রতি সম্মান দেখালেন। বললেন, ‘বসুন্ধরা বিদেশিরা বেশ ভালো, মানসম্মত।’
কিংস এই মাঠে ঘরোয়া বা আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতাতেই হারেনি। আর এটিই এই ম্যাচে কিংসের বড় শক্তি। সেটা উল্লেখ করে মোহনবাগান কোচ বলেন, ‘কিংসের মাঠে প্রথম খেলছি আমরা। কঠিন হবে জেতা। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য হলো জেতা।’
দুই বাংলার ম্যাচ। কিংস সমর্থন পাবে দর্শকদের। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বোস বলেন, ‘এ ধরনের ম্যাচে আমরা অভ্যস্ত। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ কতই হয়। অ্যাওয়ে ম্যাচে জানি প্রতিপক্ষ সমর্থন পাবে। তবে আমরা ইতিবাচক। অবশ্যই সেরাটা চেষ্টা করব।’

দুই বাংলার সবকিছুতেই অনেকটা মিল আছে। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে মোহনবাগানের বাঙালি অধিনায়ক বলেন, ‘৯০ মিনিটের ম্যাচ। দুই বাংলার ম্যাচ। এটা অ্যাওয়ে ম্যাচ আমাদের। আমরা ইতিবাচকই আছি।’ এই ফাঁকে অনিবার্য প্রশ্নটাও হলো। ইলিশ মাছ খেয়েছেন কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ইলিশ খেয়েছি।’ ছোট্ট করে হাসি মুখে বললেন মোহনবাগান অধিনায়ক।

এএফসি কাপেই মোহনবাগান সর্বশেষ ঢাকায় খেলেছে ২০১৭ সালের জুনে। সেবার ঢাকায় ১-১ ড্র করেছে তারা আবাহনীর সঙ্গে। এবার কী? উত্তর মিলবে আগামীকাল ম্যাচ শেষে।