যেকোনো টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহ থাকে, প্রাইজ মানি বা অর্থ পুরস্কার তার অন্যতম। ২০২৫ সাল থেকে নতুন রূপে শুরু হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপকে ঘিরেও একই কৌতূহল আছে অনেকের। ফিফার আয়োজনে শুরু হতে যাওয়া এই প্রতিযোগিতায় ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর পাশাপাশি দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামকরা ক্লাবগুলোকেও।
তবে স্বাভাবিকভাবেই বেশি আগ্রহ থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি বা বায়ার্ন মিউনিখের মতো নাম করা ক্লাবগুলোর দিকে। এ ছাড়া লিওনেল মেসির কারণে ইন্টার মায়ামি কিংবা নেইমারের কারণে আল হিলালও থাকবে আকর্ষণের কেন্দ্রে। তবে আর্থিক দিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোই।
২০২৩ সালেও ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তবে এর মধ্যে সেটি বেড়ে ২৬৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে খবর স্প্যানিশ দৈনিক এএসসহ ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সূত্রের বরাতে এএস জানিয়েছে, ক্লাবে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দলের প্রত্যেকে ৫ কোটি ডলার করে পাবে। এ ছাড়া ফলাফলের ভিত্তিতে বাড়তি বোনাস পাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। যেমন চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ১০ কোটি ডলার।
অথচ এর আগে এই প্রতিযোগিতার বিজীয় দল পেত মাত্র ৫০ লাখ ডলার, আর রানার্সআপকে দেওয়া হতো ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু অর্থের সেই হিসাব–নিকাশ এখন একেবারেই বদলে গেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলের টাকা বেড়ে শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি ডলার হতে পারে।
এর আগে এ বছরের জুলাইয়ে সম্প্রচারস্বত্বের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ফিফা। শুরুতে অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তির কথা শোনা গেলেও পরে নাকি দুই পক্ষের মধ্যে আর বনিবনা হয়নি। আর অ্যাপলের এই চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় তাদের প্রস্তাবিত ১০০ কোটি ডলারও পাওয়া হচ্ছে না ফিফার।
জানা গেছে, এই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে ৪০০ কোটি ডলারের কাছকাছি অর্থ জোগাড় করতে চান ফিফা প্রেসিডেন্ট গিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ধারণা করা হচ্ছে এই মুহূর্তে অর্থের জোগান আসতে পারে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে। যদিও এসব খবর এখনো গুঞ্জনের পর্যায়েই আছে।
এরই মধ্যে অন্য প্রতিযোগিতাগুলোর সঙ্গেও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের অর্থমূল্যের তুলনা শুরু হয়ে গেছে। গত মৌসুমে যেমন চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রাইজমানি ছিল ২১৯ কোটি কোটি ডলার, যা এবারের আসরে বাড়িয়ে ২৭১ কোটি ডলার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে নিজেদের অর্থ পুরস্কার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উয়েফা। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতাগুলোর তুলনায়ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের অর্থ পুরস্কার বেশ আকর্ষণীয়।
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে অবশ্য সমালোচনার কমতি নেই। বিশেষ করে সূচির ওপর বাড়তি চাপের কারণে এটি খেলোয়াড়দের ক্ষতি করবে বলে মনে করেন সমালোচকরা। তবে এর আকর্ষণীয় অর্থ পুরস্কারই ক্লাবমালিকদের আগ্রহকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অর্থ ক্লাবগুলো নিজেদের অবকাঠামো নির্মাণ এবং সেরা খেলোয়াড়দের দলে টানা খরচ করতে পারবে। যদিও ফিফার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিকভাবে ছোট আকারের ক্লাবগুলোকে অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া।
এরপরও অবশ্য এর মধ্য দিয়ে বড় ক্লাবগুলোই বেশি লাভবান হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাইজ মানির ৭০ ভাগ পাবে ইউরোপ থেকে অংশ নিতে যাওয় শীর্ষ ১২টি ক্লাব। সেগুলো হলো রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ, পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস, বেনফিকা, পোর্তো এবং রেড বুল সালজবার্গ। ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি দর্শক আকর্ষণ করে এই ক্লাবগুলো, টিভিস্বত্ব থেকে আয় কেমন হবে, তার বেশির ভাগও নির্ভর করছে তাদের ওপর।