আনহেল দি মারিয়ার জীবন মোটেও পুষ্পশয্যা ছিল না। শৈশবে অস্বাভাবিক রকম চঞ্চল ছিলেন। চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। পরিবার সচ্ছল না হওয়ায় সে বয়সেই জীবনের ঘাত–প্রতিঘাত দেখে বড় হয়েছেন আর্জেন্টাইন এই উইঙ্গার। ফুটবলার হয়ে ওঠার পর অবশ্য আর্থিক অনিশ্চয়তা কেটেছে। তবে ফুটবলার হয়ে ওঠার পরই জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা পেয়েছেন দি মারিয়া। আর সে শিক্ষা তাঁকে ফুটবল ক্যারিয়ারে যেকোনো কঠিন মুহূর্তে লড়াই করার প্রেরণা জুগিয়েছে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘ওলে’তে কাল একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দি মারিয়া। সেখানে একটি ঘটনার কথা বলেছেন কাতার বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন। ২০১১ সালে আর্জেন্টাইন হোর্হেলিনা কারদুসোকে বিয়ে করেন দি মারিয়া। দুজনে প্রেমের সম্পর্ককে পরিণতি দেন। এর দুই বছর পর দি মারিয়ার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তাঁর মেয়ে মিয়া। কিন্তু তারপরই জীবনের অন্যতম সংকটে পড়েছিলেন জুভেন্টাসের এই উইঙ্গার।
‘ওলে’কে দি মারিয়া বলেছেন সেসব দাহকালের কথা, ‘যে বছর রিয়ালের হয়ে কোপা আমেরিকা জিতলাম, সে বছরটা দারুণ কাটছিল। আমার মেয়ে জন্ম নেওয়ার এক সপ্তাহ পর আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে (কোপা দেল রে ফাইনাল) খেললাম এবং গোল করেছিলাম ওর (মেয়ে) জন্য। তখন খুব কঠিন সময় ছিল। কারণ, আমরা সপ্তাহে মাত্র দুদিন হাসপাতালে ওকে দেখার সুযোগ পেতাম। রাতে ওকে ছাড়াই বাসায় যেতে হতো। এটা খুব কঠিন ছিল। কারণ, চলে যাওয়ার সময় জানতাম না আগামীকাল ওকে পাব কি না, কী ঘটতে পারে, সেটাও জানতাম না। কখনো এমনও হয়েছে যে গিয়ে অনেক শিশুকে আর দেখিনি। হয়তো চলে গেছে, ভাইরাসে মারা গেছে কিংবা এটাও বলা হতো, শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।’
আমার মেয়ে প্রায় মরেই যেত। ৭০-৩০ সম্ভাবনা ছিল বেঁচে থাকার। কিন্তু সে লড়াই করেছে। আমি যখন ভাবি, জাতীয় দল ছাড়লে কীভাবে থাকব কিংবা চোটে পড়লে কীভাবে খেলব, তখন মেয়ের সেই লড়াই আমাকে প্রেরণা জোগায়। আমি বুঝি কখনো হাল ছাড়তে নেই।আনহেল দি মারিয়া
দি মারিয়ার মেয়ে মিয়া সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। জীবন নিয়ে টানাটানি চললেও শেষ পর্যন্ত মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন দি মারিয়া। তাঁর ভাষায়, ‘আমার মেয়ে প্রায় মরেই যেত। ৭০-৩০ সম্ভাবনা ছিল বেঁচে থাকার। কিন্তু সে লড়াই করেছে। আমি যখন ভাবি, জাতীয় দল ছাড়লে কীভাবে থাকব কিংবা চোটে পড়লে কীভাবে খেলব, তখন মেয়ের সেই লড়াই আমাকে প্রেরণা জোগায়। আমি বুঝি কখনো হাল ছাড়তে নেই। আমরা সব সময় মনে রাখি, আমার অতটুকু মেয়েটি যদি লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে আমরা কীভাবে হাল ছাড়তে পারি কোনো বিষয়ে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। সে এখন ভালো আছে।’