বল দখলের লড়াইয়ে মোহামেডানের মোজাফফরভ ও আবাহনীর ব্রুনো। আজ ময়মনসিংহে
বল দখলের লড়াইয়ে মোহামেডানের মোজাফফরভ ও আবাহনীর ব্রুনো। আজ ময়মনসিংহে

দুই পেনাল্টি গোলে আবাহনীর সঙ্গে ড্র মোহামেডানের

মোহামেডান ২ : ২ আবাহনী

ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে খুব বেশি দর্শক ছিল না। দর্শকের কথা বলে লাভ নেই, দেশের ঘরোয়া ফুটবলে দর্শক–খরা নতুন কিছু নয়। কিন্তু দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী আর মোহামেডানের ম্যাচ হবে আর উত্তেজনা থাকবে না, নাটকীয় কিছু ঘটবে না—এটা হয় নাকি!

আজ ময়মনসিংহেও নাটক হলো। মাঠে উত্তেজনা ছড়াল। ২–০ গোলে পিছিয়ে পড়েও অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই পেনাল্টি পেয়ে ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র করল মোহামেডান। পেনাল্টির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লালকার্ড দেখলেন আবাহনীর ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। এ ড্রয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানটা ধরে রাখল সাদাকালো শিবির।

ম্যাচটা মন্দ হয়নি। শুরুতেই ব্রাজিলিয়ান ব্রুনো গনজালভেসের দারুণ এক ফ্রি কিক গোল এগিয়ে দেয় আবাহনীকে। পিছিয়ে পড়ে হতোদ্যম হয়নি মোহামেডান। একের পর এক আক্রমণে উঠেছে। গোলের সুযোগও তৈরি করেছে। কিন্তু গোলটাই হচ্ছিল না।

১১ মিনিটে উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরভের দারুণ এক ফ্রি কিক আবাহনীর গোলকিপার পাপ্পু হোসেন কোনোমতে ফিরিয়ে দেন। ১৭ মিনিটে মেহেদী হাসানের ক্রস থেকে মিনহাজুর রহমান রাকিবের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর আগে অবশ্য ডানপ্রান্ত দিয়ে আরিফের দারুণ একটা ক্রস কাউকে খুঁজে পায়নি। জায়গামতো কেউ থাকলে আরিফের ক্রসটিই সমতা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট হতো মোহামেডানের জন্য।

আবাহনীর দ্বিতীয় গোলটি করেন স্টুয়ার্ট

২৫ মিনিটে মোজাফফরভের আরেকটি ফ্রি কিক থেকে গোলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৩৮ মিনিটে মোজাফফরখের একটি দূর পাল্লার শট পাপ্পু ফিস্ট করে বাঁচান। গোলের জন্য মরিয়া মোহামেডান প্রথমার্ধের শেষ দশ মিনিট আবাহনীকে রীতিমতো কোণঠাসা করে রেখেছিল। বিশেষ করে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল আবাহনীর ওপর। এ সময় সুলেমান দিয়াবাতে, ইমানুয়েল সানডে, আরিফ—এই তিন জনের শট পরপর প্রতিহত হয় আবাহনীর রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ও গোলকিপার পাপ্পুর দৃঢ়তায়।

দারুণ আক্রমণাত্মক খেলে প্রথমার্ধ শেষ করা মোহামেডান দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও আক্রমণে ঝাঁপিয়েছিল। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতেই দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যায় আবাহনী। ডানপ্রান্ত থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়াশিংটনের ক্রস দারুণভাবে কাজে লাগান সেন্ট ভিনসেন্টের ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট।

খেলা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোহামেডান তা হতে দেয়নি। আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ২–০ ব্যবধানে আবাহনীর বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ২–২ গোলে ড্র করেছিল। সেই ঘটনা হয়তো জানা ছিল মোহামেডান ফুটবলারদের। তাই কখনোই দলটা খেলার লাগাম ছেড়ে দেয়নি। এর ফলও মোহামেডান পেয়ে যায় ম্যাচের ৬৫ মিনিটে। বক্সের মধ্যে ইমানুয়েল সানডেকে আবাহনীর এক ডিফেন্ডার ফাউল করলে পেনাল্টি পেয়ে যায় মোহামেডান। তা থেকে গোল করেন মালির স্ট্রাইকার দিয়াবাতে।

মোহামেডানের গোল উদ্‌যাপন

২–১ স্কোরলাইনে ম্যাচ যেকোনো দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এ সময় আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে খেলাও জমে উঠেছিল। তবে মোহামেডানের রক্ষণভাগ ভালোই দৃঢ়তা দেখিয়েছে। ওয়াশিংটন, কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট কিংবা ব্রুনোদের আক্রমণগুলো তারা ভালোই সামলেছে। বরং আবাহনীর রক্ষণকেই কিছুটা এলোমেলো মনে হচ্ছিল। ৭৮ মিনিটে মেহেদীর উড়ে আসা থ্রো ফেরাতে গিয়ে বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে বসেন ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ। আরেকটি একটি পেনাল্টি পেয়ে যায় মোহামেডান। সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ।

তবে এই পেনাল্টি সহজে মেনে নেয়নি আবাহনীর খেলোয়াড় ও ডাগআউটে থাকা কর্মকর্তারা। রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ওই সময় বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রেফারির সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে লালকার্ড দেখেন আবাহনীর ম্যানেজার নজরুল। আবাহনীর ফুটবলাররা তখন মাঠ ছাড়তে উদ্যত হন। বেশ কিছুক্ষণ খেলাও বন্ধ থাকে। পরে অবশ্য খেলায় ফেরে তারা। দিয়াবাতে কাজে লাগান সেই পেনাল্টি। ২–২ হয়ে যায় স্কোরলাইন।

বাকি সময় খেলাটা হয়েছে আবাহনী–মোহামেডানের মতোই। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মর্যাদার লড়াই কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়েছিল পুরোনো সেই দিন। গ্যালারিতে জড়ো হওয়া দুই দলের অল্প সংখ্যক দর্শকের তুমুল চিৎকারই খেলাটাকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

যোগ করা সময় ৮ মিনিটে গড়ায়। উত্তেজনার রেশ রয়ে যায় ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার মুহূর্ত পর্যন্ত। খেলার পর আবারও রেফারি, সহকারী রেফারিদের ঘিরে ধরে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন আবাহনীর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। উত্তেজনাকর বাক্য বিনিময়ও হতে থাকে। রেফারি ও সহকারী রেফারিদের মাঠ ছাড়তে হয় পুলিশি প্রহরায়। সেই পুরোনো দিনগুলোর মতোই!

মোহামেডান–আবাহনী ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

এ লড়াইয়ে কেউ না হারায় প্রিমিয়ার লিগে ৯ ম্যাচ শেষে আবাহনীর পয়েন্ট দাঁড়াল ১৫। সমানসংখ্যক ম্যাচে মোহামেডানের পয়েন্ট ১৭। লিগে দ্বিতীয়স্থানসহ অপরাজিত থাকার তকমাটা ধরে রেখেই প্রথম পর্ব শেষ করল সাদাকালো দল।