বার্সার গোল উদ্‌যাপন
বার্সার গোল উদ্‌যাপন

এসপানিওল ২: ৪ বার্সেলোনা

এসপানিওলকে গুঁড়িয়ে লা লিগা শিরোপা জিতল জাভির বার্সেলোনা

‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’—চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের এই গান জাভি হার্নান্দেজের শোনার কথা নয়। তবে বার্সেলোনা কোচ মার্কিন র‍্যাপার এল এল কোল জি’র ‘মামা সেইড নক ইউ আউট’ গানটি হয়তো শুনতেও পারেন। যে গানের প্রথম লাইনটির অর্থ হচ্ছে, ‘এটাকে ফিরে আসা বলো না, আমি অনেক বছর ধরে এখানেই আছি।’

জাভির জন্য এটাই তো সবচেয়ে বড় সত্যি! বার্সা তো তাঁর বাড়িই, আর ন্যু ক্যাম্প ঘর। সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য শরীর সেই ঘর ছেড়েছিল বটে, তবে মনটা তো এখানেই পড়ে ছিল। দলের বিপর্যয়ে সাড়া দিয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে মাঝ মৌসুমে ফিরে এসেছিলেন সেই ঘরে।

সেবার ৯ নম্বরে থাকা বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াইয়ে দুইয়ে তুলে এনেছিলেন জাভি। আর এবার প্রথমবারের মতো পূর্ণ মৌসুমে ডাগআউটে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে বার্সাকে লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করে দিলেন এ স্প্যানিশ কিংবদন্তি। এটি বার্সার ২৭তম লিগ শিরোপা। আজ রাতে এসপানিওলকে তাদের মাঠেই ৪-২ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে বার্সা। ম্যাচে জোড়া গোল করেন রবার্ট লেভানডফস্কি। একটি করে গোল করেন আলেসান্দ্রো বালদে এবং জুলস কুন্দে।

৮ বছর আগে ২০১৫ সালে ট্রেবল জিতে কান্নাভেজা চোখে জাভি যখন বার্সা ছেড়েছিলেন, তখন কি ভেবেছিলেন একদিন বার্সাকে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে শিরোপা জেতাবেন! কে জানে, জাভির মতো কিংবদন্তিরা ভাবলেও ভাবতেও পারেন। তবে সমর্থকদের জন্য এ এক অনন্য ফেরা। বাংলা ভাষাভাষী বার্সা সমর্থকেরা তাই চাইলে গাইতেও পারেন, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়।’

এসপানিওলের মাঠে উদ্‌যাপনটা অবশ্য মন ভরে করতে পারেননি জাভিরা। উদ্‌যাপনের মাঝেই বেরসিক এসপানিওল সমর্থকেরা মাঠে নেমে আসায় মাঠ ছাড়তে হয় বার্সা খেলোয়াড়দের। তাতে অবশ্য জাভি-লেভারা হয়তো মন খারাপ করবেন না। উদ্‌যাপনের জন্য ক্যাম্প ন্যু তো আছেই।

জোড়া গোল করেছেন লেভা

আগের রাতে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের কারণে আজ রাতে শিরোপা নিশ্চিত করতে বার্সাকে জিততেই হতো। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে অতীত রেকর্ডও মাঠে নামার আগে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছিল বার্সাকে।

মাঠে নামার আগে দুই দলের পয়েন্ট পার্থক্য ছিল ৫১ পয়েন্টের। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত টানা ২৫ ম্যাচে কাতালান ডার্বিতে জয়হীন (৭ ড্র ও ১৮ হার) ছিল এসপানিওল। আর বার্সা নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নামে এদিন।

এসপানিওলের মাঠে ম্যাচের ৬ মিনিটেই সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন পেদ্রি। ডি-বক্সের ভেতর অরক্ষিত থেকেও গোল করতে ব্যর্থ হন এই স্প্যানিশ তরুণ। তাঁর শট দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। সে যাত্রায় গোল না হলেও এসপানিওলের গোলমুখ খুলতে বার্সাকে ১১ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি।

বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে দারুণভাবে এসপানিওল ডি-বক্সে ঢুকে বাইলাইন থেকে বল বাড়ান রবার্ট লেভানডফস্কির উদ্দেশ্যে। লেগে থাকা মার্কারকে ছিটকে দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান লেভা। মৌসুমে নিজের ২০তম গোলে বার্সাকে শিরোপা স্বপ্নে মাতিয়ে তোলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার।

বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজ

২০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সার জন্য লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে দেন বালদে। স্বাগতিকদের তাসের ঘরের মতো নড়বড়ে রক্ষণ ভাঙতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বার্সাকে। পেদ্রির দারুণ এক অ্যাসিস্টে গোল করে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন বালদে। ২৪ মিনিটে এসপানিওল গোলরক্ষক দারুণভাবে ঠেকিয়ে না দিলে নিজের দ্বিতীয় গোলটি প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন লেভা।

দলের তৃতীয় গোলটি না এলেও একের পর এক আক্রমণে এসপানিওলের রক্ষণকে রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়ে বার্সার আক্রমণভাগ। স্বাগতিক এসপানিওল হুটহাট দুই একবার বার্সা রক্ষণে হানা দিলেও তা গোল আদায়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। উল্টো ৪০ মিনিটে বার্সার আক্রমণের চাপে পিষ্ট হয়ে তৃতীয় গোলটিও হজম করে বসে এসপানিওল।

এবার রাফিনিওর নিখুঁত পাস থেকে দুর্দান্ত স্লাইডে বল জালে জড়ান লেভা। এই গোলের পর কাতালান ডার্বির পরিবর্তে ধারাভাষ্যকারেরা এই ম্যাচের নতুন নামকরণও করেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘ডেমোলিশন ডার্বি’, অর্থ্যাৎ ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া ডার্বি’। প্রথমার্ধের শেষ দিকে এক গোল শোধ করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল এসপানিওল। কিন্তু মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত ডিফেন্স করা বার্সার শেষ দেয়ালটা পেরোতে পারেনি তারা।

বিরতির পরও নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি বার্সা। বিপরীতে এসপানিওল যেন আরও ছন্নছাড়া। যার সুযোগ নিয়ে ৫৩ মিনিটে নিজেদের চতুর্থ গোলটি আদায় করে নেয় বার্সা। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের অ্যাসিস্টে গোল করনে কুন্দে। এরপর বার্সা কিছুটা আয়েশি ফুটবল খেলা শুরু করলে ব্যবধান কমানোর সুযোগ আসে এসপানিওলের সামনে। একাধিক প্রচেষ্টার পর অবশেষে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে এক গোল শোধ করেন জাভি পাউদো।

শেষ দিকে দুই দলই একরকম অলআউট ফুটবল খেলতে শুরু করে। এতে ম্যাচও জমে ওঠে দারুণভাবে। দুই দলই দারুণ সব গোলের সুযোগ পেয়েছিল। শেষ মুহূর্তে এসপানিওল আরও এক গোল শোধ করে। তবে তাতেও বার্সার কোনো ক্ষতি হয়নি। ৪-২ গোলের জয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়ে জাভির দল।