বলা হচ্ছিল, এই ম্যাচটাই নাকি প্রিমিয়ার লিগের অলিখিত ‘ফাইনাল’। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের মধ্যে এ লড়াইয়ে যারা জিতবে, তারাই কার্যত এক হাত দিয়ে রাখবে প্রিমিয়ার লিগের ট্রফিতে।
তো সেই ফাইনালে আসলে ম্যানচেস্টার সিটি জিততে পারত ৮-০ গোলে। কেভিন ডি ব্রুইনা ও আর্লিং হলান্ডরা এতটাই দুর্দান্ত খেলেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে গোল মিসও করেছেন একের পর এক। ওদিকে দারুণ কিছু সেভ করেছেন আর্সেনালের গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেল ও ডিফেন্ডাররা। ফলে ৮-০ নয়, সিটি ম্যাচটা জিতল মাত্র ৪-১ গোলে। ডি ব্রুইনার জোড়া গোলের পাশাপাশি একটা করে গোল জন স্টোনস ও আর্লিং হলান্ডের। যাকে গোল করতে দেখে সিটি সমর্থকেরা বেশি অভ্যস্ত এই মৌসুমে, সেই হলান্ড এদিন করিয়েছেনও দুটি গোল। শেষ দিকে সিটি কিছুটা গা ছাড়া হয়ে যাওয়ার পর আার্সেনালের একমাত্র গোলটা রব হোল্ডিংয়ের।
এ হারের পরেও লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেই আছে আর্সেনাল, ৩৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৭৫। সিটি ওদের ঠিক পেছনেই আছে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে, তবে পেপ গার্দিওলার দল ম্যাচ খেলেছে আর্সেনালের চেয়ে দুটি কম। লিগের ট্রফিতে সিটি এক হাত দিয়ে রেখেছে, এটা এখন সম্ভবত বলাই যায়।
৬-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে পারত ম্যানচেস্টার সিটি। কেভিন ডি ব্রুইনার হ্যাটট্রিক হয়ে যাওয়ার কথা, সঙ্গে আর্লিং হলান্ডের জোড়া গোল, জন স্টোনসের এক গোল। কিন্তু এর বদলে যে সিটি মাত্র ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধটা শেষ করল, এর জন্য ভাগ্যকেই হয়তো দুষবে তারা। ডি ব্রুইনা মাত্র একটা গোল পেলেন, অন্যটা স্টোনস।
ডি ব্রুইনা-হলান্ডের একের পর এক আক্রমণ জানপ্রাণ দিয়ে ঠেকিয়েছেন আর্সেনালের ডিফেন্ডাররা, বিশেষ করে গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেল। নইলে হলান্ড-ডি ব্রুইনা জুটি যা শুরু করেছিলেন, মনে হচ্ছিল, সিটি আর্সেনালকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে নেমেছে।
ডি ব্রুইনার করা প্রথম গোলটাতে অবশ্য রামসডেলের কিছুটা দায় আছে। হলান্ডের পাস থেকে বল পেয়ে বেলজিয়ান প্লেমেকার কী দারুণভাবে কয়েকজনকে কাটিয়ে এগিয়ে গেছেন! রামসডেল হয়তো ভেবেছিলেন দূরের পোস্ট ঘেষে শট নেবেন ডি ব্রুইনা। কিন্তু শটটা গেল কাছের পোস্ট ঘেষে, রামসডেলের নাগাল দিয়েই। এ রকম ম্যাচে এভাবে গোল খেলে পুরো দল হতোদ্যম হয়ে পড়ার কথা।
সাধারণ হলান্ড গোল করেন, বানিয়ে দেন ডি ব্রুইনা। এদিন যেন শুরু থেকে উল্টো ভূমিকা নিয়েছিলেন দুজন। ৬ মিনিটে ডি ব্রুইনার ওই প্রথম গোলে হলান্ড যেভাবে আর্সেনাল ডিফেন্ডার হোল্ডিংকে ছাড়িয়ে পাস বাড়িয়েছেন, দেখার মতো। এরপরেও একে অন্যকে বেশ কয়েকবার দারুণ বল বানিয়ে দিয়েছেন। দুজনে মিলে অস্থির করে তুলেছিলেন আর্সেনালের রক্ষণভাগ। কিন্তু কখনো রামসডেল, কখনো বেন হোয়াইট বাঁচিয়ে দিয়েছেন আর্সেনালকে। এমন এমন সুযোগ ডি ব্রুইনা-হলান্ডরা মিস করেছেন, সেটাও অবিশ্বাস্য লেগেছে।
সিটির দ্বিতীয় গোলটা এসেছে প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে, কেভিন ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিক থেকে স্টোনসের হেডে। রেফারি অবশ্য প্রথমে অফসাইড ধরেছিলেন, পরে ভিএআর গোলের সিদ্ধান্ত দেয়, গর্জে উঠে ইতিহাদ স্টেডিয়াম।
বিরতির পরও নেমে ডি ব্রুইনা-হলান্ডের আতংক ছড়াতে থাকেন আর্সেনালের রক্ষণভাগে। হলান্ড তো রামসডেলকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হলেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। তবে এদিন যেন গোল করার চেয়ে করানোর দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। ৫৪ মিনিটে ডি ব্রুইনার পরের গোলটাও হলো তাঁরই পাস থেকে, ৩-০।
ম্যাচ আসলে ওখানেই শেষ। এই ম্যাচে এরপর আর্সেনাল ঘুরে দাঁড়াবে, অবিশ্বাস্য কিছু করে জেতা তো দূরে থাক ড্র অন্তত করতে পারবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণই ছিল না। গানারদের খেলায় সেই লক্ষণও ছিল না। তবে একেবারে শেষদিকে সিটি কিছুটা গা ছাড়া হয়ে পড়ে, সেই সুযোগে আর্সেনালের হয়ে ব্যবধান কমান হোল্ডিং। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। বরং যার গোল ছাড়া এই মৌসুমে সিটির জয় অসম্পূর্ন থেকে যায়, সেই হলান্ড যোগ হওয়া সময়ে পেয়ে যান নিজের কাঙ্খিত গোলটা। লিগে এই মৌসুমে যেটা তাঁর ৩৩তম গোল, সিটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলে ৪৯তম।