এনদ্রিকের গোল উদ্‌যাপন
এনদ্রিকের গোল উদ্‌যাপন

‘এনদ্রিকের মাঝে রোমারিওর ছায়া’—বললেন জো কোল

ওয়েম্বলিতে গতকাল রাতে ইংল্যান্ড-ব্রাজিল ম্যাচের ৭১ মিনিটে রদ্রিগোর বদলে মাঠে নামেন এনদ্রিক। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি পাকা করার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এই স্ট্রাইকার। ফলে বড় মঞ্চে এনদ্রিক কেমন করেন, সেদিকেও চোখ ছিল অনেকের।

ব্রাজিলের সমর্থকদের অবশ্য নিরাশ করেননি এখনো কৈশোর না পেরোনো এনদ্রিক। মাঠে নামার ৯ মিনিট পর জয়সূচক গোলটি এনে দেন ব্রাজিলকে। এনদ্রিকের করা গোলেই টানা তিন হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে জয়ের দেখা পেল ব্রাজিল।

ব্রাজিলকে ম্যাচ জেতানো গোল করে একাধিক মাইলফলকও গড়েছেন এনদ্রিক। এখন তিনি ওয়েম্বলিতে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়। গোলটি করার সময় এনদ্রিকের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৬ দিন। ১৯৯৪ সালে রোনালদো নাজারিওর পর ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতাও এখন এনদ্রিক। ‘দ্য ফেনোমেনন’খ্যাত রোনালদো নিজের প্রথম গোলটি করেছিলেন ১৭ বছর ২২৮ দিনে। তবে সম্মিলিত হিসাবে ব্রাজিলের হয়ে কম বয়সী গোলদাতাদের মধ্যে এনদ্রিকের অবস্থান চারে। ১৬ বছর ২৫৭ দিনে গোল করে সবার ওপরে আছেন ফুটবলসম্রাট পেলে। এরপর ১৬ বছর ৩০৬ দিন নিয়ে দুইয়ে আছেন এদু গাসপার।

এই ম্যাচে অবশ্য নিজের দ্বিতীয় গোলটিও পেয়ে যেতে পারতেন এনদ্রিক। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে প্রতি-আক্রমণ থেকে ইংল্যান্ড গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি এই ব্রাজিলিয়ান। দ্বিতীয় গোল পাওয়া না হলেও এনদ্রিকের কৃতিত্ব একটুও কমছে না। তিনি নিজেও দলকে জেতাতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত।

ম্যাচ শেষে এনদ্রিক বলেছেন, ‘আমার পরিবার, বান্ধবী, এজেন্ট—সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। আমি কান্নাকাটি করার মতো ছেলে নই। নিজেকে সামলে রেখেছি। কিন্তু এটা অভিনব কিছু, আমি খুবই আনন্দিত।’

ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে এনদ্রিকের উদ্‌যাপন

এনদ্রিককে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ব্রাজিল কোচ দরিভাল। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই ব্রাজিলকে জয় এনে দেওয়া এই কোচ বলেছেন, ‘যে মনোভাব সে দেখিয়েছে, সেটা যদি ধরে রাখে, তবে ব্রাজিলের ফুটবলে এবং বিশ্ব ফুটবলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নাম হবে সে।’

এদিকে এনদ্রিকের মাঝে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিওকে দেখার কথা জানিয়েছেন সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার জো কোল, ‘আমার ধারণা, তার মধ্যে রোমারিওর কিছুটা ছায়া আছে। শরীরের গঠন এবং যেভাবে বল সামনে বাড়িয়ে দেয়, তা দেখলেই বোঝা যায়। এ ছাড়া তার মুখে যে উচ্ছ্বাস, সেটাও একই কথা বলে। ওয়েম্বলিতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করেছে, অসাধারণ ব্যাপার!’

সাবেক ব্রাজিল ও আর্সেনাল মিডফিল্ডার গিলবার্তো সিলভাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এনদ্রিককে নিয়ে, ‘এটা দারুণ শুরু। তার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারত না। আমরা তাকে দেখার প্রত্যাশায় ছিলাম। আর সে এগিয়ে এসে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে।’

১১ বছর বয়সে পালমেরাইসের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ফুটবলের যাত্রা শুরু করেন এনদ্রিক। এরপর স্থানীয় একটি টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়ে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক স্কাউটদের নজরে আসেন। একই বছরের অক্টোবরে পালমেরাইসের মূল দলের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। একই মাসে তাঁর মা–বাবা চেলসির অনুশীলন মাঠে ভ্রমণে যান। তবে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি চুক্তিতে রাজি হয়নি। এতে অবশ্য এনদ্রিকে কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং লাভই হয়েছে।

এরপরই এনদ্রিককে দলে টানার উদ্যোগ নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। এখন তাঁর রিয়ালে যাওয়া চূড়ান্ত। এ বছরের জুলাইয়ে ১৮ বছর পূর্ণ করলে পাকাপাকিভাবে মাদ্রিদের ক্লাবটিতে চলে যাবেন এনদ্রিক। তাঁকে নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল–বিশ্লেষক টিম ভিকেরি বলেন, ‘যে মাঠে পেলে কখনো খেলতে পারেনি, সেখানে সে প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেছে এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করেছে।’