গোলের পর মার্কো আরনাউতোভিচের গর্জন
গোলের পর মার্কো আরনাউতোভিচের গর্জন

ধারে খেলতে আসা ফরোয়ার্ডের গোলে ‘ব্রেমার ম্যাচ’ জিতল ইন্টার

ইন্টার মিলান ১ : ০ আতলেতিকো মাদ্রিদ

২০১০ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হয়েছে মার্কো আরনাউতোভিচের। অথচ এই ১৪ বছরে আজ নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেলেন মোটে ৯ বার!

তবে আরনাউতোভিচের ছোটখাটো একটা রেকর্ড আছে। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় যেদিনই গোল পেয়েছেন, তাঁর দল হার এড়িয়ে মাঠ ছেড়েছে। সেই রেকর্ডটা আজ শুধু অটুটই রইল না, তাঁর গোলেই শেষ ষোলো পর্বের প্রথম লেগে আতলেতিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল ইন্টার মিলান।

অথচ ৩৪ বছর বয়সী আরনাউতোভিচ ইন্টারের ঠিক আপন কেউ নন! গত বছর সিরি ‘আ’–এর ক্লাব বোলোনিয়া থেকে ধারে খেলতে এসেছেন অস্ট্রিয়ান এই ফরোয়ার্ড। বলা যায়, দলে একেবারেই অনিয়মিত। এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ ম্যাচের মাত্র ৫টিতে ইন্টারের শুরুর একাদশে ছিলেন। আজও নেমেছেন বদলি হিসেবে।

সান সিরোতে ম্যাচ শুরুর আগে প্রয়াত আন্দ্রেয়াস ব্রেমাকে এভাবেই স্মরণ করে ইন্টার মিলান

মার্কাস থুরাম প্রথমার্ধের শেষ দিকে চোটে পড়ায় বিরতির পরপরই আরনাউতোভিচকে মাঠে নামান ইন্টার কোচ সিমোন ইনজাগি। তাঁর মাঠে নামা আর ৭৯ মিনিটে গোল করাটাই পরে হয়ে রইল ‘ব্রেমার ম্যাচের’ টার্নিং পয়েন্ট।

ব্রেমা মানে আন্দ্রেয়াস ব্রেমা—জার্মানির ১৯৯০ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, যিনি কাল হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। ২০ বছরের পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারে ব্রেমা চার মৌসুম ইন্টার মিলানে খেলেছেন। ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে সিরি ‘আ’, ইউরোপা লিগসহ জিতেছেন তিনটি শিরোপা।

ব্রেমার কী কপাল দেখুন! যেদিন ওপারে পাড়ি জমালেন, সে রাতেই খেলতে নামল তাঁর অন্যতম ক্লাব। সান সিরোতে আজ ম্যাচ শুরুর আগে জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই ব্রেমার ছবি ভেসে উঠতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন, এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন। সান সিরোর আবহ এমন হয়ে উঠল যেন তাঁর স্মরণেই ম্যাচটা আয়োজন করা হয়েছে। সে হিসেবে এটা তো ব্রেমারই ম্যাচ। তাঁর চলে যাওয়ার দিনে যে ম্যাচটা জয়ে স্মরণীয় করে রাখল ইন্টার মিলান।

প্রতিপক্ষের মাঠে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার যে অভ্যাস, তা থেকে আজও বের হয়নি আতলেতিকো। দিয়েগো সিমিওনের দল এতটাই রক্ষণাত্মক খেলেছে যে, পুরো ম্যাচে লক্ষ্যে কোনো শটই নিতে পারেনি।

তবে এ মৌসুমে দারুণ ছন্দে থাকা ইন্টার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছে। কিন্তু লাওতারো মার্তিনেজ, থুরামরা ‘ফিনিশিং টাচ’ দিতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ৩৭ মিনিটে নিকোলা বারেল্লার ক্রসে মার্তিনেজ দারুণ হেড নিলেও বল জমা হয় আতলেতিকো গোলকিপার ইয়ান ওবলাকের হাতে।

পরের মিনিটেই সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ইন্টার। রদ্রিগো দি পল ভুলবশত পাস দেন থুরামকে। থুরাম বল নিয়ে ছুটতে থাকেন আতলেতিকোর বক্সের দিকে। এরপর দারুণ পাস বাড়ান ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা মার্তিনেজকে। কিন্তু অ্যাক্সেল ভিটসেল মার্তিনেজের শট রুখে দেন। কিছুক্ষণ পর থুরামের শটও আটকে দেন ওবলাক।

জয়ের পর দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন ইন্টার মিলান ফুটবলাররা

বিরতির পর আতলেতিকোর হয়ে মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করা আলভারো মোরাতাকে নামান সিমিওনে। মোরাতা মাঠে নামার ২ মিনিট পরেই গোলের সুযোগ তৈরি করে মাদ্রিদের ক্লাবটি। দি পলের সঙ্গে বল দেওয়া–নেওয়া করার পর দুরূহ কোণ দিয়ে বাইরে শট নেন সামুয়েল লিনো।

৬৩ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন আরনাউতোভিচ। মার্তিনেজকে পাস দিয়ে নিজেই বক্সে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ফিরতি পাস পেয়ে বল উড়িয়ে মারেন।

অবশেষে ৭৯ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত গোল পায় ইন্টার। মার্তিনেজের নেওয়া শট এগিয়ে এসে ঠেকিয়ে দেন ওবলাক। ফিরতি বলে বাঁ পায়ে নিচু শট নেন আরনাউতোভিচ, গোললাইনে বল লিনোর পায়ে লেগে জড়ায় জালে। এই গোলেই নিস্তব্ধ সান সিরো যেন প্রাণ ফিরে পায়।

শেষ ষোলোর আরেক ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি আইন্দহফেনের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ১–১ গোলে ড্র করেছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। ম্যাচের ২৪ মিনিটে ডনিয়েল মালেন ডর্টমুন্ডকে এগিয়ে দেন। তবে সৌজন্যতা দেখিয়ে গোলটা তিনি উদ্‌যাপন করেননি। পিএসভি আইন্দহফেন যে তাঁর সাবেক ক্লাব!

এই গোলে নতুন এক রেকর্ডও গড়েছেন ২৫ বছর বয়সী মালেন। নেদারল্যান্ডসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে স্বদেশি ক্লাবের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে গোলের কীর্তি গড়েছেন তিনি। কিন্তু মালেনের গোলটা ডর্টমুন্ডকে জেতাতে পারেনি।

ম্যাটস হুমেলস বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে নিজেদের বক্সে ফাউল করে বসেন পিএসভির মালিক টিলম্যানকে। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

পেনাল্টি থেকে গোল করেন পিএসভি আইন্দহফেনের অধিনায়ক লুক ডি ইয়ং

ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়েরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে ভিএআরের সহায়তা নেন রেফারি। ভিএআর চেক করার পর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তিনি। ৫৬ মিনিটে সফল স্পট কিকে সমতা ফেরান আইন্দহফেন অধিনায়ক লুক ডি ইয়ং।