নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচটা ১-০ গোলে পিছিয়ে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কা তখন জেঁকে বসেছে। কিন্তু যোগ হওয়া ৬ মিনিটের শুরুতেই গোল শোধ করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে সাফ চ্যাম্পিয়নরা।
২৩ অক্টোবর গ্রুপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে ভারতের সঙ্গে ড্র করলেই চলবে বাংলাদেশের। এমনকি ২ গোলের বেশি ব্যবধানে না হারলেও বাংলাদেশ চলে যাবে সেমিফাইনালে। ভারতের কাছে পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে ৫-২ গোলে হারায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে কিছুটা।
শারীরিকভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের চেয়ে পাকিস্তানের মেয়েরা শক্তিশালী, উচ্চতায়ও এগিয়ে। পাকিস্তান দলে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা ছয়জন খেলোয়াড়। তাঁদেরই একজনের পা থেকে ৩২ মিনিটে পাকিস্তান এগিয়ে যায়। ভুলটা বাংলাদেশের রক্ষণভাগের। রক্ষণে আসা বল শিউলি আজিম থামালেও ক্লিয়ার করতে পারেননি। গোলকিপার রুপনা চাকমা অনেকটা এগিয়ে আসেন। এ সুযোগে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পাকিস্তানের ফরোয়ার্ড জাহমিনা সামিন মালিকের প্লেসিংয়ে গোল।
গোলটা ধরে রাখতে প্রাণপণ লড়েছে গোটা পাকিস্তান দল। পাঁচজন ডিফেন্ডারের সহায়তা দিয়েছেন বাকিরাও। লো ব্লক করে তাঁরা আটকেছেন বাংলাদেশর যাবতীয় আক্রমণ। অধিনায়ক ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম নেওয়া মারিয়া খান প্রায় প্রাচীরের মতো ছিলেন। গোলকিপার নিশা আশরাফ ছিলেন আস্থার প্রতীক।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না নিশা। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রসে জটলা থেকে হেডে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান শামসুন্নাহার জুনিয়র। ম্যাচজুড়ে ঋতুপর্ণার সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়রের বোঝাপড়া বেশ ভালোই লাগছিল। বাংলাদেশ দলকে উদ্ধারও করল এই দুজনের যুগলবন্দী।
গোল আসছে না দেখে ৬৯ মিনিটে সাবিনাকে তুলে কৃষ্ণা রানীকে, ৮০ মিনিটে তহুরা খাতুনের জায়গায় সাগরিকা, মনিকা চাকমার জায়গায় ৮২ মিনিটে মারিয়াকে নামান কোচ পিটার বাটলার। ম্যাচসেরা হয়েছেন মনিকা চাকমা। গোল করতে না পারলেও দারুণ খেলেছেন এই ফরোয়ার্ড।
বাংলাদেশ দল পুরো ম্যাচটা প্রায় একতরফা খেলেছে। সপ্তম মিনিটে ঋতুর বাঁ পায়ের ক্রসে শামসুন্নাহার হেড নিতে পারলে গোল হতে পারত। কিন্তু শামসুন্নাহার মাথায় বল ছোঁয়াতে পারেননি। দশম মিনিটে তহুরার বাড়ানো বলে ঋতুর ক্রসে হেড করতে ওঠেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। পাকিস্তান গোলকিপার নিশা আশরাফ ও অধিনায়ক মারিয়া খানের সঙ্গে সংঘর্ষে খেলা বন্ধ থাকে কয়েক মিনিট।
মারিয়া ও শামসুন্নাহার পরে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে নামেন মাঠে। ১৮ মিনিটে স্বপ্না রানীর শট আটকান পাকিস্তান গোলকিপার। পরের মিনিটেই বক্সের সামান্য বাইরে থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের নেওয়া শট বার উঁচিয়ে যায়। এর একটু পরই ঋতুর শটে পা লাগাতে ব্যর্থ হন তহুরা খাতুন।
গত সাফে ৬-০ গোলে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে এসএ গেমসে ১-০। আগের দুটি ম্যাচেই জিতলেও আজ ড্র করতে হলো পাকিস্তানের সঙ্গে। তাতে আক্ষেপ থাকতে পারে, তবে সাফে অন্তত টিকে থাকার স্বপ্নটা তো বেঁচে রইল। এ ম্যাচ দিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হয়েছে আফঈদা খন্দকার, কোহাতি কিসকুর। তাঁদের জন্য সন্ধ্যাটা হতাশার হতে হতেও শেষ পর্যন্ত স্বস্তি হয়েই এসেছে।
রুপনা চাকমা, আফঈদা খন্দকার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শিউলি আজিম, স্বপ্না রানী, মনিকা চাকমা (মারিয়া, ৮২ মিনিট), ঋতুপর্ণা, সাবিনা খাতুন (কৃঞ্চা রানী, ৬৯ মিনিট), তহুরা খাতুন (সাগরিকা, ৮০ মিনিট), শাসসুন্নাহার জুনিয়র, কোহাতি কিসকু।