কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে বায়ার্ন মিউনিখের জীবন্ত কিংবদন্তি। দলটির সাবেক খেলোয়াড় এবং প্রধান নির্বাহী হিসেবে মাঠ ও মাঠের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বায়ার্নের অনেক সাফল্যের রূপকারও রুমেনিগে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ-বায়ার্ন মিউনিখের সেমিফাইনাল ফিরতি লেগ ম্যাচ সামনে রেখে রুমেনিগে কথা বলেছেন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’-এর সঙ্গে। রিয়ালের বিপক্ষে বায়ার্নের সম্ভাবনা, হুমকিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জার্মান কিংবদন্তি।
মিউনিখে সেমিফাইনাল প্রথম লেগ ২-২ গোলের ড্রয়ে শেষ করেছে বায়ার্ন ও রিয়াল। এই ফল নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে রুমেনিগে বলেন, ‘দুই দলই খুবই ভালো ফুটবল খেলেছে। ২-১ ব্যবধানে জিতলে (বায়ার্ন) ভালো হতো। তবে স্বীকার করতে হবে যে মাদ্রিদও ভালো দল ছিল এবং ড্র তাদের প্রাপ্য।’
প্রথম লেগে আলোচিত হয় ভিনিসিয়ুসের করা প্রথম গোলে টনি ক্রুসের পাসটি। সেই পাস নিয়ে রুমেনিগের মত, ‘সত্যি বলতে কি, এটা আমাকে কিছুটা ভীত করেছে যে এত দূর থেকে সে এমন একটি পাস দিয়েছে, যা আমাদের পুরো ডিফেন্স পার হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। আর তারপর ছিল ভিনিসিয়ুস—আধা মিটার বেশি সুবিধা পেলেও যাকে থামানো খুবই কঠিন।’
সাম্প্রতিক সময়ে বায়ার্ন মিডফিল্ডার জামাল মুসিয়ালা বেশ ভালো খেলছেন। এ প্রসঙ্গে রুমেনিগে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, কিন্তু তাঁকে পা মাটিতে রাখতে হবে। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে তাঁকে নিয়ে অতিরিক্ত স্তুতি গাওয়া যাবে না। সৃষ্টিকর্তা তাকে অতিরিক্ত মেধা দিয়েছে, কিন্তু সে তার সেরা পর্যায়ে এখনো যেতে পারেনি। যদি আমরা এখনই তার গুণগান গাওয়া শুরু করি, তবে সেটা তার ক্ষতি করবে। কারণ, এটা করে কোনো লাভ হবে না। এর মধ্য দিয়ে আমরা যা অর্জন করব, সেসব প্রত্যাশা তৈরির মধ্য দিয়ে বিপরীতমুখী ফল নিয়ে আসবে।’
মুসিয়ালা যেমন বায়ার্নের ভবিষ্যৎ, তেমনি রিয়ালের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছে জুড বেলিংহামকে। ইংল্যান্ড তারকাকে নিয়ে রুমেনিগের ভাবনা এমন, ‘এই সাইনিংয়ের জন্য রিয়ালকে অভিনন্দন জানানো উচিত। সে গোল করে, অ্যাসিস্ট করে, দৌড়ায়, লড়াই করে এবং বলও উদ্ধার করে। সে সবকিছু ভালোভাবে করে।’
ফিরতি লেগ বায়ার্ন খেলবে রিয়ালের মাঠে। এমন পরিস্থিতিতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দলের কী করা উচিত, জানতে চাইলে সাবেক এই ফুটবলার বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। কারণ, আমি অনেকবার এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। সেটা যখন আমি খেলেছি, তখনো গিয়েছি, আবার যখন বোর্ড পরিচালক ছিলাম, তখনো দেখেছি। বার্নাব্যুতে টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন, কিন্তু সম্ভব। শেষ ষোলোয় লাইপজিগ দেখিয়েছে এবং আমার বন্ধু পেপ গার্দিওলাও দেখিয়েছে, চাইলে বার্নাব্যুতে মাদ্রিদকে সমস্যায় ফেলা যায়। যেটা আমাদের সাহায্য করবে, তা হলো অ্যাওয়েতে গোল করার সুবিধা না থাকা। আমরা ০-০ থেকেই শুরু করব। চ্যাম্পিয়নস লিগজুড়ে বায়ার্নের যে রূপটা দেখা গেছে, তার ওপর আমার আস্থা আছে।’
একসময় ইউরোপে রিয়ালের কঠিন প্রতিপক্ষ ভাবা হতো বায়ার্নকে। কিন্তু এখন স্পেনে সাধারণ মানুষের ভাবনা এমন যে ম্যানচেস্টার সিটিই বার্নাব্যুর ক্লাবটির মূল প্রতিপক্ষ। এই মতের বিরোধিতা করে রুমেনিগে বলেন, ‘সম্মানের সঙ্গেই বলছি, বায়ার্ন-রিয়ালই ইউরোপিয়ান ফুটবলের ক্ল্যাসিক। এটা আমি বলছি না, ইতিহাস বলছে। আমরা ২৭ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছি, যা প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি।’
বিষয়টি নিয়ে রুমেনিগে আরও বলেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল ক্লাব। মাদ্রিদের পরই দ্বিতীয় স্থানে বায়ার্ন। আমরা এতটাও খারাপ না। আমরা ২০১৩ ও ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বুধবার গত দশকের সবচেয়ে সফল দুটি দল একে অপরের মুখোমুখি হবে।’