ডি-বক্স থেকে

আর্জেন্টিনার চেয়ে ক্রোয়েশিয়াই এগিয়ে

লাতিন পরাশক্তি আর্জেন্টিনা বনাম ইউরোপের অন্যতম চমক জাগানো দল ক্রোয়েশিয়া—আজ রাতে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালটা দারুণ জমবে বলেই মনে হচ্ছে। উঁচু মানের ফুটবল হতে পারে। সবাই হয়তো ধরে নিচ্ছেন আর্জেন্টিনা জিতবে এবং ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা ফাইনাল। কিন্তু আমি ক্রোয়েশিয়া-ফ্রান্স ফাইনাল হলেও অবাক হব না। সেটাই বরং আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হবে।

বাংলাদেশের ফুটবলপাগল মানুষ আর্জেন্টিনার বিদায় দেখতে চাইবেন না জানি। নীল-সাদা জার্সিধারী দলটা এ দেশে অনেক জনপ্রিয়। একটা আবেগের নামও। সেই আবেগের অনেকটা লিওনেল মেসিকে ঘিরেই। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়ার আগের ম্যাচগুলো কাটাছেঁড়া করলে দেখা যায়, ক্রোয়েশিয়া পিছিয়ে নেই। আমি বরং দুই দলের তুল্যমূল্য বিচারে মদরিচের ক্রোয়েশিয়াকে পাঁচ ভাগ এগিয়েই রাখব মেসির আর্জেন্টিনার চেয়ে। অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়া ৫৫, আর্জেন্টিনা ৪৫।

অনেকে ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে গত বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে খেলেছে। এবারও সেমিফাইনালে এসেছে হিসাব-নিকাশ পাল্টে। এই পর্যায়ে খেলার মতো বিশ্বমানের বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছে ক্রোয়েশিয়ার হাতে এবং ওরা একটা দল হিসেবে খেলে। আর্জেন্টিনা আজ অন্য মেজাজে খেললে ফাইনালে চলেও যেতে পারে। অন্য মেজাজ বলতে লিওনেল স্কালোনির ছেলেদের ব্যক্তিগত ঝলক বোঝাতে চাইছি। আর্জেন্টিনার শক্তিও সেটাই। তবে জিতলেও কাজটা সহজ হবে না দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে, যদি না মেসি জ্বলে ওঠে।

ধরুন, মেসি সেরাটা দিতে পারল না বা তাকে কড়া পাহারায় রাখল ক্রোয়েশিয়া। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় না আর্জেন্টিনা নিরঙ্কুশ ফেবারিট। আসলে মেসিই বড় বাধা ক্রোয়েশিয়ার। গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যা দেখেছি, আজ মেসিকে সামলাতে পারলে আমার মনে হয়, ক্রোয়েশিয়া বেরিয়ে যাবে। ক্রোয়েশিয়া পরিপূর্ণ এক টেকনিক্যাল টিম। পাঁচ বছর ধরে কোচ জ্লাতকো দালিচ দলটাকে এমনভাবে পরিচালনা করছেন, ওরা জানে প্রতিপক্ষকে আটকানোর ফর্মুলা।

তরতাজা উদাহরণ হাতের কাছেই। শেষ আটের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া প্রথমার্ধে বল পজেশনে চড়ে বসতে দেয়নি ব্রাজিলকে। বরং বল দখলের লড়াইয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তারা জিতেছে। রক্ষণ থার্ডে বড় কোনো জায়গা দেয়নি নেইমারদের। তারপরও চূড়ান্ত পাস বের করে ব্রাজিল ৭-৮টা শট নিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার পোস্টে, কিন্তু গোলকিপার দাঁড়ায় প্রাচীর হয়ে। আজও ক্রোয়েশিয়ার বড় ভরসা তাদের গোলকিপার দমিনিক লিভাকোভিচ।

ব্রাজিলের পোস্টে ৯০ মিনিটে শট না নিলেও শেষ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া জিতেছে কৌশলী ফুটবল খেলে। হাল না ছেড়ে গোল শোধ করেছে। দলের অধিনায়ক ও প্লেমেকার লুকা মদরিচ সেদিন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে মাঠে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে মদরিচ স্প্যানিশ লিগ ও ইউরোপিয়ান লিগেও চ্যাম্পিয়ন। সে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনার জন্য আজ সে-ই বড় ভয়। মেসির কাছ থেকেও অনেক সময় বল কেড়ে নেয় প্রতিপক্ষ, কিন্তু মদরিচের পা থেকে বল কাড়া কঠিন। ওর ৯০ ভাগ পাসই নিখুঁত। বয়সে বড় হলেও এখনো সে মেসির চেয়ে ফিট। মদরিচ আজ সেরাটা দিতে পারলে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠতেই পারে।

এ সবই আসলে মাঠের বাইরে থেকে আমাদের পূর্বানুমান। কী হতে পারে তার একটা বিশ্লেষণ। ম্যাচে যারা স্নায়ু ধরে রেখে খেলতে পারবে, জয় তাদেরই। প্রশ্ন হচ্ছে, দুদল চাপ জয় করে সেরা ফুটবলটা খেলতে পারবে তো? না পারার কারণ নেই। আর্জেন্টিনা এমন বড় ম্যাচ খেলে অভ্যস্ত। ক্রোয়েশিয়াও বড় ম্যাচে ভালো করছে। নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো সেমিফাইনাল খেলছে ওরা। যার মধ্যে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথম এসেই তৃতীয়। এই ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে আর্জেন্টিনার ভয় থাকছেই।