ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে শীতকালীন দলবদলের সময়সীমা শেষ হলেও এ নিয়ে আলোচনা এখনো থামেনি। থামবে কী করে! বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও খেলোয়াড় কেনার পেছনে অঢেল অর্থ ঢেলে যে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চেলসি।
সদ্য সমাপ্ত ট্রান্সফার উইন্ডোতে আট ফুটবলার কিনতে রেকর্ড ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকা) খরচ করেছে চেলসি, যা নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে তো বটেই; ব্রিটিশ ফুটবলে সর্বোচ্চ।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজকে বেনফিকা থেকে রেকর্ড ১০৭ মিলিয়ন পাউন্ডে (১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা) নিয়ে এসেছে পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি। তাদের খরচের এই খেল দেখে বিস্মিত ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা ও লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে গত বছর চেলসি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন রোমান আব্রামোভিচ। স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি কিনে নেন মার্কিন ধনকুবের টড বোহলি। তখন থেকেই প্রশ্ন ওঠে, ভবিষ্যতে নতুন খেলোয়াড় কিনতে চেলসি আর্থিক সংগতি নীতি (ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে বা এফএফপি) কীভাবে মেনে চলবে। অতীতে খেলোয়াড় কিনতে বিপুল অর্থ ব্যয় করায় ম্যানচেস্টার সিটিকেও ব্যাপক সমালোচনা ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গ তুলে গার্দিওলা বলেছেন, ‘জানি কী হবে। যদিও এটা (চেলসির বিপুল অর্থ ব্যয়) আমার ভাবনার বিষয় নয়। আমি কখনো অন্য ক্লাব নিয়ে মতামত জানাই না। তবে আমি অবাক হয়েছি। কারণ, এটা (চেলসি) কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ক্লাব নয়। গত পাঁচ বছরে আমরা ১১টি ট্রফি জিতেছি। প্রিমিয়ার লিগে সামগ্রিকভাবে খরচের তালিকায় পাঁচে বা ছয়ে আছি। এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। শুধু প্রিমিয়ার লিগে নয়, ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও প্রচুর খরচ করা হয়। এখনকার দলবদলের বাজারটাই এ রকম।’
২০১৭-১৮ মৌসুমে খেলোয়াড় কিনতে বিপুল অর্থ ব্যয় করায় সিটিকে কী রকম রোষানলে পড়তে হয়েছিল, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা, ‘আমরা অভিযুক্ত হয়েছিলাম। আট কি নয়টা দল প্রিমিয়ার লিগ থেকে আমাদের নিষিদ্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিল। সেটা এখনো ভুলিনি।’
খেলোয়াড় কেনার পেছনে চেলসির নতুন মালিক বোহলির অবিশ্বাস্য খরচ দেখে হতবাক ক্লপও। লিভারপুল কোচ মজা করে বলেছেন, ‘জানি না এটা ব্যবসার অংশ কি না। আইনজীবীর সহায়তা না নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। এটা কী করে সম্ভব, তা-ও জানি না। আশা করি আপনারা জানেন। যা-ই হোক, গত দুই উইন্ডোতে খরচের অঙ্কটা সত্যিকার অর্থেই বিশাল।’
তবে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে চেলসির বাছাইপ্রক্রিয়া মনে ধরেছে ক্লপের, ‘একবারের জন্যও মনে হয়নি, ওরা কেন এটা করল। ওরা যাদের কিনেছে, সবাই ভালো খেলোয়াড়। এদিক বিবেচনায় ওদের অভিনন্দন জানাতেই হয়।’
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে একঝাঁক খেলোয়াড় নিয়ে এসেও অবশ্য সুদিন ফেরেনি চেলসির। গত রাতে ঘরের মাঠে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ফুলহামের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে গ্রাহাম পটারের দল। এনজো ফার্নান্দেজ, মিখাইলো মুদরিক, বেনোয়া বাদিয়াশিলরা শুরু থেকে খেললেও প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলতে পারেননি।
গোলশূন্য ড্রয়ের পর বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম চেলসিকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক শিরোনাম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘এত টাকা দিয়েও একটা গোল কিনতে পারল না চেলসি।’