ঘরের মাঠে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব–২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলাদেশ
ঘরের মাঠে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব–২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলাদেশ

অনূর্ধ্ব–২০ নারী সাফ

রুপনা, শামসুন্নাহারদের চোখে শিরোপার স্বপ্ন

পোস্টের নিচে যতখানি সপ্রতিভ গোলরক্ষক রুপনা চাকমা, মাইক্রোফোনের সামনে ঠিক ততটাই আড়ষ্ট!

শান্তশিষ্ট স্বভাবের শামসুন্নাহারও খেলার মাঠে ঠিক উল্টো। বল পায়ে পড়লেই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু আজ বিকেলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে দুজনকেই দেখা গেল ভীষণ চুপচাপ। অভিজ্ঞতাটা জাতীয় দলের দুই ফুটবলারের জন্য একেবারেই নতুন।

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার, সহ-অধিনায়ক রুপনা। টুর্নামেন্ট নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতিটাও জানালেন একেবারে অল্প কথায়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন কোচ–খেলোয়াড়রা

গত সেপ্টেম্বরে নেপালে মেয়েদের সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর নভেম্বরে ঢাকায় বয়সভিত্তিক আরেকটি সাফে অংশ নেন বাংলাদেশের মেয়েরা। একেবারে নতুনদের নিয়ে গড়া অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের সেই টুর্নামেন্টে অবশ্য রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আরেকটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলতে প্রস্তুত শামসুন্নাহার, রুপনারা। এবার অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে অংশ নেবে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। খেলা হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। পয়েন্ট তালিকার সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দুটি দল খেলবে ফাইনাল।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ৩ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ নেপাল। ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি ভুটানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ফাইনাল ৯ ফেব্রুয়ারি।

বাফুফে ভবনের চারতলায় সারা বছর আবাসিক ক্যাম্পে অনুশীলনের মধ্যে থাকেন এই মেয়েরা। তবে মাঝে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর মেয়েরা অংশ নেন নারী ফুটবল লিগে। মেয়েদের এই লিগ শেষ হওয়ার পর ১ জানুয়ারি থেকে সাফ টুর্নামেন্ট সামনে রেখে শুরু হয়েছে বিশেষ অনুশীলন।

২৩ সদস্যের দলে একেবারে নতুন মুখ দুজন—ফরোয়ার্ড আইরিন খাতুন ও আফরোজা খাতুন। গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া নারী ফুটবল লিগে নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ৮ গোল করেছেন আইরিন। আর জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশের আফরোজা করেছেন ৪ গোল।

লিগের পারফরম্যান্সের সুবাদে প্রথমবার জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে ডাক পেয়েছেন এই দুই ফুটবলার। এ ছাড়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পাওয়া সুরভী আকন্দকেও দলে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নারী লিগে সর্বোচ্চ ২৫ গোল করা আকলিমা খাতুনও ডাক পেয়েছেন এই দলে।

২০২২ নারী সাফের ফাইনালে গোল করা শামসুন্নাহার জুনিয়র এবার অনূর্ধ্ব–২০ দলের অধিনায়ক

নেপালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফের দলের ছয়জন সুযোগ পেয়েছেন এবারের অনূর্ধ্ব–২০ দলে। এর মধ্যে গোলরক্ষক রুপনা ও ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার নিয়মিত একাদশে খেলেছেন। বাকিদের মধ্যে গোলরক্ষক ইতি রানী, সাথী বিশ্বাস, মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী ও সোহাগী কিসকু নেপালে গিয়ে বেঞ্চ গরম করেছেন। দলের বাকি সদস্যদের সাফ ও এএফসির বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২০২১ সালে প্রথমবার হয়েছিল মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্ট। কিন্তু এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টের সঙ্গে সাফের টুর্নামেন্টের সামঞ্জস্য রাখতে বয়স এক বছর বাড়িয়ে এবার প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সাফ। এই মেয়েরাই পরে খেলবেন এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাইপর্ব।

চ্যাম্পিয়ন হতে বাংলাদেশের সামনে বড় বাধা হতে পারে ভারত। ২০২১ সালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেও ফরোয়ার্ডরা ভুগেছিলেন গোল সমস্যায়। গ্রুপ পর্বে নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেন মারিয়া মান্দারা। এরপর ভারতের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেন শামসুন্নাহার সিনিয়র। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে কোনো ফরোয়ার্ডই গোল করতে পারেননি। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ডিফেন্ডার আনাই মগিনির গোলে।

সেই দলের একাদশে খেলা একমাত্র ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার খেলবেন এবারও। তবে শুধু শামসুন্নাহার না, এবার নতুনদের ওপর আস্থা রাখছেন কোচ গোলাম রব্বানী, ‘এখানে বেশির ভাগ ফুটবলারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। জামশেদপুর ও ভুটানে এই মেয়েরা বয়সভিত্তিক সাফে আধিপত্য বজায় রেখে খেলেছে। আশা করি, এখানেও তারা ভালো ফুটবল খেলবে। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’

টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে এসে সেটাই জানালেন গোলাম রব্বানী, ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য। এখানে নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ প্রায় একই রকম দল। আমরা ফেবারিট হিসেবেই ফাইনালে খেলব। ম্যাচ ধরে ধরে খেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই আমরা।’
 
বাংলাদেশ দল:
রুপনা চাকমা, ইতি রানী, সাথী বিশ্বাস, সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার, নাসরিন আক্তার, কোহাতি কিসকু, ইতি খাতুন, উন্নতি খাতুন, স্বপ্না রানী, সোহাগী কিসকু, মাহফুজা খাতুন, নোসুন জাহান, মোসাম্মত রিপা, রেহেনা আক্তার, শামসুন্নাহার, হালিমা আক্তার, শাহেদা আক্তার, আকলিমা খাতুন, আনিকা তানজুম, আইরিন খাতুন, আফরোজা খাতুন ও সুরভী আকন্দ।